ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ত্রাণ কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হবে হাওরাঞ্চলের মানুষের দুর্দশা

হাওরাঞ্চলের একমাত্র ফসল বোরো ধান। এই ধান নষ্ট হলে থাকে মাছ। ধান হারিয়ে কৃষকেরা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম জারি রাখেন মাছ ধরে। কিন্তু এবার ধানই শুধু নষ্ট হয়নি, প্রচুর মাছও মরেছে। প্রজনন ঋতুতে ডিমভরা মাছ মরে গেলে হাওরে মাছের আকাল অনিবার্য হয়ে ওঠে। বাস্তবে সেটাই দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রথমআলোর বিশাল বাংলা পাতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের মৎস্যজীবীদের যে দুর্দশার বিবরণ ছাপা হয়েছে, তা হাওর–অধ্যুষিত সব জেলার জন্যই প্রযোজ্য। মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সেই টাকায় যাঁরা বেঁচে-বর্তে থাকার চেষ্টা করছেন, তাঁরা সারা দিনেও এক-দুই কেজির বেশি মাছ পাচ্ছেন না।

সরকার দুর্গত পরিবারগুলোর জন্য মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা ত্রাণ-সাহায্য বরাদ্দ করেছে। কিন্তু চাল ও টাকা বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লোকজন অন্যায্যভাবে এসব পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে যে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে না এবং যারা পাচ্ছে তাদের সবাই যতটা প্রাপ্য ততটা পাচ্ছে না। যেমন প্রথমআলোর উল্লিখিত প্রতিবেদনে মৌলভীবাজারের এক দুর্গত ব্যক্তি বলেছেন, তিনি মাসখানেক আগে ১০ কেজি চাল পেয়েছিলেন।

আরও গুরুতর কথা হলো, ক্ষতিগ্রস্ত সব মানুষকে ত্রাণ কর্মসূচির আওতায় নেওয়া হয়নি। যেমন সুনামগঞ্জ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সোয়া তিন লাখ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার পরিবার। অর্থাৎ, অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষই ত্রাণ সহযোগিতার বাইরে রয়ে গেছে। কিন্তু এই মানুষগুলো কীভাবে বেঁচে আছে, তার খবর কি সরকার রেখেছে? তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে অনাহার শুরু হয়েছে।

হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ত্রাণ কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষ প্রয়োজন ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ত্রাণ কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হবে হাওরাঞ্চলের মানুষের দুর্দশা

আপডেট টাইম : ০৫:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ জুন ২০১৭

হাওরাঞ্চলের একমাত্র ফসল বোরো ধান। এই ধান নষ্ট হলে থাকে মাছ। ধান হারিয়ে কৃষকেরা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম জারি রাখেন মাছ ধরে। কিন্তু এবার ধানই শুধু নষ্ট হয়নি, প্রচুর মাছও মরেছে। প্রজনন ঋতুতে ডিমভরা মাছ মরে গেলে হাওরে মাছের আকাল অনিবার্য হয়ে ওঠে। বাস্তবে সেটাই দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রথমআলোর বিশাল বাংলা পাতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের মৎস্যজীবীদের যে দুর্দশার বিবরণ ছাপা হয়েছে, তা হাওর–অধ্যুষিত সব জেলার জন্যই প্রযোজ্য। মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সেই টাকায় যাঁরা বেঁচে-বর্তে থাকার চেষ্টা করছেন, তাঁরা সারা দিনেও এক-দুই কেজির বেশি মাছ পাচ্ছেন না।

সরকার দুর্গত পরিবারগুলোর জন্য মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা ত্রাণ-সাহায্য বরাদ্দ করেছে। কিন্তু চাল ও টাকা বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লোকজন অন্যায্যভাবে এসব পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে যে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে না এবং যারা পাচ্ছে তাদের সবাই যতটা প্রাপ্য ততটা পাচ্ছে না। যেমন প্রথমআলোর উল্লিখিত প্রতিবেদনে মৌলভীবাজারের এক দুর্গত ব্যক্তি বলেছেন, তিনি মাসখানেক আগে ১০ কেজি চাল পেয়েছিলেন।

আরও গুরুতর কথা হলো, ক্ষতিগ্রস্ত সব মানুষকে ত্রাণ কর্মসূচির আওতায় নেওয়া হয়নি। যেমন সুনামগঞ্জ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সোয়া তিন লাখ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার পরিবার। অর্থাৎ, অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষই ত্রাণ সহযোগিতার বাইরে রয়ে গেছে। কিন্তু এই মানুষগুলো কীভাবে বেঁচে আছে, তার খবর কি সরকার রেখেছে? তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে অনাহার শুরু হয়েছে।

হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ত্রাণ কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষ প্রয়োজন ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন।