দেশের ৪২ শতাংশ এলাকায় বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাসসহ নানা পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রতি বছর এক শতাংশ হারে চাষযোগ্য জমি হারানোয় ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির খাদ্যের যোগান বাংলাদেশের জন্য দিন দিন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারে এমন ১০টি ফসলের জাত উদ্ভাবন ও মাঠ পর্যায়ে তা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) কার্যক্রম শক্তিশালী করতে ২০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, অঞ্চলভিত্তিক ১০টি ঘাতসহিঞ্চু ও উচ্চ ফলনশীল ধান উদ্ভাবন করবে ব্রি। দেশের সাত বিভাগের ১২টি উপজেলায় এই গবেষণা কার্যক্রম চালানো হবে। এ ছাড়া এই অর্থ দিয়ে ৯টি বিদ্যমান ও ২টি আঞ্চলিক অফিসসহ ব্রি এর প্রধান কার্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও গবেষণা কার্যক্রম আধুনিকায়ন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ব্রি মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে মাইলফলক স্থাপন করেছে। গত তিন দশকে ফলন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ ফসলি জমিতে ধান চাষ হয়। এজন্য আমাদের দৈনন্দিন ও অর্থনৈতিক জীবনে এ ফসলের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। মোট শ্রমশক্তির ৪৭ ভাগ কৃষিশ্রমের সঙ্গে জড়িত। এ অবস্থায় এই ফসলের উৎপাদনকে টেকসই অবস্থায় নিয়ে যেতে ঘাতসহিঞ্চু জাত উদ্ভাবন জরুরি।
ব্রি সূত্রে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে এই গবেষণার ফলাফল পৌঁছে দিতে ১ হাজার ১২৫ জন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী ও ৪ হাজার ৩২০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। একই সঙ্গে, ৫১০টি প্রায়োগিক প্রদর্শনী প্রদানের মাধ্যমে ব্রি উৎপাদিত প্রযুক্তিসমূহ দ্রুত মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এ এন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, অধিক ফলনশীল, খরা, জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা সহনশীল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতেই এই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এর মাধ্যমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি ঘাটতি লাঘব হবে।