নিরপেক্ষ বিচার হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাজা হবেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ আজ কোর্টের নির্দেশ অবমাননা করে একের পর এক কাজ করে যাচ্ছে। আমি স্পষ্ট করে বলব, আজকে যদি সত্যিকার জাজ এবং বিচারে হাসিনাকে নিয়ে আসা হয়, তাহলে হাসিনার সাজা হবেই হবে।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত আলোচনা ও ইফতার পার্টিতে তিনি এসব কথা বলেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা ও ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ খুন, গুম ও হত্যায় জড়িত দাবি করে বেগম জিয়া বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের বিচার হচ্ছে না, কারণ বিচার হলে স্বয়ং শেখ হাসিনার নাম উঠে আসবে। তাই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হচ্ছে না।’
চট্টগ্রামে আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যাসহ সব ধরনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং দলটির মিত্ররা জড়িত বলে দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাদের ধরে বিচারের আওতায় আনলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলেও মনে করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়া বলেন, আজ দেশ গণতন্ত্রহীন। দেশে কোনো নির্বাচিত সরকার নেই। যারা আছে, তারা স্বঘোষিত ও অনির্বাচিত অবৈধ সরকার। তাই এই অবৈধ সরকার যত আইন পাস করুক না কেন তা জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি বলেন, আজকে জাতীয় সংসদে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই। নেই কোনো বিরোধী দল। যারা বিরোধী দলে আছে, তারা সরকারেও আছে, আবার বিরোধী দল বলেও নিজেদের দাবি করে। তাই দেশের এই কঠিন সময়েও তারা প্রতিবাদ করতে পারে না, প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। কিন্তু বিএনপি শত বাধা অতিক্রম করেও আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার আদায়ে লড়াই করে যাচ্ছে।
বেগম জিয়া বলেন, ‘এখন বিচার বিভাগ ও বিচারকদের কোনো স্বাধীনতা নেই। আইনের শাসন থাকলে ন্যায়বিচার পেতাম। তাহলে সরকারি দল ও বিরোধী দলসহ সাধারণ মানুষের জন্য আইন ভিন্নতর হত না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও ১৫টি মামলা ছিল অথচ তার মামলাগুলো মিটে গেল আর আমার মামলাগুলো থেকে গেল। তার কাছে কি জাদুর কাঠি আছে যে, ছুয়ে দিলো এমনি মামলা চলে গেল?
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নাইকো মামলায় আমাকে টানাটানি করা হচ্ছে অথচ এই মামলার সঙ্গে আমি জড়িত নই, হাসিনাই জড়িত। তাই নাইকো মামলা চলতে হলে হাসিনাকেও নিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি মনে করে থাকে, মামলা ও সাজা দিয়ে নির্বাচন করবে, তাহলে সেটা এতো সহজ নয়। সেই নির্বাচন দেশে-বিদেশে কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। সেটা হবে একদলীয় নির্বাচন, যা হয়েছে বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি।’
এরশাদ ও হাসিনার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কঠোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, আইন যদি সবার জন্য সমান হয়ে থাকে তাহলে ৩০০ মিলিয়ন অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগে তাকে কেন আইনের আনওতায় নিয়ে আসা হবে না। এখনও কেন তিনি মুক্ত আছেন?
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জনবিছিন্ন, তাই জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছেন। যার বড় প্রমাণ, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ইউপি নির্বাচন।
সিনিয়র বিচারপতি অ্যাডভোকেট টি এইচ খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, অ্যাডভোকেট মীর মোহাম্মাদ নাসীর, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, এনডিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম প্রমুখ।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক আফজাল এইচ খান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোটের সভাপতি অধ্যাক্ষ সেলিম ভূইয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল