ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

ব্রিটিশ এমপি রুশনারা দ্রুত বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ

ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সের (সংসদ) লেবার দলীয় সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী বলেছেন, বাংলাদেশ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। যতবার আমি ওদেশে গেছি ততবারই বদলে যাওয়া দেখেছি।

রুশনারা আলী এমপি এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বিকাশ, দারিদ্র্যমোচন ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিরাট উন্নতি করলেও বাংলাদেশ বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই চলেছে।

তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাজনীতিবিদরা আজকাল সামাজিক দায়িত্ব পালনের কাজে আত্মনিয়োগ করছেন। বাংলাদেশে ওরকম কোনো দায়িত্ব পালনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি আপনার আছে?

উত্তরে রুশনারা আলী বলেন, কত দ্রুতই না এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর

বিজনেস মডেলটা এমনভাবে গড়ে তোলা যেখানে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিই শুধু অগ্রাধিকার পাবে না, সামাজিক দায়িত্ব পালনটাও গুরুত্ব পাবে। আমি চাই, বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার কাজটি যুক্তরাজ্য দুই ভাবে করুক। তা হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত হুমকি নিরসনে সাহায্যদান।

বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যদূত হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। দায়িত্বটি পাওয়ার পর আপনার অনুভূতি কেমন?

রুশনারা আলী : এ পদে নিযুক্তি পেয়ে আমি বেশ আনন্দিত। বাংলাদেশ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। আমার নির্বাচনী এলাকার এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসীর রয়েছে বাংলাদেশি ঐতিহ্য। ব্রিটিশ সংসদে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে আমিই প্রথম সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। যুক্তরাজ্যে পাঁচ লাখ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বাস করছেন। তাদের অনেকের মতো আমারও বাংলাদেশের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন আছে। এ ঐতিহ্যের জন্য আমি সত্যিই গর্বিত।

দুই দেশের মধ্যে কোন বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন।

রুশনারা আলী : উন্নতি সাধন ও দারিদ্র্যমোচনে বাংলাদেশকে সহায়তার বেলায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিই। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের রয়েছে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। সে দেশের উন্নয়নে সহায়তাদানের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য এখন বৃহত্তম আন্তর্জাতিক দাতা। আমি গর্বিত যে, বিগত লেবার পার্টির সরকার উন্নয়নশীল দেশে সাহায্যদান তিন গুণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ খুলেছে। এ বিভাগ দারিদ্র্যমোচন কাজে বাংলাদেশকে সহায়তার বেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিশ্বের আবহাওয়া বিপর্যয়প্রবণ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। কাজেই আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত অভিঘাত রুদ্ধ করে জানমাল রক্ষায় বাংলাদেশকে সাহায্য করার উপায়গুলো চিহ্নিত করা যুক্তরাজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশের একটি বাংলাদেশ। তাই, শ্রমিকের মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো বিষয়ে তথ্য বিনিময় এবং নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়নে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

গেল নির্বাচনে জিতে কয়েকজন বাংলাদেশি সংসদ সদস্য হয়েছেন। আপনি কি মনে করেন, এর প্রভাবে ভবিষ্যতে আরও বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি নির্বাচনপ্রার্থী হবেন?

রুশনারা আলী : ২০১৫ সালের মে মাসের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কয়েকজন মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, এতে আমি আনন্দিত। আমি চাই, শুধু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরাই নন, অন্যান্য সংখ্যালঘু গ্রুপ থেকেও মহিলারা পার্লামেন্টের সদস্য হয়ে আসুন। পার্লামেন্টে মোট সদস্যের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ নারী। এর মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ এসেছেন সংখ্যালঘু অশ্বেতাঙ্গ পটভূমি থেকে।

শিশুকালে তো বাংলাদেশে ছিলেন। সে সম্পর্কে কিছু বলুন।

রুশনারা আলী : আমার জন্ম বাংলাদেশে। সাত বছর বয়স অবধি ওখানেই থেকেছি। এরপর লন্ডনের ইস্টএন্ডে এসে থিতু হয়েছি। জীবনের বেশির ভাগ এখানেই বাস করছি। মনে পড়ে, হিথ্রো বিমানবন্দরে প্রথম নেমে দেখি কী ধূসর আর ঠাণ্ডা! ধীরে ধীরে যুক্তরাজ্যে থাকাটা বিশেষত লন্ডনে বসবাস সয়ে যায়। আমি যেখানে জন্মেছি সেখানে কত মানুষ, কত চমৎকার প্রকৃতি, কত মনোরম সবুজ গ্রামাঞ্চল— লন্ডন এসবের সম্পূর্ণ বিপরীত। সিলেটে আমার বেড়ে ওঠা, দাদা-দাদি ও পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর দিনগুলো আমার স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার সময় কমছে ২ ঘণ্টা

ব্রিটিশ এমপি রুশনারা দ্রুত বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ০৬:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জুন ২০১৬
ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সের (সংসদ) লেবার দলীয় সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী বলেছেন, বাংলাদেশ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। যতবার আমি ওদেশে গেছি ততবারই বদলে যাওয়া দেখেছি।

রুশনারা আলী এমপি এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বিকাশ, দারিদ্র্যমোচন ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিরাট উন্নতি করলেও বাংলাদেশ বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই চলেছে।

তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাজনীতিবিদরা আজকাল সামাজিক দায়িত্ব পালনের কাজে আত্মনিয়োগ করছেন। বাংলাদেশে ওরকম কোনো দায়িত্ব পালনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি আপনার আছে?

উত্তরে রুশনারা আলী বলেন, কত দ্রুতই না এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর

বিজনেস মডেলটা এমনভাবে গড়ে তোলা যেখানে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিই শুধু অগ্রাধিকার পাবে না, সামাজিক দায়িত্ব পালনটাও গুরুত্ব পাবে। আমি চাই, বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার কাজটি যুক্তরাজ্য দুই ভাবে করুক। তা হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত হুমকি নিরসনে সাহায্যদান।

বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যদূত হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। দায়িত্বটি পাওয়ার পর আপনার অনুভূতি কেমন?

রুশনারা আলী : এ পদে নিযুক্তি পেয়ে আমি বেশ আনন্দিত। বাংলাদেশ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। আমার নির্বাচনী এলাকার এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসীর রয়েছে বাংলাদেশি ঐতিহ্য। ব্রিটিশ সংসদে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে আমিই প্রথম সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। যুক্তরাজ্যে পাঁচ লাখ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বাস করছেন। তাদের অনেকের মতো আমারও বাংলাদেশের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন আছে। এ ঐতিহ্যের জন্য আমি সত্যিই গর্বিত।

দুই দেশের মধ্যে কোন বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন।

রুশনারা আলী : উন্নতি সাধন ও দারিদ্র্যমোচনে বাংলাদেশকে সহায়তার বেলায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিই। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের রয়েছে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। সে দেশের উন্নয়নে সহায়তাদানের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য এখন বৃহত্তম আন্তর্জাতিক দাতা। আমি গর্বিত যে, বিগত লেবার পার্টির সরকার উন্নয়নশীল দেশে সাহায্যদান তিন গুণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ খুলেছে। এ বিভাগ দারিদ্র্যমোচন কাজে বাংলাদেশকে সহায়তার বেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিশ্বের আবহাওয়া বিপর্যয়প্রবণ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। কাজেই আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত অভিঘাত রুদ্ধ করে জানমাল রক্ষায় বাংলাদেশকে সাহায্য করার উপায়গুলো চিহ্নিত করা যুক্তরাজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশের একটি বাংলাদেশ। তাই, শ্রমিকের মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো বিষয়ে তথ্য বিনিময় এবং নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়নে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

গেল নির্বাচনে জিতে কয়েকজন বাংলাদেশি সংসদ সদস্য হয়েছেন। আপনি কি মনে করেন, এর প্রভাবে ভবিষ্যতে আরও বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি নির্বাচনপ্রার্থী হবেন?

রুশনারা আলী : ২০১৫ সালের মে মাসের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কয়েকজন মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, এতে আমি আনন্দিত। আমি চাই, শুধু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরাই নন, অন্যান্য সংখ্যালঘু গ্রুপ থেকেও মহিলারা পার্লামেন্টের সদস্য হয়ে আসুন। পার্লামেন্টে মোট সদস্যের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ নারী। এর মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ এসেছেন সংখ্যালঘু অশ্বেতাঙ্গ পটভূমি থেকে।

শিশুকালে তো বাংলাদেশে ছিলেন। সে সম্পর্কে কিছু বলুন।

রুশনারা আলী : আমার জন্ম বাংলাদেশে। সাত বছর বয়স অবধি ওখানেই থেকেছি। এরপর লন্ডনের ইস্টএন্ডে এসে থিতু হয়েছি। জীবনের বেশির ভাগ এখানেই বাস করছি। মনে পড়ে, হিথ্রো বিমানবন্দরে প্রথম নেমে দেখি কী ধূসর আর ঠাণ্ডা! ধীরে ধীরে যুক্তরাজ্যে থাকাটা বিশেষত লন্ডনে বসবাস সয়ে যায়। আমি যেখানে জন্মেছি সেখানে কত মানুষ, কত চমৎকার প্রকৃতি, কত মনোরম সবুজ গ্রামাঞ্চল— লন্ডন এসবের সম্পূর্ণ বিপরীত। সিলেটে আমার বেড়ে ওঠা, দাদা-দাদি ও পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর দিনগুলো আমার স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল।