বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ প্রতিনিয়ত প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ইলিশ শিকারীদের জেল-জরিমানা করলেও থামেনি ইলিশ শিকারীদের দৌরাত্ম। মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত পদ্মা জুড়ে চলছে ইলিশ নিধনযজ্ঞ। লোকচক্ষু আড়াল করতে ট্রলারগুলোতে কোন আলোক বাতি ব্যবহার করছেন না অসাধু জেলেরা।
ইলিশ মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার মাঝে এভাবেই নতুন কৌশলে ইলিশ নিধন চলছে মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুর জাজিরা, মুন্সীগঞ্জ লৌহজং, ঢাকার দোহার, ফরিদপুরের সদরপুর অংশের পদ্মা নদীতে। আর এই মাছ নদীর চরে রেখেই মুঠোফোনের মাধ্যমে ও নদী পাড়ের প্রত্যন্ত বাজার বিক্রি হচ্ছে। তবে এক অভিযানে নতুন এ কৌশল ধরা পড়েছে মাদারীপুরের প্রশাসন ও পুলিশের হাতে ।
এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ২৫ জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও কয়েক জেলেকে জরিমানাও করেছে ভ্রাম্যমান আদালত । তারা ঘোষনা দিয়েছেন ইলিশ রক্ষায় রাতেই চলবে অভিযান। তবে জেলেদের অভিযোগ এবার কোন অনুদান বা সহায়তা না থাকায় তারা বাদ্ধ হয়ে মাছ ধরছেন।
ইলিশ মাছ রক্ষায় ইলিশ নিধনে সরকারের নিষেধজ্ঞার মাঝে গত ৩দিন গভীর রাতে পদ্মা পাড়ের জেলার শিবচরের কাঠালবাড়ি ঘাটে হাজির হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ , ওসি জাকির হোসেন, পুলিশের অন্তত ৭ কর্মকর্তাসহ বিশাল বাহিনী, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা। মধ্যরাতের নিরবতা ভেঙ্গে দুটি স্পীডবোট ও ট্রলারযোগে অভিযান পরিচালনাকারীরা হানা দেয় মাঝ পদ্মায়। ধরা পড়ে অন্তত ২০টি ইলিশ মাছ ধরার ট্রলার। জেলেদেও প্রতিটি জালেই ছিল মা ও জাটকা ইলিশের প্রাধান্য। এসময় বেশকিছু নৌকা নদীতে জাল ফেলেই পালিয়ে যায়।
এ পর্যন্ত প্রায় ৩শ কেজি ইলিশ ও প্রায় ২ লাখ মিটার জালসহ ৩ জেলে আটক করা হয়। সকালে জব্দকৃত ইলিশ মাছ এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। জব্দ করা জাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় । আটক জেলেদের ১৫ দিনের কারাদ- প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালত। প্রতি রাতেই প্রশাসন পদ্মায় অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
কয়েক জন জেলেকে করা হয়েছে আর্থিক জরিমানা। তবু থামছেনা ইলিশ শিকার । সাজাপ্রাপ্তদের জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে দিনের বেলা কড়াকড়ি থাকায় মধ্যরাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ইলিশ ধরছে অনেক জেলে। আর তা বিক্রি হচ্ছে নদীর চওে কাশবনে রেখেই । মুঠোফোনের মাধ্যমে ক্রেতাকে ডেকে এনে বা নদী পাড়ের বাজারে । মূলত এবার ক্ষতিপূরনের না দেয়া ও প্রচারনার অভাবকে দূষছেন জেলেরা। ভাটি অঞ্চলে কোস্টগার্ড,নেভি ও নৌ পুলিশ নদীতে সার্বক্ষনিক থাকায় উজানের এ অঞ্চলের নদীতে এখন ইলিশের ছড়াছড়ি হওয়ায় জেলেরা নিধন যজ্ঞে নেমেছে।
জেলেরা স্বীকার করেন এবছর সরকার কোন সহায়তা না দেয়ায় নতুন এ অপতৎপরতার বিষয়টি। তবে ক্রেতাদের দাবী শক্তহাতে প্রতিরোধ করা হোক এই অসাধু জেলেদের। কারন এ বছরের মতো তারা সারা বছর কমদামে ইলিশ খেতে চান।
ইলিশ ধরার নতুন কৌশলে বিস্মিত হয়েছেন খোদ মাদারীপুর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা। মাদারীপুরে সদর থানার ওসি জাকির হোসেন মোল্যা বলেন, কৌশল পাল্টে মধ্যরাতে ইলিশ ধরার বিষয়টি শনাক্ত হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তার জোড়ালো হুংকার। এখন থেকে রাতেই চলবে অভিযান।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ ইলিশ রক্ষায় সহায়তা না দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
মা ও জাটকা ইলিশ সংরক্ষনে সরকার ঘোষিত ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌশুমে নিধন বন্ধে সার্বক্ষনিক অভিযান ছাড়াও কোস্টগার্ড ও নেভি নিয়োগের দাবী ইলিশ প্রিয় সাধারন মানুষের। এরসাথে দ্রুত ভিজিএফ প্রদানের দাবিও জেলেদের।