বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সন্ধ্যায় গাঁজা সেবন করা আর শুক্রবার রাতে এক গ্লাস ওয়াইন পান করা–এ দুটো বিষয় আমার কাছে একই মনে হয়। আমার বয়সী যারা আছে তারা মনে করে মদ্যপান কিংবা সিগারেটের চেয়ে গাঁজা সেবন নিরাপদ।’ কথাগুলো বলছিলেন ২২ বছর বয়সী ফায়ি। তবে মেয়েটির আসল নাম নয় এটি।
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির একজন নেতা উইলিয়াম হেগ বলেন, ‘গাঁজার ব্যবহার নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।’ তিনি মনে করেন, বিনোদনের জন্য গাঁজার ব্যবহার বৈধ করা উচিত। তবে ব্রিটেনের সরকার তার এ আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
মাত্র একদিন আগে ক্যানাডার পার্লামেন্ট বিনোদনের জন্য গাজার ব্যবহার বৈধ করে দিয়েছে। ফায়ি (ছদ্মনাম) বলেন, তাদের স্কুলে বলা হয়েছে যে কোনো অবস্থায়ই মাদকের সংস্পর্শে আসা যাবে না। মদ্যপান এবং সিগারেট সেবনের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে তাদের নানা রকম তথ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক শিক্ষার্থী জীবনের কোনো একটি পর্যায়ে এসে মাদকের সংস্পর্শে চলে আসে।
গাঁজা সেবনের ক্ষতিকর দিকগুলো
. নিজেকে নিস্তেজ কিংবা অসুস্থ মনে হতে পারে।
. অলসতা এবং ঘুমের ভাব তৈরি করতে পারে।
. স্মৃতিশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে
. মানুষকে দ্বিধাগ্রস্ত এবং উদ্বিগ্ন করে তুলতে পারে
. গাড়ি চালানোর দক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে
লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষক ড. মার্টা ডি ফোর্টি বলেন, কিশোর বয়সে প্রতিদিন গাঁজা সেবন করলে সিজোফ্রেনিয়া তৈরি করতে পারে। এ ধরনের আশঙ্কার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ব্রিটেনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লিখিত এক নিবন্ধে হেগ উল্লেখ করেছেন, মানুষের জীবন কিংবা রাস্তা থেকে মাদককে তাড়িয়ে দেওয়ার যে ধারণা সেটি কার্যকর হয়নি। তিনি বলেন, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে তরুণ সমাজ অন্য কোনো কিছুর চেয়ে খুব সহজেই গাঁজা কিনতে পারে।
এমনকি ফাস্টফুড, সিগারেট কিংবা অ্যালকোহল এতো সহজে তারা কিনতে পারেনা বলে হেগ মন্তব্য করেন।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে তুলে ধরেছে যে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা সিগারেটের তুলনায় মাদক বেশি ব্যবহার করেছে।
২৪ বছর বয়সী ড্যারেন (ছদ্মনাম) জানিয়েছে, সে ১৩ বছর বয়স থেকেই গাঁজা সেবন করছে। তিনি বলেন, ‘সারাদিন ব্যস্ততার পর আপনি যখন বাসায় ফিরবেন তখন এটি সেবন করলে শরীর এবং মনে প্রশান্তি আসে। হঠাৎ করে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। এটা আমার মনে যেভাবে প্রশান্তি নিয়ে আসে, সেটি আমি পছন্দ করি।’
ড্যারেন মনে করেন তরুণ প্রজন্মের অনেকেই অ্যালকোহল পান করার চেয়ে গাঁজা সেবন করাকে নিরাপদ মনে করে। তিনি বলেন, ‘অ্যালকোহল পানে মানুষের মৃত্যু হয়। এটি লিভার ধ্বংস করে। কিন্তু গাঁজা সেবন নিয়ে এ ধরনের কিছু পাবেন না। এটা অনেকটা নরম বিকল্পের মতো। এটি সেবন করলে আমি মারা যাবনা।’
তবে গাঁজা সেবনের কিছু ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। সে বিষয়টি স্বীকার করছেন ড্যারেন। গাঁজা সেবনের কারণে হয়তো তার পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছে এবং অন্যান্য অর্জন ব্যাহত হয়েছে।
ড্যারেন বলেন, ‘আমি ভালো করেছি। কিন্তু আমি হয়তো আরো ভালো করতে পারতাম। প্রতিদিন গাঁজা সেবনের সঙ্গে আমার মনে এ দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। যখন আমি গাঁজা সেবন করি সে মুহূর্তটি চমৎকার। কিন্তু এক ঘণ্টা পর আমার মনে অপরাধবোধ কাজ করে। তাছাড়া এটি খুব দামি এবং কখনো-কখনো এটি আমাকে অলস করে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘গাজা সেবন এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
কর্মস্থল থেকে বের হলে কিংবা মার্কেটে গেলে গাঁজা বিক্রেতাদের দেখা পাওয়া যায়। তারা মানুষের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে–গাঁজা কিনবে কিনা? ব্রিটেনে অনেকে মনে করেন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোর কিংবা তরুণরা শুধু গাঁজা সেবন করে। কিন্তু বাস্তবতা এর চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত। ‘মা-বাবা, দাদা-দাদি, পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা শিক্ষকও গাঁজা সেবন করেন’ বলছিলেন ড্যারেন।
ফায়ি বলেন, শুধু স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের মধ্যে গাঁজা সেবন সীমাবদ্ধ নেই। যাদেরকে এ তালিকার বাইরে রাখা হয়, তাদের মধ্যেও এর বিস্তৃতি ঘটেছে।