বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পানির দামের চেয়েও কম, কেজি প্রতি আম ছয় টাকায়ও বিক্রি করতে দেখা গেছে, ক্রেতা নেই। ঈদের ছুটির ফাঁদে পড়ে দেশের বড় মোকাম ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাঠানো যাচ্ছেনা না, রপ্তানীরও বেহাল দশা। লন্ডনের পর সুইডেনেও অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের আম নষ্ট করা হয়েছে। এদিকে আশ্বিণা বাদে প্রায় সব জাতের আমই পরিপক্ক অবস্থায় গাছে ঝুলছে। কিন্তু ক্রেতার অভাবে অনেকেই তা গাছ থেকে পাড়ার সাহস পাচ্ছেন না। বিশেষ করে সাতক্ষিরা, খুলনা, খাগড়াছড়ি, যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগা, নাটোর, রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাষিসহ আম সংশ্লিষ্টদের অবস্থা খুবই করুণ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’২০১৭ প্রাপ্ত কৃষিবিদ ড. মো. শরফ উদ্দিন বলেন, আমের দাম পানির চেয়েও কম। গাছে পেকে ঝুলছে, মাটিতে পড়েও নষ্ট হচ্ছে। ক্রেতা নেই, বাইরে থেকে আম নিতে আসছেনা কেউ। ঈদের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাঠানো যাচ্ছেনা। আকাংখা অনুযায়ি রপ্তানীও করা যায়নি। তার ওপরে চলতি মৌসুমে গত বছরগুলোর চেয়ে আমের ফলনও বেড়েছে। এবছর ১৩ লাখ থেকে ১৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে পারে।
গত বছর ফলেছিল ১১ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন আম। গতপরশু (২২ জুন) রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ ও পঞ্চগড়ে ছিল গাছ থেকে পরিপক্ক ফজলি আম পাড়া শুরুর দিন। ১২ জুন সাতক্ষিরা, খুলনা ও খাগড়াছড়ি জেলায় গাছ থেকে ফজলি আম পাড়া শুরু হয়। জাতভত্তিক পরিপক্কতার সম্ভাব্য সময় অনুযায়ি গত ১৫ জুন সর্ব প্রথম সাতক্ষিরা, খুলনা ও খাগড়াছড়ি অঞ্চলে আপালি (বারি আম-৩) ও বহুভ্রণী (বারী আম-৮) জাতের আম গাছ থেকে পাড়া শুরু হওয়ার কথা এবং রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ ও পঞ্চগড়ে ২৭জুন থেকে গাছ থেকে নামানো যাবে। ১৫ জুন গাছ থেকে পরিপক্ক হাড়িভাঙ্গা আম পাড়া শুরু হয়।
রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ ও পঞ্চগড় ছাড়া দেশের অন্যন্য অঞ্চলে হাড়িভাঙ্গা আম খুব একটা হয়না। ১০ জুলাই থেকে শুরু করে ২০ জুলাই আশ্বিণা আম গাছ থেকে পাড়া যাবে। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, রাজশাহী, চাপাইনবাগঞ্জ, নওগাঁ (পেরেশা সাপাহার), রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ ও পঞ্চগড় জেলায় আশ্বিণা আম হয়ে থাকে। আম চাষি চুয়াডাঙ্গার আবুল কালাম আজাদ বলেন, না এবছর শেষ পর্যন্ত আম চাষিরা মরণ ফাঁদ থেকে বের হতে পারেনি। বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতার অভাবে গাছ থেকে আম পাড়ার ক্ষেত্রে নেয়া অবিবেচনা ও অপরিপক্ক সিদ্ধান্তে চাষিরা মরণ ফাঁদে পড়ে।
এই মরণ ফাঁদ থেকে উঠার কোনো উপায় শেষ পর্যন্ত তাদের কেউ দিতে পারেনি। গত ৭ জুন থেকে চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে আপালি আম পাকা শুরু হয়েছে। কিন্তু বাস্তব বিবর্জিত সিদ্ধান্তের বেড়াজালে বন্দি কৃষি কর্মকর্তারা ১৮ জুন থেকে ২২ জুনের আগে গাছ থেকে আপালি পাড়ার অনুমতি দেয়নি। আবেদন- নিবেদন ও দেন দরবার করেও লাভ হয়নি। ফলে যা হবার তাই হেয়েছে। গাছে আম পেকে মাটিতে পড়ে পঁচে নষ্ট হয়েছে।
দিশেহারা চাষিরা গোপনে গাছ থেকে আপালিসহ অন্যান্য আম পেড়ে হাটে হাটে পানির দামে বিক্রি বৃথা চেষ্টো করেছেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে আড়তে তুলতে এবং ঈদের কারণে ঢাকাও পাঠাতে পারেননি। এবার হিমসাগর মণ প্রতি ৮০০ এবং ল্যাংড়া আম ৭০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। এতে গাছ থেকে আম পাড়ার মুজুরী, আড়তে নিয়ে যাওয়ার পরিবহন, আড়তের কমিশন ও আড়ত থেকে ক্রেট ফেরত আনার খরচ বাদ দিয়ে কৃষক মনপ্রতি হিমসাগরে ৬০০ টাকা এবং ল্যাংড়ায় ৫০০ টাকা পাচ্ছে। আপালি হাটে হাটে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। এবার লেবার খরচও বেশি। একবেলা লেবার প্রতি মজুরী দিতে হচ্ছে ২৫০ টাকা।
টানা বৃষ্টির পর আম তাড়াতাড়ি পাকে। এই অঞ্চলের চেয়ে চাপাইনবাবগঞ্জে আম ১৫ থেকে ২০ দিন পরে পাকে। এব্যাপারে নাটোরের পুরস্কারপ্রাপ্ত ফল চাষি সেলিম রেজা বলেন, এই মৌসুমে সব জাতের আমের ফলন বেশ ভাল, কিন্তু ক্রেতা নেই। বাজার মূল্য না থাকায় চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। ক্রেতা অভাবে এখানে কেজি প্রতি আম ছয় টাকায়ও বিক্রি করতে দেখা গেছে। ৪৮ কেজি মণের ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৬০০ টাকায়। এখন নাবি জাতের আমের দিকেই তাকিয়ে আছেন আম চাষিরা।