বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্ত ঘেষা ও ধরলা নদী বেষ্টিত একটি উপজেলা। এ উপজেলার মোট ৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নটি সীমান্তে অবস্থিত।
এ অঞ্চলের মানুষ সাধারণত সারা বছরে এ সব ফলনের উপর নির্ভরশীল। তা দিয়ে চলে তাদের জীবন জীবিকা। যে সব কৃষকের নিজস্ব জমি নেই তারাও অন্যের জমি লিজ নিয়ে বেগুন চাষ করে শতাধিক পরিবার নিয়ে সচ্ছল ভাবে জীবন-জীবীকা করছে।
অঞ্চলের কৃষকরা সারা বছরেই বিভিন্ন মৌসুমে সবজির আগাম চাষ করে বদলে দিয়েছে নিজের ভাগ্যের চাঁকা। খুচরা পাইকারী ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি বেগুন ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলার বাজার গুলোতে খুচরা বিক্রি করেন। বর্তমানে কৃষক-কৃষানী কেউ ঘরে বসে নেই। সবাই জমিতে বেগুন তোলা ও পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন । বেগুন চাষ করে অঞ্চলের শত শত কৃষক-কৃষানী স্বলম্বী হয়েছেন। তবে খরিপ-২ (বর্ষা মৌসুমে) বেগুনের বাম্পার ফলন হলেও বেগুনের বাজার দর কম থাকা এবং কিছু কিছু বেগুন ক্ষেতে ডগাছিদ্রকারী পোঁকা আক্রমনের ফলে কৃষকরা দুচিন্তায় পড়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,চলতি খরিপ-২ (বর্ষা মৌসুমেও) কোন জমি আর পতিত নেই বিস্তৃর্ণ জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজের সমাহার। উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্বফুলমতি, পুর্ব কুরুষা ফেরুষা চওড়াবাড়ী, জাগিরটারী, চর-গোরকমন্ডপ, বস্তি গোরকমন্ডপ, বালাতারী, পশ্চিমফুলমতিসহ শত শত কৃষক জমিতে বেগুনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ হয়েছেন।
পূর্ব কুরুষাফেরুষা ও চওড়া বাড়ি গ্রামের পুলিন চন্দ্র রায় (৪০), আশিদুল ইসলাম (৩৫) সুধান চন্দ্র রায় (২৭), হাসেম আলী (৫০), অপিয়াল (৩৪), ধীনেন্দ্র নাথ রায় (৩৯), মনছার আলী (৭০), রফিকুল ইসলাম (৪৭), ঈসা মিয়াসহ তারা নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমি কন্টাক নিয়ে প্রতিবছরেই বেগুন চাষসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি যেমন-পটল, লালশাক, মুলা শাক, লাউ শাক, লাউ, কাঁচা মরিচ চাষাবাদ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা অন্য বছর গুলোতে যাবতীয় খরচ মিটিয়ে এক বিঘা বেগুন ক্ষেতে ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় করে। আয়ের টাকা দিয়ে তারা সচ্ছল ভাবে পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে সুন্দর ভাবে জীবন-জীবিকা করছেন। এ দিকে বর্তমান খরিপ-২(বর্ষা মৌসুমে) বেগুনের ভাল চাষ হলেও বাজার মুল্য কম থাকা ও অতিরিক্ত খরার কারণে বেগুন ক্ষেতে ডগাছিদ্র পোঁকার আক্রমনের কারণে কৃষকরা দুচিন্তায় পড়েছেন।
কৃষক আশিদুল, সুধান চন্দ্র, ঈসা মিয়া, রফিকুল ইসলাম জানান–কৃষি অফিস থেকে সামান্য প্রশিক্ষন নিয়ে জীবিকার তাগিদে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছি কৃষি কাজে। আমার প্রতি বিঘা বেগুন চাষে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বেগুনের বাম্পার ফলন ও দাম ভাল হলে প্রতি বিঘায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি হবে। তবে এ বছর খরিপ-২ মৌসুমে লাল তীর মার্কা বেগুনের বীজ ভাল না থাকায় খুব বেশি ফলন দেখা যাচ্ছে না। কিছু কিছু বেগুন ক্ষেতে ডগাছিদ্র পোঁকার আক্রমন করেছে। গাছও মরে যাচ্ছে। বেগুন গাছ বড় বড় দেখা গেলেও গাছে তেমন বেগুন নেই। বর্তমানে বেগুন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে মন বিক্রি করছি। বেগুনের দাম না বাড়লে এ বছর কৃষকের লোকসান ঘুনতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ জানান, খরিপ-২ (বর্ষা মৌসুমে) বেগুন চাষের উপযোগী হওয়ায় উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বেগুনের চারা চাষ করেছে। শীত মৌসুম আস্তে আস্তে এর পরিমান ২৫০ থেকে ৩০০ হেক্টর হবে। বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষন দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় যতেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে এবং অনেকেই স্বাবল্বী হয়েছেন। ডগাছিদ্র পোঁকা আক্রমনে উপজেলা কৃষি অফিস মাঠ পর্যায়ে গিয়ে রোগ দমনের জন্য কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন। তবে আশা করি কিছুদিন গেলে কৃষকরা বেগুনের বাজার মূল্য ভাল পাবে।