ঢাকা , রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যৌথ প্রযোজনার নামে কী হচ্ছে

যৌথ প্রেযাজনায় নির্মিত হয়েছিল শঙ্খচিল ছবিটিদুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল যৌথ প্রযোজনার ছবি প্রেম কি বুঝিনি। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবিটি নিয়ে অভিযোগ, চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সময় যৌথ প্রযোজনার নীতি মানা হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণের ব্যাপারটি আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ভারতের এস কে মুভিজের যৌথ প্রযোজনায় প্রেম কি বুঝিনি নির্মিত হয়েছে। পরিচালনা করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা সুদীপ্ত সরকার। আর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওম ও শুভশ্রী। উভয়েই ভারতের বাসিন্দা।

দুই বা ততোধিক দেশের প্রযোজনা সংস্থা একত্র হয়ে কিছু শর্ত মেনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেই তাকে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র বলা হয়। স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে শ খানেকের কাছাকাছি বেশি যৌথ প্রযোজনার ছবি।

যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত রোমিও বনাম জুলিয়েট ছবির পোস্টারযৌথ প্রযোজনার শুরু
১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে ছবি নির্মাণ শুরু হয়। প্রখ্যাত নির্মাতা আলমগীর কবিরের পরিচালনায় ধীরে বহে মেঘনা ছবিটি ছিল এই উদ্যোগের প্রথম প্রয়াস। একই বছর আশীর্বাদ চলচ্চিত্রের প্রযোজনায় ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় তিতাস একটি নদীর নাম মুক্তি পায়। শুধু ভারতের সঙ্গেই নয়; ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও কানাডার সম্মিলিত উদ্যোগে ববিতা অভিনীত দূরদেশ মুক্তি পায়। এরপর বিরতি দিয়ে যৌথ উদ্যোগে ছবি নির্মিত হতে থাকে। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন সরকার যৌথ উদ্যোগের ছবি নির্মাণের ব্যাপারটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে একটি নীতিমালা তৈরি করে। ২০১২ সালে যৌথ প্রযোজনার ছবির ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছে। এতে নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না বলে চলচ্চিত্রবোদ্ধারা মনে করছেন। তাই বর্তমান সময়ে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণের আগে নীতিমালা নিয়ে নতুন করে ভাবার দাবিও জানিয়েছেন সিনেমা-সংশ্লিষ্ট অনেকে।
নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, ‘১৯৮৬ সালের যৌথ প্রযোজনার নীতিমালায় সব দেশের শিল্পীদের সমান হারে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল। নতুন নীতিমালায় কিছু জায়গা সংশোধন করা হয়েছে। এখনকার নীতিমালায়ও বেশ কিছু নিয়ম বলবৎ থাকলে ঠিকমতো সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। কেন এবং কার স্বার্থে নতুন করে নীতিমালা তৈরি করতে হয়েছে জানি না।’
তবে ২০১২ সালের নীতিমালার ৬ নম্বর অনুচ্ছেদেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে, যৌথ প্রযোজনার সিনেমার ক্ষেত্রে দুই দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীর সংখ্যানুপাত সাধারণভাবে সমান রাখতে হবে। চিত্রায়ণের ক্ষেত্রে দুই দেশ সমান প্রাধান্য পাবে।
চিত্রনায়িকা সুচন্দা বলেন, ‘দুই দেশের তারকাশিল্পীদের এক মঞ্চে হাজির করতে, নতুন স্বাদ যোগ করতে যৌথ আয়োজনে চলচ্চিত্র নির্মাণ হতেই পারে, যা আগেও হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা যদি সঠিক না হয়, তাহলে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি হবে।’
বাংলাদেশি সিনেমার একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি নির্মাণও করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি যেসব ছবিতে অভিনয় করেছি এবং আমার প্রযোজিত ছবি যৌথ প্রযোজনার পূর্ণাঙ্গ নিয়ম মেনেই করেছি। সমানসংখ্যক শিল্পী-কলাকুশলী, আমার দেশের সঙ্গে মানানসই গল্প, সমান হারে শুটিং করেছি। এখন এসবের কিছুই মানা হয় না। উদ্ভট গল্প, পুরো ছবি দেশের বাইরে শুটিং করে এনে বাংলাদেশে একটা গান আর দু-তিনটা দৃশ্য ধারণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে কিছু মানুষের নাম জুড়ে দেওয়া হয়।’ একই কথা জানান চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি সুদীপ্ত কুমার দাশ।
সাম্প্রতিক কালে যৌথ প্রযোজনার নামে যেসব ছবি নির্মিত হচ্ছে, এসবের বেশির ভাগেরই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে অনেকগুলো যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ করেছে আশীর্বাদ চলচ্চিত্র। এদের প্রথম যৌথ প্রযোজনার ছবি অবিচার। পদ্মা নদীর মাঝির মতো কালজয়ী সিনেমাও উপহার দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। তাদের শেষ ছবিটি শঙ্খচিল। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান যৌথ প্রযোজনার নামে যা চলছে, এটাকে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি যদি কারও সঙ্গে কোনো চুক্তি করে তা পালন না করি, তাহলে সেটাকে তো প্রতারণাই বলব।’

ভঙ্গ সব চুক্তি

যৌথ প্রযোজনার ছবি ব্ল্যাক মুক্তির ক্ষেত্রে চুক্তি ছিল, একই সময়ে দুই দেশে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু এই ছবির বাংলাদেশ অংশের প্রযোজক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া অভিযোগ করেছেন, কলকাতার প্রযোজনা সংস্থা দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড চুক্তিটি ভেঙেছে। তারা বাংলাদেশের প্রযোজককে না জানিয়ে একতরফাভাবে কলকাতায় ছবিটি মুক্তি দিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের প্রযোজনা সংস্থা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ভারতে ব্ল্যাক ছবির প্রদর্শন বন্ধের দাবিতে গত ২৭ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছেন তিনি।

২০১৪ সালে পরিচালক অনন্য মামুনের আমি শুধু চেয়েছি তোমায় ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার এ ছবিতে নায়ক-নায়িকা কেউই বাংলাদেশের ছিলেন না। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি এই পরিচালককে ভুয়া সনদ দেওয়ার কারণে তখন সমিতি থেকে বহিষ্কার করে।পরের বছর যৌথ প্রযোজনার ছবি রোমিও বনাম জুলিয়েট-এর পোস্টারে কোনো পরিচালকের নামই ব্যবহার করা হয়নি। বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ভারতের এসকে মুভিজ ছবিটির প্রযোজক ছিল। একই বছরে আশিকী নামে যৌথ প্রযোজনার আরেকটি ছবি মুক্তি পায়। কলকাতার প্রচারণার পোস্টারে এবং ট্রেলারে কোথাও পরিচালক হিসেবে কলকাতার অশোক পাতির নামের পাশে বাংলাদেশের কারও নাম ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশে প্রদর্শিত পোস্টার ও হল প্রিন্টে পরিচালক হিসেবে জাজের কর্ণধার আবদুল আজিজের নাম দেখা গেছে।

আশিকী ছবিতে চরিত্রের গুরুত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং চিত্রনায়িকা মৌসুমী। এই ছবিতে তাঁকে এমন একটি গুরুত্বহীন চরিত্রে দেখা যায়, যা বাংলাদেশের ছবিতে কখনো দেখা যায়নি। মৌসুমী বলেন, ‘ছবিটিতে আমার চরিত্রের শুরুটা দেখানো হলেও শেষটা দর্শকের কাছে অজানাই থেকে যায়। লন্ডনে শুটিংয়ের সময় পরিচালক খুব তাড়াহুড়ো করেই কাজটা করেন। কিন্তু দেশে ফিরে বাংলাদেশ অংশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়, আমার চরিত্রের সঠিক পরিণতির জন্য আরও দু-এক দিন শুটিং করবেন। কিন্তু পরে তাঁরা আর শুটিং করেননি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্যেষ্ঠ একজন অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘এ দেশের বাজারে ব্যবসা করার জন্য ভারতের প্রযোজক ও পরিচালকেরা আমাদের শিল্পীদের নামে মাত্র কাস্টিং করেন। আমাদের উচিত দেশীয় শিল্পকে যথাযথ বিকাশ করা।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

যৌথ প্রযোজনার নামে কী হচ্ছে

আপডেট টাইম : ০৭:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৬

যৌথ প্রেযাজনায় নির্মিত হয়েছিল শঙ্খচিল ছবিটিদুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল যৌথ প্রযোজনার ছবি প্রেম কি বুঝিনি। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবিটি নিয়ে অভিযোগ, চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সময় যৌথ প্রযোজনার নীতি মানা হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণের ব্যাপারটি আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ভারতের এস কে মুভিজের যৌথ প্রযোজনায় প্রেম কি বুঝিনি নির্মিত হয়েছে। পরিচালনা করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা সুদীপ্ত সরকার। আর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওম ও শুভশ্রী। উভয়েই ভারতের বাসিন্দা।

দুই বা ততোধিক দেশের প্রযোজনা সংস্থা একত্র হয়ে কিছু শর্ত মেনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেই তাকে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র বলা হয়। স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে শ খানেকের কাছাকাছি বেশি যৌথ প্রযোজনার ছবি।

যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত রোমিও বনাম জুলিয়েট ছবির পোস্টারযৌথ প্রযোজনার শুরু
১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে ছবি নির্মাণ শুরু হয়। প্রখ্যাত নির্মাতা আলমগীর কবিরের পরিচালনায় ধীরে বহে মেঘনা ছবিটি ছিল এই উদ্যোগের প্রথম প্রয়াস। একই বছর আশীর্বাদ চলচ্চিত্রের প্রযোজনায় ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় তিতাস একটি নদীর নাম মুক্তি পায়। শুধু ভারতের সঙ্গেই নয়; ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও কানাডার সম্মিলিত উদ্যোগে ববিতা অভিনীত দূরদেশ মুক্তি পায়। এরপর বিরতি দিয়ে যৌথ উদ্যোগে ছবি নির্মিত হতে থাকে। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন সরকার যৌথ উদ্যোগের ছবি নির্মাণের ব্যাপারটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে একটি নীতিমালা তৈরি করে। ২০১২ সালে যৌথ প্রযোজনার ছবির ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছে। এতে নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না বলে চলচ্চিত্রবোদ্ধারা মনে করছেন। তাই বর্তমান সময়ে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণের আগে নীতিমালা নিয়ে নতুন করে ভাবার দাবিও জানিয়েছেন সিনেমা-সংশ্লিষ্ট অনেকে।
নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, ‘১৯৮৬ সালের যৌথ প্রযোজনার নীতিমালায় সব দেশের শিল্পীদের সমান হারে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল। নতুন নীতিমালায় কিছু জায়গা সংশোধন করা হয়েছে। এখনকার নীতিমালায়ও বেশ কিছু নিয়ম বলবৎ থাকলে ঠিকমতো সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। কেন এবং কার স্বার্থে নতুন করে নীতিমালা তৈরি করতে হয়েছে জানি না।’
তবে ২০১২ সালের নীতিমালার ৬ নম্বর অনুচ্ছেদেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে, যৌথ প্রযোজনার সিনেমার ক্ষেত্রে দুই দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীর সংখ্যানুপাত সাধারণভাবে সমান রাখতে হবে। চিত্রায়ণের ক্ষেত্রে দুই দেশ সমান প্রাধান্য পাবে।
চিত্রনায়িকা সুচন্দা বলেন, ‘দুই দেশের তারকাশিল্পীদের এক মঞ্চে হাজির করতে, নতুন স্বাদ যোগ করতে যৌথ আয়োজনে চলচ্চিত্র নির্মাণ হতেই পারে, যা আগেও হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা যদি সঠিক না হয়, তাহলে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি হবে।’
বাংলাদেশি সিনেমার একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি নির্মাণও করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি যেসব ছবিতে অভিনয় করেছি এবং আমার প্রযোজিত ছবি যৌথ প্রযোজনার পূর্ণাঙ্গ নিয়ম মেনেই করেছি। সমানসংখ্যক শিল্পী-কলাকুশলী, আমার দেশের সঙ্গে মানানসই গল্প, সমান হারে শুটিং করেছি। এখন এসবের কিছুই মানা হয় না। উদ্ভট গল্প, পুরো ছবি দেশের বাইরে শুটিং করে এনে বাংলাদেশে একটা গান আর দু-তিনটা দৃশ্য ধারণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে কিছু মানুষের নাম জুড়ে দেওয়া হয়।’ একই কথা জানান চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি সুদীপ্ত কুমার দাশ।
সাম্প্রতিক কালে যৌথ প্রযোজনার নামে যেসব ছবি নির্মিত হচ্ছে, এসবের বেশির ভাগেরই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে অনেকগুলো যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ করেছে আশীর্বাদ চলচ্চিত্র। এদের প্রথম যৌথ প্রযোজনার ছবি অবিচার। পদ্মা নদীর মাঝির মতো কালজয়ী সিনেমাও উপহার দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। তাদের শেষ ছবিটি শঙ্খচিল। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান যৌথ প্রযোজনার নামে যা চলছে, এটাকে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি যদি কারও সঙ্গে কোনো চুক্তি করে তা পালন না করি, তাহলে সেটাকে তো প্রতারণাই বলব।’

ভঙ্গ সব চুক্তি

যৌথ প্রযোজনার ছবি ব্ল্যাক মুক্তির ক্ষেত্রে চুক্তি ছিল, একই সময়ে দুই দেশে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু এই ছবির বাংলাদেশ অংশের প্রযোজক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া অভিযোগ করেছেন, কলকাতার প্রযোজনা সংস্থা দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড চুক্তিটি ভেঙেছে। তারা বাংলাদেশের প্রযোজককে না জানিয়ে একতরফাভাবে কলকাতায় ছবিটি মুক্তি দিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের প্রযোজনা সংস্থা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ভারতে ব্ল্যাক ছবির প্রদর্শন বন্ধের দাবিতে গত ২৭ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছেন তিনি।

২০১৪ সালে পরিচালক অনন্য মামুনের আমি শুধু চেয়েছি তোমায় ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার এ ছবিতে নায়ক-নায়িকা কেউই বাংলাদেশের ছিলেন না। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি এই পরিচালককে ভুয়া সনদ দেওয়ার কারণে তখন সমিতি থেকে বহিষ্কার করে।পরের বছর যৌথ প্রযোজনার ছবি রোমিও বনাম জুলিয়েট-এর পোস্টারে কোনো পরিচালকের নামই ব্যবহার করা হয়নি। বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ভারতের এসকে মুভিজ ছবিটির প্রযোজক ছিল। একই বছরে আশিকী নামে যৌথ প্রযোজনার আরেকটি ছবি মুক্তি পায়। কলকাতার প্রচারণার পোস্টারে এবং ট্রেলারে কোথাও পরিচালক হিসেবে কলকাতার অশোক পাতির নামের পাশে বাংলাদেশের কারও নাম ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশে প্রদর্শিত পোস্টার ও হল প্রিন্টে পরিচালক হিসেবে জাজের কর্ণধার আবদুল আজিজের নাম দেখা গেছে।

আশিকী ছবিতে চরিত্রের গুরুত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং চিত্রনায়িকা মৌসুমী। এই ছবিতে তাঁকে এমন একটি গুরুত্বহীন চরিত্রে দেখা যায়, যা বাংলাদেশের ছবিতে কখনো দেখা যায়নি। মৌসুমী বলেন, ‘ছবিটিতে আমার চরিত্রের শুরুটা দেখানো হলেও শেষটা দর্শকের কাছে অজানাই থেকে যায়। লন্ডনে শুটিংয়ের সময় পরিচালক খুব তাড়াহুড়ো করেই কাজটা করেন। কিন্তু দেশে ফিরে বাংলাদেশ অংশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়, আমার চরিত্রের সঠিক পরিণতির জন্য আরও দু-এক দিন শুটিং করবেন। কিন্তু পরে তাঁরা আর শুটিং করেননি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্যেষ্ঠ একজন অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘এ দেশের বাজারে ব্যবসা করার জন্য ভারতের প্রযোজক ও পরিচালকেরা আমাদের শিল্পীদের নামে মাত্র কাস্টিং করেন। আমাদের উচিত দেশীয় শিল্পকে যথাযথ বিকাশ করা।’