ঢাকা , রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
তারেক রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সমাজ গড়বো: আমিনুল হক দেশের পরিবর্তন আনতে তরুণদের স্বপ্ন দেখতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা ব্যাপক সমালোচনার মুখে ইফা বোর্ড থেকে আওয়ামী ঘরানার আলেমদের নাম পরিবর্তন করলেন ধর্ম উপদেষ্টা ইউরোপের কোন ক্লাবের প্রস্তাব পেয়েছেন, জানালেন সাবিনা সাইফপুত্রও বেশ কয়েকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পাপারাজ্জিদের দেখে চাঁদপুরের ইলিশ প্রজনন রক্ষার অভিযানে ৩৭২ জেলে গ্রেপ্তার নাটোরে ককটেল-পেট্রলবোমাসহ দুই যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার অক্টোবরে রেমিট্যান্স এলো ২.৩০ বিলিয়ন ডলার কিশোরগঞ্জে গাছের সঙ্গে ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধুর মৃত্যু মার্কিন নির্বাচন: জনমত জরিপে এগিয়ে গেলেন কমালা

শীঘ্রই তনু হত্যার জট খুলতে পারে

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে হত্যার ঘটনায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ১২ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের সার্জেন্ট জাহিদুজ্জামানকে সহসাই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে খুলতে পারে আলোচিত তনু হত্যার রহস্য। মামলাটি দেখতে পারে আলোর মুখ।

 

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কুমিল্লার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকেই বের হতে পারে তনু হত্যার রহস্য। কারণ মৃতদেহ উদ্ধার করে প্রথমে সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয়। সূত্র মতে, তনুর শরীরে পাওয়া তিনজন পুরুষের বীর্যের ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে মেলাতে সেনানিবাসের অন্তত ২৫ জন সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডি। জিজ্ঞাসাবাদ করেছে অন্তত ৫০ জনকে।

 

জানা গেছে, তনু ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের অলিপুরের ১২ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের কোয়ার্টারের সার্জেন্ট জাহিদুজ্জামানের মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতে যান। রাতে তনুর লাশ পাওয়া যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের অলিপুরে পাওয়ার হাউসের জঙ্গলে। ময়নাতদন্তে তনুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল এবং তাঁর মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেছিলেন। তনুর কাপড় ও শরীরের বিভিন্ন অংশের ডিএনএ পরীক্ষার পর তাতে তিনজন পুরুষের ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া গেছে বলে জানায় সিআইডি। তনুর পরিবার ঘটনার পর থেকেই অভিযোগ করে আসছিল ১৮ মার্চ সেনানিবাসে অনুষ্ঠানে গান না করায় শারীরিক নির্যাতনের পর তাঁকে হত্যা করে লাশ জঙ্গলে এনে ফেলে রাখা হয়েছিল।

 

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার তদন্ত সিআইডির কাছে যাওয়ার পর থেকে সামরিক-বেসামরিক অন্তত ৫০ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন শিল্পীও রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ২৫ জনের ডিএনএ প্রোফাইল সংগ্রহ করে তনুর কাপড়ে পাওয়া প্রোফাইলের সঙ্গে মেলানো হয়েছে।

 

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গত ২৪ নভেম্বর ঢাকায় সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ১২ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের কোয়ার্টারের সার্জেন্ট জাহিদুজ্জামানকে। তাঁকে এ সময় প্রশ্ন করে তদন্তে ধরা পড়া নানা অসংগতির সমাধান জানতে চায় সিআইডি। এ ছাড়া কৌশলে সংগ্রহ করা তাঁর ডিএনএ প্রোফাইল মেলানো হয়। কিন্তু তাঁর ডিএনএর সঙ্গে তনুর ডিএনএ মেলেনি বলেও সূত্রটি জানায়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সার্জেন্ট জাহিদুজ্জামানকে অনেক বিমর্ষ দেখা যায়। তিনি অনেক শুকিয়েও গেছেন বলে সূত্র জানায়। সূত্র আরো জানায়, তনুর শরীরে তিন পুরুষের মধ্যে একজনের বীর্যের উপস্থিতি বেশি ছিল।

 

এদিকে গত ৩ ডিসেম্বর নতুন করে পাওয়া কিছু তথ্য মিলিয়ে নিতে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ঢাকায় সিআইডির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তনুর বাবা এয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, ভাই রুবেল হোসেন, নাজমুল হাসান, চাচাতো বোন লাইজু জাহান ও ভাই মিনহাজকে। তাঁদের মামলার তদন্ত সহায়ক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ ও শীর্ষ সিআইডি কর্মকর্তা ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তাঁরা মামলাটির রহস্য উদ্ঘাটনে সিআইডির আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করেন। তাঁরা দ্রুত মামলাটির রহস্য উন্মোচনের অনুরোধ জানান।

 

তনুর মা আনোয়ারা বেগম জানান, ‘সিআইডি আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। আমরা দেশবাসীর দোয়া চাই। সিআইডি আমাদের সময় দিতে বলেছে। ’

 

অন্যদিকে তনুর বাবা এয়ার হোসেন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে কুমিল্লা শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে তাঁকে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. পঞ্চানন দাশকে দেখানো হয়েছে। তিনি মেয়ে হত্যার ঘটনা ও পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁর ছেলে আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

তনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি জালাল আহমেদ জানান, তদন্ত অব্যাহত আছে। বিভিন্ন সময় নানাজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। এর বেশি তিনি কিছু জানাতে রাজি হননি।

 

উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে। এ অভিযোগে পরদিন ২১ মার্চ কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তনুর বাবা এয়ার হোসেন। মামলাটি প্রথমে কোতোয়ালি থানার পুলিশ, পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও সব শেষে মামলাটি হস্তান্তর করা হয় সিআইডিতে। হত্যাকাণ্ডের সাড়ে আট মাস অতিবাহিত হলেও তদন্তে সাফল্য আসেনি।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

তারেক রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সমাজ গড়বো: আমিনুল হক

শীঘ্রই তনু হত্যার জট খুলতে পারে

আপডেট টাইম : ০৫:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে হত্যার ঘটনায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ১২ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের সার্জেন্ট জাহিদুজ্জামানকে সহসাই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে খুলতে পারে আলোচিত তনু হত্যার রহস্য। মামলাটি দেখতে পারে আলোর মুখ।

 

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কুমিল্লার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকেই বের হতে পারে তনু হত্যার রহস্য। কারণ মৃতদেহ উদ্ধার করে প্রথমে সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয়। সূত্র মতে, তনুর শরীরে পাওয়া তিনজন পুরুষের বীর্যের ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে মেলাতে সেনানিবাসের অন্তত ২৫ জন সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডি। জিজ্ঞাসাবাদ করেছে অন্তত ৫০ জনকে।

 

জানা গেছে, তনু ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের অলিপুরের ১২ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের কোয়ার্টারের সার্জেন্ট জাহিদুজ্জামানের মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতে যান। রাতে তনুর লাশ পাওয়া যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের অলিপুরে পাওয়ার হাউসের জঙ্গলে। ময়নাতদন্তে তনুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল এবং তাঁর মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেছিলেন। তনুর কাপড় ও শরীরের বিভিন্ন অংশের ডিএনএ পরীক্ষার পর তাতে তিনজন পুরুষের ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া গেছে বলে জানায় সিআইডি। তনুর পরিবার ঘটনার পর থেকেই অভিযোগ করে আসছিল ১৮ মার্চ সেনানিবাসে অনুষ্ঠানে গান না করায় শারীরিক নির্যাতনের পর তাঁকে হত্যা করে লাশ জঙ্গলে এনে ফেলে রাখা হয়েছিল।

 

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার তদন্ত সিআইডির কাছে যাওয়ার পর থেকে সামরিক-বেসামরিক অন্তত ৫০ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন শিল্পীও রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ২৫ জনের ডিএনএ প্রোফাইল সংগ্রহ করে তনুর কাপড়ে পাওয়া প্রোফাইলের সঙ্গে মেলানো হয়েছে।

 

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গত ২৪ নভেম্বর ঢাকায় সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ১২ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের কোয়ার্টারের সার্জেন্ট জাহিদুজ্জামানকে। তাঁকে এ সময় প্রশ্ন করে তদন্তে ধরা পড়া নানা অসংগতির সমাধান জানতে চায় সিআইডি। এ ছাড়া কৌশলে সংগ্রহ করা তাঁর ডিএনএ প্রোফাইল মেলানো হয়। কিন্তু তাঁর ডিএনএর সঙ্গে তনুর ডিএনএ মেলেনি বলেও সূত্রটি জানায়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সার্জেন্ট জাহিদুজ্জামানকে অনেক বিমর্ষ দেখা যায়। তিনি অনেক শুকিয়েও গেছেন বলে সূত্র জানায়। সূত্র আরো জানায়, তনুর শরীরে তিন পুরুষের মধ্যে একজনের বীর্যের উপস্থিতি বেশি ছিল।

 

এদিকে গত ৩ ডিসেম্বর নতুন করে পাওয়া কিছু তথ্য মিলিয়ে নিতে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ঢাকায় সিআইডির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তনুর বাবা এয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, ভাই রুবেল হোসেন, নাজমুল হাসান, চাচাতো বোন লাইজু জাহান ও ভাই মিনহাজকে। তাঁদের মামলার তদন্ত সহায়ক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ ও শীর্ষ সিআইডি কর্মকর্তা ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তাঁরা মামলাটির রহস্য উদ্ঘাটনে সিআইডির আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করেন। তাঁরা দ্রুত মামলাটির রহস্য উন্মোচনের অনুরোধ জানান।

 

তনুর মা আনোয়ারা বেগম জানান, ‘সিআইডি আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। আমরা দেশবাসীর দোয়া চাই। সিআইডি আমাদের সময় দিতে বলেছে। ’

 

অন্যদিকে তনুর বাবা এয়ার হোসেন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে কুমিল্লা শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে তাঁকে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. পঞ্চানন দাশকে দেখানো হয়েছে। তিনি মেয়ে হত্যার ঘটনা ও পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁর ছেলে আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

তনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি জালাল আহমেদ জানান, তদন্ত অব্যাহত আছে। বিভিন্ন সময় নানাজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। এর বেশি তিনি কিছু জানাতে রাজি হননি।

 

উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে। এ অভিযোগে পরদিন ২১ মার্চ কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তনুর বাবা এয়ার হোসেন। মামলাটি প্রথমে কোতোয়ালি থানার পুলিশ, পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও সব শেষে মামলাটি হস্তান্তর করা হয় সিআইডিতে। হত্যাকাণ্ডের সাড়ে আট মাস অতিবাহিত হলেও তদন্তে সাফল্য আসেনি।