ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাতে বাঙালী? কৃষকের খবর রাখছেন তো

যে মাটিকে কৃষক ভালবাসে, সেই মাটির সাথে সম্পর্কটা কৃষক আর রাখতে পারছে না! শুধু কি মাটির সাথেই কৃষকের সম্পর্ক? এই যে আকাশ, বাতাস, চাঁদ, সূর্য,পানি, পশু-পাখি সবার  সাথেই তো কৃষকের সম্পর্ক! তারা ভাল থাকলে কৃষক ভাল থাকে, তারা খারাপ থাকলে কৃষক খারাপ থাকে!

Haorএই যে প্রতি বছর পানি এসে ডুবিয়ে দিচ্ছে হাওর, সেই পানির নিয়ন্ত্রণ তো কৃষক করতে পারছে না! অথচ যে সময় কৃষকের পানির দরকার তখন গভীর নলকূপ দিয়ে ইঞ্জিন মেশিন ব্যবহার করতে হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলতে। নদী-নালা, খাল-বিলে পানি থাকছে না তখন! একসময় সে পানি, নদী-নালা,পুকুর থেকেই কৃষক সংগ্রহ করতো। আর এখন সময়ের আগেই সব শুকিযে কাঠ। মাটিকে কেন্দ্র করে কৃষকের জন্ম সেই মানব সভ্যতার জন্ম লগ্ন থেকে, সেই নিজের ভাগের মাটিকে কৃষক এখন বিক্রি করতে চায়!

হাওর অঞ্চলের মানুষ এখন মুক্তি চায়! একরের পর একর জমি বিক্রি করতে চায়, ক্রেতা নেই! কী করবে জমি দিয়ে! হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আর দাদনের টাকার সুদ জ্যামিতিক হারে বাড়ছে বছর বছর! বিনিময়ে প্রকৃতি কেড়ে নিচ্ছে মাঠের ফসল। প্রতি বছর অকাল বন্যা অসময়ে ডুবিয়ে দিচ্ছে কৃষকের কাঁচা- পাকা ধান।

ধান কাটার শ্রমিক নেই, যারা আছে তারাও কৃষকের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে মজুরির পাথর। সুযোগ বুঝে সবাই বিরূপ হয়ে উঠে প্রকৃতি আর নিরীহ কৃষকের সাথে! অনেক হাওর ডুবে গেছে আগেই,যারা কিছুটা ফসল তুলতে পেরেছে তাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী!

বেপারী প্রতি বছর ভাগে ধান কাটে, কৃষকের সাত বস্তা,বেপারীর এক বস্তা ধান! মাড়াই মেশিন নেবে ১০০ বস্তায় ৫/৬ বস্তা। একসময় যে গরুর গাড়িতে করে ধান নিয়ে আসতো বাড়ির উঠানে, এখন ছোট ছোট মেশিন চালিত যান দখল করেছে সেই স্থান। তাদেরকেও ভাগ করে দিতে হয় ধান।  তারপর দিনের অবস্থা ভাল হলে শুকনা ধান কৃষক ঘরে তুলবে। সেখান থেকে কৃষকের আর স্থায়ী সহযোগীদের মধ্যে ভাগ হবে ধান।

আট মাসে একজন সহযোগীর বেতন ৪০ হাজার টাকা সাথে থাকা খাওয়া  ফ্রি। চৈত্র- বৈশাখ মাসে আরও দুজন অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ, প্রতি সহযোগীর জন্য ২০/২২ মন ধান, থাকা-খাওয়া ফ্রি! এগুলো কৃষকের জমির পরিমাণের উপর ভাগ হবে। কে কতজন শ্রমিক  নিযুক্ত করবে।
ধান কাটার হিসেব আলাদা! এবছর ধানের বেপারী এসেছে হাতে গোনা কয়েকজন তাই তাদের চাহিদা  পরিবর্তন হয়েছে, এবার ভাগে ধান কাটেনি তারা।

প্রতি কাঠা ১০০০/১৩০০ টাকায় কেটেছে ধান। কেউ কেউ নগদ ৫০০ টাকা মজুরি, সাথে খাবার ফ্রি দিয়ে কাটিয়েছে ধান। কেউ কেউ জমির অর্ধেক বেপারীকে দিয়ে দিয়েছে এই কারণে যে কিছুটা ধান হলেও যেন ঘরে আসে।

সবশেষে ডুবে গেছে পাকা ধানের জমি। যতটুকু ধান মিলেছে, বৃষ্টির জন্য ধান শুকনো যাচ্ছে না কিন্তু ধান কাটার বেপারীকে টাকা দিতে হচ্ছে এখনই! কৃষক টাকা কোথায় পাবে এখন? ঘরে ধান নেই, ধানের দাম ৪৫০টাকা। ধান কেনার ব্যাপারীদেরও ঘাটতি, যারা আছে তারাও কৃষককে আবার চাপে রাখছে!

Haor 2যারা ধান কিনে তারা ধানের দাম নির্ধারণ করে দুই ভাবে। কাঠার মাপ মানে হচ্ছে আধুনিক ওজনের মেশিন যেখানে সঠিক মাপে ধান দিবে কৃষক, কিন্তু ধানের দাম প্রতি মণে ৩০/৪০ টাকা কমে যাবে! আবার ধানের বেপারীর লোক যদি ধান নিজ হাতে মেপে নেয় তবে ধানের দাম থাকবে ৪৫০ টাকা! কারণ মাপের সময় প্রতি মনে ৬/৮ কেজি ধান কৃষকের চোখের সামনে বেপারী বেশী  নিচ্ছে!  কৃষকের  নিরুপায় জীবনে সবাই শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়!

এদিকে দাদন ব্যবসায়ী দরজায় টাকার জন্য প্রতিদিন! প্রতিবছর টাকা দাদন ফেরৎ না দিতে পেরে ছোট ছোট কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন।
সরকার যে ধানের দাম নির্ধারণ করে সেটা গ্রামের কৃষকের নাগালের বাইরেই থেকে যায় ভাটি অঞ্চলে!
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে কৃষিতে বা নিত্য জীবন যাপনে যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে সে বেপারে কৃষকের কোন ধারণাই নেই। বছরের পর বছর কৃষক যে ফসল ফলায় সেখানে বন্ধ্যা বীজ এবং কীটনাশকের প্রভাব যতটা পড়েছে তার ছিটেফোঁটাও নেই কৃষির আধুনিকায়নে!

অথচ কৃষিকে উৎসাহিত করতে সরকারীভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
প্রতিটি গ্রামে কৃষক সমিতি গঠন করে কৃষি সম্পর্কে সকল তথ্য- উপাত্ত সহ সকল সুবিধা সমূহ কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। কৃষি কাজের সময় ভাটি অঞ্চলে মজুরি নির্ধারণ করে শ্রমিক পাঠানো যায় কৃষক সমিতির সহযোগিতায়। আমাদের নদী গুলো খননের ব্যবস্থা করে বাঁধগুলো জোরদার করা যায়। কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা যায়।
কৃষিকে ত্বরান্বিত করতে ধানের চাড়া রোপনের মেশিন, ধান কাটার মেশিন, ধান মাড়াইয়ের মেশিন দেয়া যায় কৃষককে। মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে কৃষি কাজ যেমন সম্ভব হবে তেমনি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে।
পরিবারের জমি হিসেব করে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা যায় সরকারিভাবে।

পাশাপাশি গ্রামের দাদন ব্যবসায়ীদের ব্যাপারেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সেই সাথে সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থাগুলোকে বাধ্য করা যায় কৃষককে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্য।
প্রতিটি গ্রামে কৃষি উৎসাহিত করনে কৃষক সমিতির মাধ্যমে  জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কৃষি সম্পর্কে ধারণা দেয়া যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে কৃষককে জানানো যায়।
কৃষিতে কীটনাশক ব্যবহারের ঝুঁকি, বন্ধ্যা বীজ ব্যবহারের ফলে আমাদের নিজস্ব সকল বীজ বিলুপ্তির পথে। এই সকল নেতিবাচক বিষয়গুলো কৃষক  অবগত করে দেশী বীজ সংরক্ষণে তাদের উৎসাহিত করা যায়।
আরেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। তিন মাসের মধ্যে কৃষি ফলন নিশ্চিত করে অকাল বন্যার হাত থেকে কৃষক এর ফলনকে বাঁচিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারীভাবেই।

সঠিক ব্যবস্থাপনার পরও কৃষকের ফসল ডুবে গেলে কৃষি ঋণ মওকুফ করে কৃষককে পরবর্তী বছর কৃষি কাজে আবার উৎসাহিত করে তুলতে হবে। সেই সাথে ডুবে যাওয়া ফসল কাটার আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের সুযোগ তৈরী করা যায়।

কৃষকের ধান কেনার জন্য ফসল উঠার  সাথে সাথেই সরকারীভাবে প্রতিটি গ্রামের কৃষক সমিতিকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এভাবে  গ্রামের মধ্যস্বত্ব ভোগীদের বর্জন করা সম্ভব।
প্রতি মাসে সকল কৃষি সমিতির সাথে কৃষি কর্মকর্তাদের বৈঠকের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতি বৈঠকে কৃষকের ইতিবাচক- নেতিবাচক সমস্যা এবং করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

সরকারের এলাকা ভিত্তিক  নির্বাচিত প্রতিনিধিকে আরও অনেক বেশী দায়িত্বশীল করে তুলতে হবে। ভাটি অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর ধান ডুবে গেলেও নির্বাচিত প্রতিনিধিকে  কৃষকের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় না কখনও।

দেশে খাদ্য নিরাপত্তা প্রদানে কৃষককে সরকারীভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নয়তো কৃষি প্ৰধান দেশ একদিন সম্পূর্ণ আমদানি-নির্ভর দেশ হিসেবে পরনির্ভরশীল হয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ভাতে বাঙালী? কৃষকের খবর রাখছেন তো

আপডেট টাইম : ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ মে ২০১৬

যে মাটিকে কৃষক ভালবাসে, সেই মাটির সাথে সম্পর্কটা কৃষক আর রাখতে পারছে না! শুধু কি মাটির সাথেই কৃষকের সম্পর্ক? এই যে আকাশ, বাতাস, চাঁদ, সূর্য,পানি, পশু-পাখি সবার  সাথেই তো কৃষকের সম্পর্ক! তারা ভাল থাকলে কৃষক ভাল থাকে, তারা খারাপ থাকলে কৃষক খারাপ থাকে!

Haorএই যে প্রতি বছর পানি এসে ডুবিয়ে দিচ্ছে হাওর, সেই পানির নিয়ন্ত্রণ তো কৃষক করতে পারছে না! অথচ যে সময় কৃষকের পানির দরকার তখন গভীর নলকূপ দিয়ে ইঞ্জিন মেশিন ব্যবহার করতে হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলতে। নদী-নালা, খাল-বিলে পানি থাকছে না তখন! একসময় সে পানি, নদী-নালা,পুকুর থেকেই কৃষক সংগ্রহ করতো। আর এখন সময়ের আগেই সব শুকিযে কাঠ। মাটিকে কেন্দ্র করে কৃষকের জন্ম সেই মানব সভ্যতার জন্ম লগ্ন থেকে, সেই নিজের ভাগের মাটিকে কৃষক এখন বিক্রি করতে চায়!

হাওর অঞ্চলের মানুষ এখন মুক্তি চায়! একরের পর একর জমি বিক্রি করতে চায়, ক্রেতা নেই! কী করবে জমি দিয়ে! হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আর দাদনের টাকার সুদ জ্যামিতিক হারে বাড়ছে বছর বছর! বিনিময়ে প্রকৃতি কেড়ে নিচ্ছে মাঠের ফসল। প্রতি বছর অকাল বন্যা অসময়ে ডুবিয়ে দিচ্ছে কৃষকের কাঁচা- পাকা ধান।

ধান কাটার শ্রমিক নেই, যারা আছে তারাও কৃষকের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে মজুরির পাথর। সুযোগ বুঝে সবাই বিরূপ হয়ে উঠে প্রকৃতি আর নিরীহ কৃষকের সাথে! অনেক হাওর ডুবে গেছে আগেই,যারা কিছুটা ফসল তুলতে পেরেছে তাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী!

বেপারী প্রতি বছর ভাগে ধান কাটে, কৃষকের সাত বস্তা,বেপারীর এক বস্তা ধান! মাড়াই মেশিন নেবে ১০০ বস্তায় ৫/৬ বস্তা। একসময় যে গরুর গাড়িতে করে ধান নিয়ে আসতো বাড়ির উঠানে, এখন ছোট ছোট মেশিন চালিত যান দখল করেছে সেই স্থান। তাদেরকেও ভাগ করে দিতে হয় ধান।  তারপর দিনের অবস্থা ভাল হলে শুকনা ধান কৃষক ঘরে তুলবে। সেখান থেকে কৃষকের আর স্থায়ী সহযোগীদের মধ্যে ভাগ হবে ধান।

আট মাসে একজন সহযোগীর বেতন ৪০ হাজার টাকা সাথে থাকা খাওয়া  ফ্রি। চৈত্র- বৈশাখ মাসে আরও দুজন অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ, প্রতি সহযোগীর জন্য ২০/২২ মন ধান, থাকা-খাওয়া ফ্রি! এগুলো কৃষকের জমির পরিমাণের উপর ভাগ হবে। কে কতজন শ্রমিক  নিযুক্ত করবে।
ধান কাটার হিসেব আলাদা! এবছর ধানের বেপারী এসেছে হাতে গোনা কয়েকজন তাই তাদের চাহিদা  পরিবর্তন হয়েছে, এবার ভাগে ধান কাটেনি তারা।

প্রতি কাঠা ১০০০/১৩০০ টাকায় কেটেছে ধান। কেউ কেউ নগদ ৫০০ টাকা মজুরি, সাথে খাবার ফ্রি দিয়ে কাটিয়েছে ধান। কেউ কেউ জমির অর্ধেক বেপারীকে দিয়ে দিয়েছে এই কারণে যে কিছুটা ধান হলেও যেন ঘরে আসে।

সবশেষে ডুবে গেছে পাকা ধানের জমি। যতটুকু ধান মিলেছে, বৃষ্টির জন্য ধান শুকনো যাচ্ছে না কিন্তু ধান কাটার বেপারীকে টাকা দিতে হচ্ছে এখনই! কৃষক টাকা কোথায় পাবে এখন? ঘরে ধান নেই, ধানের দাম ৪৫০টাকা। ধান কেনার ব্যাপারীদেরও ঘাটতি, যারা আছে তারাও কৃষককে আবার চাপে রাখছে!

Haor 2যারা ধান কিনে তারা ধানের দাম নির্ধারণ করে দুই ভাবে। কাঠার মাপ মানে হচ্ছে আধুনিক ওজনের মেশিন যেখানে সঠিক মাপে ধান দিবে কৃষক, কিন্তু ধানের দাম প্রতি মণে ৩০/৪০ টাকা কমে যাবে! আবার ধানের বেপারীর লোক যদি ধান নিজ হাতে মেপে নেয় তবে ধানের দাম থাকবে ৪৫০ টাকা! কারণ মাপের সময় প্রতি মনে ৬/৮ কেজি ধান কৃষকের চোখের সামনে বেপারী বেশী  নিচ্ছে!  কৃষকের  নিরুপায় জীবনে সবাই শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়!

এদিকে দাদন ব্যবসায়ী দরজায় টাকার জন্য প্রতিদিন! প্রতিবছর টাকা দাদন ফেরৎ না দিতে পেরে ছোট ছোট কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন।
সরকার যে ধানের দাম নির্ধারণ করে সেটা গ্রামের কৃষকের নাগালের বাইরেই থেকে যায় ভাটি অঞ্চলে!
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে কৃষিতে বা নিত্য জীবন যাপনে যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে সে বেপারে কৃষকের কোন ধারণাই নেই। বছরের পর বছর কৃষক যে ফসল ফলায় সেখানে বন্ধ্যা বীজ এবং কীটনাশকের প্রভাব যতটা পড়েছে তার ছিটেফোঁটাও নেই কৃষির আধুনিকায়নে!

অথচ কৃষিকে উৎসাহিত করতে সরকারীভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
প্রতিটি গ্রামে কৃষক সমিতি গঠন করে কৃষি সম্পর্কে সকল তথ্য- উপাত্ত সহ সকল সুবিধা সমূহ কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। কৃষি কাজের সময় ভাটি অঞ্চলে মজুরি নির্ধারণ করে শ্রমিক পাঠানো যায় কৃষক সমিতির সহযোগিতায়। আমাদের নদী গুলো খননের ব্যবস্থা করে বাঁধগুলো জোরদার করা যায়। কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা যায়।
কৃষিকে ত্বরান্বিত করতে ধানের চাড়া রোপনের মেশিন, ধান কাটার মেশিন, ধান মাড়াইয়ের মেশিন দেয়া যায় কৃষককে। মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে কৃষি কাজ যেমন সম্ভব হবে তেমনি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে।
পরিবারের জমি হিসেব করে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা যায় সরকারিভাবে।

পাশাপাশি গ্রামের দাদন ব্যবসায়ীদের ব্যাপারেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সেই সাথে সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থাগুলোকে বাধ্য করা যায় কৃষককে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্য।
প্রতিটি গ্রামে কৃষি উৎসাহিত করনে কৃষক সমিতির মাধ্যমে  জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কৃষি সম্পর্কে ধারণা দেয়া যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে কৃষককে জানানো যায়।
কৃষিতে কীটনাশক ব্যবহারের ঝুঁকি, বন্ধ্যা বীজ ব্যবহারের ফলে আমাদের নিজস্ব সকল বীজ বিলুপ্তির পথে। এই সকল নেতিবাচক বিষয়গুলো কৃষক  অবগত করে দেশী বীজ সংরক্ষণে তাদের উৎসাহিত করা যায়।
আরেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। তিন মাসের মধ্যে কৃষি ফলন নিশ্চিত করে অকাল বন্যার হাত থেকে কৃষক এর ফলনকে বাঁচিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারীভাবেই।

সঠিক ব্যবস্থাপনার পরও কৃষকের ফসল ডুবে গেলে কৃষি ঋণ মওকুফ করে কৃষককে পরবর্তী বছর কৃষি কাজে আবার উৎসাহিত করে তুলতে হবে। সেই সাথে ডুবে যাওয়া ফসল কাটার আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের সুযোগ তৈরী করা যায়।

কৃষকের ধান কেনার জন্য ফসল উঠার  সাথে সাথেই সরকারীভাবে প্রতিটি গ্রামের কৃষক সমিতিকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এভাবে  গ্রামের মধ্যস্বত্ব ভোগীদের বর্জন করা সম্ভব।
প্রতি মাসে সকল কৃষি সমিতির সাথে কৃষি কর্মকর্তাদের বৈঠকের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতি বৈঠকে কৃষকের ইতিবাচক- নেতিবাচক সমস্যা এবং করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

সরকারের এলাকা ভিত্তিক  নির্বাচিত প্রতিনিধিকে আরও অনেক বেশী দায়িত্বশীল করে তুলতে হবে। ভাটি অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর ধান ডুবে গেলেও নির্বাচিত প্রতিনিধিকে  কৃষকের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় না কখনও।

দেশে খাদ্য নিরাপত্তা প্রদানে কৃষককে সরকারীভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নয়তো কৃষি প্ৰধান দেশ একদিন সম্পূর্ণ আমদানি-নির্ভর দেশ হিসেবে পরনির্ভরশীল হয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।