দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফসলহারা সুনামগঞ্জের মানুষের দুর্যোগ কমাতে নাকি বাড়াতে এসেছিলেন সেটিই এখন জেলাবাসীর মুখ্য প্রশ্ন হয়ে সামনে এসেছে। বুধবার বিকালে তিনি যেন মূর্তিমান এক দুর্যোগে পরিণত হয়ে দুর্যোগকবলিত জেলাবাসীর সাথে মশকরা করার আনন্দে লিপ্ত হয়েছিলেন। একদিকে জেলার সর্বস্বহারানো মানুষের দুর্ভোগ-যন্ত্রণাকে হালকা করে দেখা অন্যদিকে যারা এই ফসলহানি ও এর পিছনের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও আন্দোলন করছিলেন তাদের প্রতি তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তিনি আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে প্রজাতন্ত্রের একজন সর্বোচ্চ পদধারী কর্মচারী হয়ে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে এসেছিলেন তিনি বুধবার সুনামগঞ্জে। বিকেলে জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে এক সভায় তিনি দুর্গত এলাকা ঘোষণা প্রসঙ্গে আইনের যে অপব্যাখ্যা দিয়েছেন তা এরকমÑ তিনি বলছেন (সংবাদভাষ্য অনুযায়ী), ‘দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নামে একটি আইন আছে। এই আইনের ২২ ধারায় বলা হয়েছে কোন এলাকার অর্ধেকের উপর জনসংখ্যা মরে যাওয়ার পর ওই এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হয়’। বর্ণিত আইনের ২২ ধারা আমরা তন্নতন্ন করে খুঁজেও সচিবের এমন শর্তের উল্লেখ পাইনি। বরং ওই ধারায় রাষ্ট্রপতির ‘স্বীয় বিবেচনাবোধ’ কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ সচিব সভায় কটাক্ষ করে দুর্গত এলাকা ঘোষণার জন্য যারা দাবি তুলছেন তাদের জ্ঞান ও দেশপ্রেম নেই বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘কিসের দুর্গত এলাকা। একটি ছাগলও তো মারা যায় নি’। সচিবের এইসব কথা শোনার পর মনে হচ্ছে তিনি সুনামগঞ্জে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে আসেন নি। এসেছেন সরকারকে বিব্রত করতে। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী যেখানে হাওর অঞ্চলের ভয়াবহ ফসল হানির বিষয়টি স্বীকার করে ব্যাপক পুনর্বাসন কর্মসূচী গ্রহণের কথা বলেছেন তখন সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমন বালখিল্যসুলভ কথা বলেন কীভাবে?
কৃষকদের পক্ষে আন্দোলনকারীদের নিয়ে ওই সভায় কটাক্ষ করা হয়েছে বলে সংবাদ সূত্রে জানা যায়। সরকারি হিসাবে জেলার ৮২ শতাংশ বোরো ফসল হানির তথ্য দেয়া হয়েছে। বেসরকারি হিসাবে এই ক্ষতির পরিমাণ ৯০ শতাংশের উপর। ফসল হানির জের পড়েছে গবাদিপশুর উপর। এখন পানি দূষিত হয়ে মরে যাচ্ছে মিঠা পানির মাছ। নানা ধরনের রোগ-বালাইর আশংকা করা হচ্ছে। কার্যত জেলার মূল জীবিকাগুলো এখন বিধ্বস্থ হয়ে গেছে। এরকম অবস্থাকে দুর্গত এলাকা বলতে না পারলে দুর্গত হতে হলে আর কী ভয়ানক অবস্থা দাঁড় করাতে হবে সামনে এনে ? সচিবের কথা মতো অর্ধেক মানুষকে মরে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে সুনামগঞ্জ দুর্গত হয়েছে ?
যারা সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি করছেন বা যারা এ নিয়ে আন্দোলন করছেন তারা কি জেলার কৃষকদের স্বার্থ হানিকর কোন কাজে লিপ্ত যে ব্যক্তিবিশেষকে তাদের বিরুদ্ধে এবাবে খেপে যেতে হবে? নাকি এই খেপার পিছনে আর কোন কারণ রয়েছে? হাওরের বাঁধ নির্মাণে এবার ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই গণমাধ্যম ও বিভিন্ন মহল সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। যারা আজ গণমাধ্যম ও কৃষকদের পক্ষে আন্দোলনরত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিষোদগারে লিপ্ত রয়েছেন তাদেরকে এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে।
দুর্যোগ সচিবের জেলাবাসীর প্রতি করুণ উপহাস ও বক্রোক্তি এবং সংশ্লিষ্ট আইনের অপব্যাখ্যা হাজির করার বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচিত হোক এই আমাদের কামনা। জনগণের এক সেবক এমন ভাবে মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্ট নিয়ে মশকরা করতে পারেন তা আমাদের চিন্তার বাইরে।
সংবাদ শিরোনাম :
শিক্ষকতাকে প্রথম শ্রেণির পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিত হবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ
কাতার-সৌদি-মরক্কো থেকে ৫৮২ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
বিশ্বজুড়ে ২০২৫-এর আগমনকে উৎসব-উদযাপনে বরণ
পরিবার পাত্র খুঁজছে, মনের মতো পেলে বিয়ে করব: বাঁধন
সাত দেশ থেকে ১৪ লাখ ২৫ হাজার টন জ্বালানি তেল কিনছে সরকার
দীর্ঘদিনের প্রেমিকাকে বিয়ে করলেন আরমান মালিক
নারীর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে পুরুষ ভোটার
শ্বাসরুদ্ধকর সংগ্রামের গল্প নিয়ে আসছেন মোশাররফ–পার্নো
রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কে আ.লীগের অপকর্ম নিচে পড়ে যাচ্ছে: মির্জা ফখরুল
মুন্নী সাহা ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করবে দুদক
দুর্যোগ সচিবের আইনজ্ঞান ও অজ্ঞ জনগোষ্ঠী
- বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্ক
- আপডেট টাইম : ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০১৭
- 456
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ