ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কর্মক্ষেত্রে আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চায় আইএলও

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  দেশে কর্মক্ষেত্রে আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের পক্ষে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। আইএলও মনে করছে, সংস্থাটির নীতিমালা অনুযায়ী একটি মানদণ্ড তৈরি ও এর আলোকে আহত বা কর্মক্ষমতা হারানো শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে বীমার আওতায় আনা প্রয়োজন। এ জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি তহবিল গঠন করে শুরুতে গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের জন্য এটি বাস্তবায়ন করা যায়। এক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দিতে প্রস্তুত সংস্থাটি।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে, কর্মক্ষেত্রে আহত শ্রমিকদের ভবিষ্যত আয়ের ক্ষতি বা আহত হওয়ার ধরণ বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে একটি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে আইএলও। এক্ষেত্রে আইএলও কনভেনশনের ১২১ ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের মানদণ্ডকে বিবেচনায় নেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণের অর্থ সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিককেই বহন করতে হবে। ইতিমধ্যে ইস্যুটি নিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আইএলও’র আলোচনা হয়েছে। এ জন্য শ্রম আইনের সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।
তবে এটি আইনগত বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনার পক্ষে নন মালিকপক্ষ। কেননা শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে রপ্তানি মূল্যের (এফওবি) উপর শূন্য দশমিক শূন্য তিন (০.০৩%) শতাংশ হারে অর্থ প্রদান করছেন তারা। আহত শ্রমিকদের জন্য বাড়তি অর্থ পরিশোধের প্রশ্নে রাজি হবেন না তারা।
সেক্ষেত্রে এ জন্য অর্থের সংকুলান কোথা থেকে হবে – তা নিয়ে চিন্তিত সরকারও। কেননা এটি যদি আইএলও’র মানদণ্ড অনুযায়ী করতে হয়, সেক্ষেত্রে অনেক টাকার প্রয়োজন হতে পারে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ইস্যুটি নিয়ে আইএলও আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু টাকা আসবে কোথা থেকে? ইতিমধ্যে মালিকপক্ষ রপ্তানিমূল্যের উপর একটি অর্থ পরিশোধ করছে। তাদের কাছ থেকে আবার কি চাওয়া যাবে?
দেশে বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এক লাখ টাকা। আর আহতদের ক্ষেত্রে কর্মক্ষমতা হারালে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ সোয়া লাখ টাকা। এছাড়া সরকার গঠিত নতুন শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে নিহত ও কর্মক্ষমতা হারানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু শ্রমিক নেতারা বলছেন, এ অর্থ খুবই অপ্রতুল। একজন শ্রমিক সারা জীবন কত টাকা আয় করতেন, আহত হওয়ার পর তার দু:খ-যন্ত্রণা ভোগসহ অন্যান্য ক্ষতি হিসাব কলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহি পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সরকারের অঙ্গীকার ছিল নিহত বা আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের আইএলও’র নীতিমালাকে সামনে রেখে ক্ষতিপূরণের একটি মানদণ্ড নির্ধারণের। কিন্তু তা আজো হয় নি। আমরা চাই আইএলও’র নীতিমালা ও জাতীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হোক। এ জন্য সামাজিক বীমা কর্মসূচী ঠিক করে গার্মেন্টসসহ সব খাতের শ্রমিকদের ওই তহবিলের আওতায় আনতে হবে।
আইএলও’র উদ্যোগটি নিয়ে সমপ্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সংস্থাটির আইন বিশেষজ্ঞ হিরোশি ইয়ামাবানা ও ডগলাস স্ট্যানলি। তারা জানান, বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রম আইনে আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত নয়। আবার মালিকপক্ষ যদি অসমর্থ কিংবা দেউলিয়া হয়ে যায়, সেক্ষেত্রেও শ্রমিকরা বঞ্চিত হন। এ জন্য আহতদের জন্য ক্ষতিপূরনের একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা এবং তা প্রদানের লক্ষ্যে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন ও শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনা যেতে পারে। এ জন্য আইএলও কারিগরি সহায়তা কর্মসূচী শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইএলও’র এ কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে আহতের সংখ্যা, আহতের ধরণ, কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হতে পারে, কারা অর্থ দেবে বা কারা প্রাপ্য হবে – এসব বিষয়ে কাজ করা হবে। শ্রম সচিব মিকাইল শিপার বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, এ জন্য শ্রম আইনের সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। আমরা ভাবছি, বিদ্যমান শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের অর্থে আহতদের বীমার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা যায় কিনা। এ বিষয়ে আইএলওকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

কর্মক্ষেত্রে আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চায় আইএলও

আপডেট টাইম : ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০১৭
বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  দেশে কর্মক্ষেত্রে আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের পক্ষে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। আইএলও মনে করছে, সংস্থাটির নীতিমালা অনুযায়ী একটি মানদণ্ড তৈরি ও এর আলোকে আহত বা কর্মক্ষমতা হারানো শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে বীমার আওতায় আনা প্রয়োজন। এ জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি তহবিল গঠন করে শুরুতে গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের জন্য এটি বাস্তবায়ন করা যায়। এক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দিতে প্রস্তুত সংস্থাটি।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে, কর্মক্ষেত্রে আহত শ্রমিকদের ভবিষ্যত আয়ের ক্ষতি বা আহত হওয়ার ধরণ বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে একটি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে আইএলও। এক্ষেত্রে আইএলও কনভেনশনের ১২১ ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের মানদণ্ডকে বিবেচনায় নেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণের অর্থ সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিককেই বহন করতে হবে। ইতিমধ্যে ইস্যুটি নিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আইএলও’র আলোচনা হয়েছে। এ জন্য শ্রম আইনের সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।
তবে এটি আইনগত বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনার পক্ষে নন মালিকপক্ষ। কেননা শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে রপ্তানি মূল্যের (এফওবি) উপর শূন্য দশমিক শূন্য তিন (০.০৩%) শতাংশ হারে অর্থ প্রদান করছেন তারা। আহত শ্রমিকদের জন্য বাড়তি অর্থ পরিশোধের প্রশ্নে রাজি হবেন না তারা।
সেক্ষেত্রে এ জন্য অর্থের সংকুলান কোথা থেকে হবে – তা নিয়ে চিন্তিত সরকারও। কেননা এটি যদি আইএলও’র মানদণ্ড অনুযায়ী করতে হয়, সেক্ষেত্রে অনেক টাকার প্রয়োজন হতে পারে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ইস্যুটি নিয়ে আইএলও আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু টাকা আসবে কোথা থেকে? ইতিমধ্যে মালিকপক্ষ রপ্তানিমূল্যের উপর একটি অর্থ পরিশোধ করছে। তাদের কাছ থেকে আবার কি চাওয়া যাবে?
দেশে বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এক লাখ টাকা। আর আহতদের ক্ষেত্রে কর্মক্ষমতা হারালে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ সোয়া লাখ টাকা। এছাড়া সরকার গঠিত নতুন শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে নিহত ও কর্মক্ষমতা হারানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু শ্রমিক নেতারা বলছেন, এ অর্থ খুবই অপ্রতুল। একজন শ্রমিক সারা জীবন কত টাকা আয় করতেন, আহত হওয়ার পর তার দু:খ-যন্ত্রণা ভোগসহ অন্যান্য ক্ষতি হিসাব কলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহি পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সরকারের অঙ্গীকার ছিল নিহত বা আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের আইএলও’র নীতিমালাকে সামনে রেখে ক্ষতিপূরণের একটি মানদণ্ড নির্ধারণের। কিন্তু তা আজো হয় নি। আমরা চাই আইএলও’র নীতিমালা ও জাতীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হোক। এ জন্য সামাজিক বীমা কর্মসূচী ঠিক করে গার্মেন্টসসহ সব খাতের শ্রমিকদের ওই তহবিলের আওতায় আনতে হবে।
আইএলও’র উদ্যোগটি নিয়ে সমপ্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সংস্থাটির আইন বিশেষজ্ঞ হিরোশি ইয়ামাবানা ও ডগলাস স্ট্যানলি। তারা জানান, বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রম আইনে আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত নয়। আবার মালিকপক্ষ যদি অসমর্থ কিংবা দেউলিয়া হয়ে যায়, সেক্ষেত্রেও শ্রমিকরা বঞ্চিত হন। এ জন্য আহতদের জন্য ক্ষতিপূরনের একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা এবং তা প্রদানের লক্ষ্যে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন ও শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনা যেতে পারে। এ জন্য আইএলও কারিগরি সহায়তা কর্মসূচী শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইএলও’র এ কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে আহতের সংখ্যা, আহতের ধরণ, কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হতে পারে, কারা অর্থ দেবে বা কারা প্রাপ্য হবে – এসব বিষয়ে কাজ করা হবে। শ্রম সচিব মিকাইল শিপার বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, এ জন্য শ্রম আইনের সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। আমরা ভাবছি, বিদ্যমান শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের অর্থে আহতদের বীমার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা যায় কিনা। এ বিষয়ে আইএলওকে কাজ করতে বলা হয়েছে।