ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্যাস ছাড়াই শিল্প, আছে বিদ্যুতের যন্ত্রণাও

কুষ্টিয়া কারখানা চালাতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে বিআরবি গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান শুরুতেই বললেন গ্যাস না থাকার কথা। তাঁর দাবি, গ্যাস না থাকায় লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় ডিজেল অথবা ফার্নেস অয়েল দিয়ে কারখানা চালাতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়ার সঙ্গে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ সুবিধাজনক। ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব খুব বেশি নয়। এ জেলার পাশের জেলা যশোরে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল অবস্থিত। কুষ্টিয়ার সঙ্গে রেল, নৌ, সড়কপথে ভালো যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে। এসব কারণে শিল্পকারখানার জন্য এ জেলা উপযোগী বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গ্যাস না থাকায় এ সম্ভাবনা অধরাই থাকছে।

গ্যাস না থাকার পরও কুষ্টিয়ায় বেশ কিছু শিল্প গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিআরবি কেবলের কারখানা ছাড়াও রয়েছে দুটি বড় কোম্পানির তামাক কারখানা, একটি মাছের খাবার উৎপাদনের মিল, সরকারি একটি চিনিকল, ৩৩টি বড় চালকল, প্রায় ৪০০ চালকল ও চাতাল, তুলার মিল ইত্যাদি কারখানা রয়েছে কুষ্টিয়ায়। কুমারখালীর তাঁতশিল্প থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিছানার চাদর, গামছা, লুঙ্গি ইত্যাদি সরবরাহ হয়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বৃহৎ শিল্প ১৯টি, মাঝারি শিল্প ৪১টি, ক্ষুদ্র শিল্পের সংখ্যা ৪ হাজার ১১৪ ও কুটির শিল্পের সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। ১৮৬০ সালে কুষ্টিয়ার সঙ্গে কলকাতার সরাসরি রেললাইন স্থাপিত হয়। তখন জেলাটিকে শিল্পকারখানার জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে গণ্য করা হতো। ১৮৯৬ সালে সেখানে যজ্ঞেশ্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, ১৯০৪ সালে রেনউইক অ্যান্ড যজ্ঞেশ্বর কোম্পানি এবং ১৯১৯ সালে মোহিনী মিল প্রতিষ্ঠিত হয়।

কুষ্টিয়ায় বিসিক শিল্পনগর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে। সেখানে মোট ১৮ দশমিক ৪৯ একর জমিতে প্লটের সংখ্যা ৮৬। এসব প্লটের একটিও খালি নেই। বিসিক সেখানে নতুন কোনো শিল্পনগর করার পরিকল্পনায় নেই। তবে ভেড়ামারা উপজেলায় প্রায় ৪০০ একর জমিতে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। ভারতীয় ঋণে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠা করে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জমি বরাদ্দ দেওয়ার কথা রয়েছে।

শিল্পকারখানা করার জন্য জেলাটি কেন সুবিধাজনক জানতে চাইলে কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে কুষ্টিয়ার যোগাযোগ সহজ। বেনাপোল স্থলবন্দর ও মোংলা বন্দর কুষ্টিয়া থেকে কাছে। জেলায় খুব কম খরচে শ্রমিক পাওয়া যায়, যাঁরা খুব সহজেই শিখে নিতে পারেন। এখানকার শ্রমিকেরা শান্ত, কখনো জেলায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি। জেলার দৌলতপুর উপজেলায় একটি স্থলবন্দর হলে কলকাতার সঙ্গে দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার কমে যাবে। মোংলা বন্দরের সঙ্গেও কুষ্টিয়ার যোগাযোগ সহজ। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে কুষ্টিয়ায় শিল্পকারখানা করার জন্য উপযোগী। এখন দরকার শুধু গ্যাস। ইতিমধ্যে গ্যাসের পাইপলাইন হয়েছে। শিগগিরই গ্যাস সমস্যারও সমাধান হচ্ছে।

বিদ্যুৎ সমস্যা বিষয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বিদ্যুতের পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে লোডশেডিং আছে।

কুষ্টিয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার হিসাবে সেখানে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে। পাওয়া যায় ৭০ মেগাওয়াট। জেলার খাজানগর এলাকার চাতালমালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, চাতালগুলো সাধারণত রাতে চলে। রাতেও কয়েক দফা লোডশেডিং হয়। এতে গড়ে তিন ঘণ্টা কাজ বন্ধ রাখতে হয়।

বিআরবি গ্রুপের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মনে করেন, গ্যাস এলে কুষ্টিয়ায় বিনিয়োগ বাড়বে। তখন সবাই সেখানে গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠায় নজর দেবেন। তিনি নিজেও গ্যাসভিত্তিক কারখানা করার চিন্তা আছে বলে উল্লেখ করেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

গ্যাস ছাড়াই শিল্প, আছে বিদ্যুতের যন্ত্রণাও

আপডেট টাইম : ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০১৭

কুষ্টিয়া কারখানা চালাতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে বিআরবি গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান শুরুতেই বললেন গ্যাস না থাকার কথা। তাঁর দাবি, গ্যাস না থাকায় লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় ডিজেল অথবা ফার্নেস অয়েল দিয়ে কারখানা চালাতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়ার সঙ্গে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ সুবিধাজনক। ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব খুব বেশি নয়। এ জেলার পাশের জেলা যশোরে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল অবস্থিত। কুষ্টিয়ার সঙ্গে রেল, নৌ, সড়কপথে ভালো যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে। এসব কারণে শিল্পকারখানার জন্য এ জেলা উপযোগী বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গ্যাস না থাকায় এ সম্ভাবনা অধরাই থাকছে।

গ্যাস না থাকার পরও কুষ্টিয়ায় বেশ কিছু শিল্প গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিআরবি কেবলের কারখানা ছাড়াও রয়েছে দুটি বড় কোম্পানির তামাক কারখানা, একটি মাছের খাবার উৎপাদনের মিল, সরকারি একটি চিনিকল, ৩৩টি বড় চালকল, প্রায় ৪০০ চালকল ও চাতাল, তুলার মিল ইত্যাদি কারখানা রয়েছে কুষ্টিয়ায়। কুমারখালীর তাঁতশিল্প থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিছানার চাদর, গামছা, লুঙ্গি ইত্যাদি সরবরাহ হয়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বৃহৎ শিল্প ১৯টি, মাঝারি শিল্প ৪১টি, ক্ষুদ্র শিল্পের সংখ্যা ৪ হাজার ১১৪ ও কুটির শিল্পের সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। ১৮৬০ সালে কুষ্টিয়ার সঙ্গে কলকাতার সরাসরি রেললাইন স্থাপিত হয়। তখন জেলাটিকে শিল্পকারখানার জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে গণ্য করা হতো। ১৮৯৬ সালে সেখানে যজ্ঞেশ্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, ১৯০৪ সালে রেনউইক অ্যান্ড যজ্ঞেশ্বর কোম্পানি এবং ১৯১৯ সালে মোহিনী মিল প্রতিষ্ঠিত হয়।

কুষ্টিয়ায় বিসিক শিল্পনগর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে। সেখানে মোট ১৮ দশমিক ৪৯ একর জমিতে প্লটের সংখ্যা ৮৬। এসব প্লটের একটিও খালি নেই। বিসিক সেখানে নতুন কোনো শিল্পনগর করার পরিকল্পনায় নেই। তবে ভেড়ামারা উপজেলায় প্রায় ৪০০ একর জমিতে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। ভারতীয় ঋণে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠা করে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জমি বরাদ্দ দেওয়ার কথা রয়েছে।

শিল্পকারখানা করার জন্য জেলাটি কেন সুবিধাজনক জানতে চাইলে কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে কুষ্টিয়ার যোগাযোগ সহজ। বেনাপোল স্থলবন্দর ও মোংলা বন্দর কুষ্টিয়া থেকে কাছে। জেলায় খুব কম খরচে শ্রমিক পাওয়া যায়, যাঁরা খুব সহজেই শিখে নিতে পারেন। এখানকার শ্রমিকেরা শান্ত, কখনো জেলায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি। জেলার দৌলতপুর উপজেলায় একটি স্থলবন্দর হলে কলকাতার সঙ্গে দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার কমে যাবে। মোংলা বন্দরের সঙ্গেও কুষ্টিয়ার যোগাযোগ সহজ। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে কুষ্টিয়ায় শিল্পকারখানা করার জন্য উপযোগী। এখন দরকার শুধু গ্যাস। ইতিমধ্যে গ্যাসের পাইপলাইন হয়েছে। শিগগিরই গ্যাস সমস্যারও সমাধান হচ্ছে।

বিদ্যুৎ সমস্যা বিষয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বিদ্যুতের পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে লোডশেডিং আছে।

কুষ্টিয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার হিসাবে সেখানে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে। পাওয়া যায় ৭০ মেগাওয়াট। জেলার খাজানগর এলাকার চাতালমালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, চাতালগুলো সাধারণত রাতে চলে। রাতেও কয়েক দফা লোডশেডিং হয়। এতে গড়ে তিন ঘণ্টা কাজ বন্ধ রাখতে হয়।

বিআরবি গ্রুপের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মনে করেন, গ্যাস এলে কুষ্টিয়ায় বিনিয়োগ বাড়বে। তখন সবাই সেখানে গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠায় নজর দেবেন। তিনি নিজেও গ্যাসভিত্তিক কারখানা করার চিন্তা আছে বলে উল্লেখ করেন।