বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চালের বাজারে স্থির হয়ে আসছিল। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশজুড়ে আবারো অশান্তভাবে বেড়েছে চালের দাম। খুচরা বাজার এবং ছোট পাইকারি দোকানে ৫০ কেজি ওজনের বস্তাপ্রতি চালের দাম ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এজন্য তারা আমদানি কমে যাওয়ার অজুহাত দিলেও আমদানিকারক এবং বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, আমদানি আগের মতোই আছে, চালের দাম বাড়ছে মূলত খুচরা ব্যবসায়ী এবং ছোট পাইকারি ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা লাভের অসৎ মানসিকতার কারণে। এর আগে মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও ৫০ কেজি ওজনের বস্তাপ্রতি চালের দাম আরেক দফায় ৫০-১০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফলে ২ সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ কেজি ওজনের বস্তাপ্রতি চালের দাম বাড়ল ১০০-২০০ টাকা।
গতকাল (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কয়েকটি ছোট পাইকারি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ কেজি ওজনের মোটা আতপ চাল বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪৮০-১৫২০ টাকা, বেতি-২৯ বিক্রি হচ্ছে ১৯০০-২০০০, বেতি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ২০০০-২১০০, মিনিকেট ২৪৮০-২৫২০, কাটারি পাইজাম ২৬০০-২৭০০, কাটারি ভোগ ৩০০০-৩২০০, মোটা সিদ্ধ ১৭০০-১৮০০, বালাম সিদ্ধ ১৯০০-২০০০, পারি সিদ্ধ ২২২০-২৩০০, মিনিকেট সিদ্ধ ১৯০০-২০০০, জিরা সিদ্ধ ২৭০০-২৯০০, চিনিগুড়া আতপ ৩৫০০-৪০০০, নাজিরশাইল ২৮০০-৩০০০, বার্মা বেতি ১৬০০-১৬৫০, বার্মা মোটা ১৫৬০-১৬০০, পাকিস্তান বেতি ১৯০০-২০০০, ইন্ডিয়ান বেতি ১৭৫০- ১৮০০ ও থাইল্যান্ড বেতি ২০৫০-২১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা এক সপ্তাহ আগেও প্রকারভেদে ৫০-১০০ টাকায় কম দামে বিক্রি হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জভিত্তিক বিএসএম গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বলেন, চালের আমদানি কমে গেছে এটা মোটেও সত্যি নয়। আমরাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত বড় গ্রুপ স্বাভাবিক নিয়মে চাল আমদানি করছি। সাধারণ ভোক্তা শ্রেণী আসলে ধরা খাচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে। সরকার যতদিন খুচরা ব্যবসায়ীদের কঠোর মনিটরিং এর আওতায় আনতে পারবে না ততদিন ক্রেতাদের এভাবে মূল্য দিয়েই যেতে হবে।
জেলা কার্যালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক কিছুদিন পর পর শুধু পাইকারি দোকান ও আমদানিকারকদের গোডাউনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সুফল পাওয়া যাবে না।
চালের বাজারে ধারাবাহিক অনুসন্ধান করে দেখা যায়, আমদানিকারকদের কাছ থেকে চাল ক্রেতাদের হাতে পৌঁছাতে মোট চারটি হাত বদল হয়। এর প্রথম দুই ধাপে চালের দাম খুব একটা না বাড়লেও শেষ দুই ধাপে এসে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যায়।
আমদানিকারকরা বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আনার পর কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা থেকে ৭৫ পয়সা লাভে বড় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ছেড়ে দেয়। বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে ১০০ টন থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টন পর্যন্ত চাল কিনে নিয়ে সর্বোচ্চ ১ টাকা পর্যন্ত লাভে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছোট পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেয়। এসব ছোট পাইকারি ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ১৫-২০ টন পর্যন্ত চাল কিনে। প্রথম দুই ধাপে চালের দাম খুব একটা না বাড়লেও ছোট পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাত থেকে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়া শুরু করে।
তারা কেজি প্রতি ২-৫ টাকা পর্যন্ত লাভে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে চাল বিক্রি করে। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজিপ্রতি ৫-৮ টাকা লাভে ক্রেতাদের হাতে চাল গছিয়ে দেয়। ফলে দেখা যায়, আমদানিকারকদের হাতে যে চালের দাম ৩২-৩৫ টাকা থাকে তা ক্রেতা সাধারণের হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দাম গিয়ে ঠেকে ৫২-৫৫ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর একজন খুচরা বিক্রেতা বড় অংকের লাভের কথা অস্বীকার করলেও বলেন, আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে শত শত ও হাজার টন চাল বিক্রি করে বলে তাদের লাভের মাত্রা কম হলেও চলে। কিন্তু আমরা পুরো সপ্তাহ এমনকি পুরো মাস মিলে মাত্র কয়েক বস্তা চাল বিক্রি করি। এতে আমাদের অনেক চাল পোকামাকড়ে খেয়ে ফেলে ও নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমাদের একটু বেশি লাভে বিক্রি না করলে চলে না।
ভোক্তা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর একজন কর্মকর্তা তিনি খুচরা বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, দেশীয় এবং বৈশ্বিক উভয় কারণে চালের দাম এমনিতেই বাড়ন্ত, তার উপর যদি খুচরা বিক্রেতারা এমন করে তাহলে তো গরিবের বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে পড়বে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো যেকোন উপায়ে খুচরা বাজার সরকার এবং জেলা প্রশাসনের নিয়মিত তদারকির আওতায় নিয়ে আসা।