বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পাবনার চাটমোহরের উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের অমৃতকুণ্ডা গ্রামের মৃত দুলাল চন্দ্র দাসের ছেলে শংকর চন্দ্র দাস। দুই বছর যাবত বেতের তৈরি হস্তশিল্প জাত দ্রব্যাদি তৈরি করে বিক্রি করে আসছেন। তার বাপ-দাদা এ ব্যবসা করতো বলে জানান তিনি। শংকর মূলগ্রাম ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়া লেখা করেছেন। শংকর জানান, আমি নিজে বেতের কাজ করি। মা বেত চাছে, আমি ফাটাই। বেতগুলো শ্রমিকদের কাজের উপযোগী করে দেই।
আমি, আমার মাসহ আরও ১০জন শ্রমিক কাজ করেন। তারা বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত দ্রব্যাদি তৈরি করেন। মূলগ্রাম হাটে কখনো যৎসামান্য বেত ওঠে। এলাকায় বেত পাওয়া যায় না। রাজবাড়ি জেলার পাংসা উপজেলা থেকে বেত কিনি। আকার ভেদে ৮০ পিস (১ পন) বেতের দাম পরে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। এক একটি বেতের দাম পরে ১৩ টাকা থেকে ২৫ টাকা। এছাড়া যানবাহন ভাড়া ও লাগে। আমি সেগুলি ঢাকার ফার্মগেট এলাকার সান ট্রে অফিসে সরবরাহ করি। সেখান থেকে এ মালামালগুলো চীন জাপান আমেরিকা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যায়।
গোল লন্ড্রি বাসকেট ২ হাজার ৬০০ টাকা, থালা সেট ৪৫০ টাকা, রাউন্ড ট্রে সেট ৭০০ টাকা, ফুট কাপ প্রতি পিস ১৫০ টাকা, ডিম ঝুঁড়ি প্রতি পিস ৮০০ টাকা, গোল চাকা সেট ৬৫০ টাকা, স্কয়ার বক্স বাস্কেট সেট ৩ হাজার টাকা, ওভাল ট্রে সেট ৩ হাজার টাকা, স্কয়ার কিচেন সেট ১ হাজার ২০০ টাকা, গোল চারী প্রতি পিস ২৫০ টাকা, ক্যান বল সেট ৮৫০ টাকা, ডাব্বু সেট ৬০০ টাকা, গোল স্যালেন্ডার সেট ৯০০ টাকা ও পাল্লা সেট ৫০০ টাকায় বিক্রি করি। এটি আমার পৈত্রিক পেশা হলেও মাঝখানে বেত না পাওয়ায় কয়েক বছর বেতের কাজ করতে পারিনি। ৫ শতাংশ বাড়ি ছাড়া মাঠে কোন জমা জমি নাই।
আমরা স্বামী স্ত্রী, মা, দুই বাচ্চাসহ ৫জনের পরিবার বেত শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তিনি আক্ষেপ করে জানান চাটমোহরে পরিবেশ বান্ধব বেত শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। বেত ফার্নিচার শ্রমিক চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কার্তিক কুমার দাস জানান, পনেরো বছর যাবত বেতের কাজ করে আসছেন তিনি। জমা জমি বা আয়ের অন্য কোন উৎস নেই তার। পনেরো বিশ দিন পর পর বাড়ি যান। দু-চারদিন থেকে ফের ছুটে আসেন চাটমোহরে। বেতের কাজ করতে। চুক্তিতে কাজ করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন। এ টাকায় চলে ৬ সদস্যের পরিবারের ভরণ পোষণ।
অপর বেত ফার্নিচার শ্রমিক আলমডাঙ্গার জামজামি গ্রামের সুনীল দাস জানান, ৩৫ বছর যাবত বেত শিল্পের কাজ করে আসছেন। এ কারখানায় কাজ করেন ২ বছর যাবত। বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রী মাঝে মধ্যেই রক্ত দিতে হয়। কয়েক শতক বাড়ি ছাড়া মাঠাল কোন সয় সম্পত্তি নাই। ছেলে বাঁশের কাজ করে কিছু আয় করে। বেসরকারি সংস্থা থেকে ৮০ হার টাকা ঋণ নেওয়া আছে। সংসার খরচ ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে দুই হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। এজন্য খাটতে হয় বেশি সময়। প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত কাজ করি। ছেলে, ছেলে বৌ, নাতিসহ পাঁচ জন কোন মতে এক অন্নে বসবাস করছি।