ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩৫ টাকার চাল ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মফস্বলের খুচরা বাজারে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া চাল ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। কৃষকরা তাদের সঠিক দাম না পেলেও ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্যে। মধ্যস্বত্বভোগীরা অতিরিক্ত মুনাফা করছে বলে জানা গেছে। তবে রাজধানীর পাইকারি বাজারে নাজিরশাইল ছাড়া সব ধরনের চালের দাম কিছুটা কমলেও এর কোনো প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। এছাড়া বর্তমানে সরকারি খাদ্যশস্যের মজুদ গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এখন সরকারি গুদামে মোট চাল ও গমের মজুদ ১১ লাখ ৫০ হাজার টন।

গত বছর এই সময়ে মজুদ ছিল ৫ লাখ ১৩ লাখ টন। তাতেও স্থিতিশীল হয়নি চালের বাজার। সরকারি মজুদ সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে গত বছর চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছিল অসাধু ব্যবসায়ীরা। চালের দাম কমাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বাজার স্থিতিশীল করতে পারে নি। বোরো ধান উঠায় দাম কমেছে পাইকারিতে, খুচরা বাজারে দাম না কমায় বোরো ধানের কোন সুবিধাই পাচ্ছে না ভোক্তারা। এখনও চালের দামে নাভিশ্বাস ভোক্তাদের। জানা গেছে, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বিআরবি ২৮ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা। পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা।

এছাড়া রাজধানীর পাইকারি বাজারে বিআরবি ২৮ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪১ টাকা। মিনিকেট কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। রাজধানীর খুচরা বাজারে বিআরবি ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫৫, মিনিকেট ৬২-৬৫, নাজিরশাইল ৭২ ও স্বর্ণা এবং পারিজা ৪৫ টাকায়। বাবুবাজারের মেসার্স দয়াময় ভান্ডারের প্রোপাইটার হাজী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, পাইকারি বাজারে নাজিরশাইল ছাড়া সব ধরনের চালের দাম কমছে। বোরো ধানের সিজন হওয়ায় এখন চালের দাম কিছুটা কম। ২৮ চাল পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৯ টাকায়।

খুচরা বাজারে এখনো চালের দাম কেন কমেনি এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই চায় বেশি মুনাফা করতে হয়ত সেজন্যই তারা কমাচ্ছে না। বাজারে দাম কমেছে বলে আমরাও কমে বিক্রি করছি। যত বেশি বিক্রি করতে পারবো ততই আমাদের লাভ। আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি না বলে তিনি জানান। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামনে চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। এর থেকে আরো দাম কমলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কৃষকদের বাঁচাতে চালের দাম আর কমানো ঠিক হবে না বলে তিনি মনে করেন। বাড্ডা বাজারে খুচরা বিক্রেতা মফিজুর রহমান বলেন, বেশি দামে চাল কিনছি বলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় কেন দাম কমেনি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাইকারিতে দাম হয়ত কমেছে এখন। কিন্তু আমাদের চাল দাম কমার আগে বেশি দামে ক্রয় করা বলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে থেকে জানা গেছে, বর্তমান সাড়ে ১১ লাখ টন মজুদের মধ্যে চাল ৮ লাখ ২১ লাখ টন এবং গম ৩ লাখ ২৯ লাখ টন। এছাড়া বন্দরে ভাসমান অবস্থায় প্রায় ৫০ হাজার টন চাল ও গম রয়েছে। যা গত বছর এই সময়ে মোট মজুদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৩ টন। এর মধ্যে চাল ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার ৮ টন ও গম ছিল এক লাখ ৯৩ হাজার ১৫ টন।

খাদ্য অধিদপ্তরের থেকে জানা গেছে, গত বছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বোরো সংগ্রহের ব্যর্থতার কারণে সরকারি মজুদ তলানিতে গিয়ে দাঁড়ায়। তাই এবার আমন সংগ্রহের সময় সতর্ক ছিল সরকার। তাই এ বছর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হয়েছে। গত ৭ মার্চ আমন সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ হয়। এই সময়ে ৬ লাখ ১ হাজার ৯৮৪ টন আমন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া গত ৮ এপ্রিল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় বোরোতে ৮ লাখ টন সিদ্ধ চাল, এক লাখ টন আতপ চাল এবং দেড় লাখ টন বোরো ধান (দেড় লাখ টন ধানে ১ লাখ টন চাল পাওয়া যাবে) সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ৩৮ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৬ টাকায় এই ধান কেনা হবে। গত ২ মে থেকে বোরো সংগ্রহ শুরু হয়েছে, আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তা চলবে বলে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

৩৫ টাকার চাল ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা

আপডেট টাইম : ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ মে ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মফস্বলের খুচরা বাজারে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া চাল ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। কৃষকরা তাদের সঠিক দাম না পেলেও ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্যে। মধ্যস্বত্বভোগীরা অতিরিক্ত মুনাফা করছে বলে জানা গেছে। তবে রাজধানীর পাইকারি বাজারে নাজিরশাইল ছাড়া সব ধরনের চালের দাম কিছুটা কমলেও এর কোনো প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। এছাড়া বর্তমানে সরকারি খাদ্যশস্যের মজুদ গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এখন সরকারি গুদামে মোট চাল ও গমের মজুদ ১১ লাখ ৫০ হাজার টন।

গত বছর এই সময়ে মজুদ ছিল ৫ লাখ ১৩ লাখ টন। তাতেও স্থিতিশীল হয়নি চালের বাজার। সরকারি মজুদ সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে গত বছর চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছিল অসাধু ব্যবসায়ীরা। চালের দাম কমাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বাজার স্থিতিশীল করতে পারে নি। বোরো ধান উঠায় দাম কমেছে পাইকারিতে, খুচরা বাজারে দাম না কমায় বোরো ধানের কোন সুবিধাই পাচ্ছে না ভোক্তারা। এখনও চালের দামে নাভিশ্বাস ভোক্তাদের। জানা গেছে, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বিআরবি ২৮ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা। পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা।

এছাড়া রাজধানীর পাইকারি বাজারে বিআরবি ২৮ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪১ টাকা। মিনিকেট কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। রাজধানীর খুচরা বাজারে বিআরবি ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫৫, মিনিকেট ৬২-৬৫, নাজিরশাইল ৭২ ও স্বর্ণা এবং পারিজা ৪৫ টাকায়। বাবুবাজারের মেসার্স দয়াময় ভান্ডারের প্রোপাইটার হাজী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, পাইকারি বাজারে নাজিরশাইল ছাড়া সব ধরনের চালের দাম কমছে। বোরো ধানের সিজন হওয়ায় এখন চালের দাম কিছুটা কম। ২৮ চাল পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৯ টাকায়।

খুচরা বাজারে এখনো চালের দাম কেন কমেনি এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই চায় বেশি মুনাফা করতে হয়ত সেজন্যই তারা কমাচ্ছে না। বাজারে দাম কমেছে বলে আমরাও কমে বিক্রি করছি। যত বেশি বিক্রি করতে পারবো ততই আমাদের লাভ। আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি না বলে তিনি জানান। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামনে চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। এর থেকে আরো দাম কমলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কৃষকদের বাঁচাতে চালের দাম আর কমানো ঠিক হবে না বলে তিনি মনে করেন। বাড্ডা বাজারে খুচরা বিক্রেতা মফিজুর রহমান বলেন, বেশি দামে চাল কিনছি বলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় কেন দাম কমেনি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাইকারিতে দাম হয়ত কমেছে এখন। কিন্তু আমাদের চাল দাম কমার আগে বেশি দামে ক্রয় করা বলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে থেকে জানা গেছে, বর্তমান সাড়ে ১১ লাখ টন মজুদের মধ্যে চাল ৮ লাখ ২১ লাখ টন এবং গম ৩ লাখ ২৯ লাখ টন। এছাড়া বন্দরে ভাসমান অবস্থায় প্রায় ৫০ হাজার টন চাল ও গম রয়েছে। যা গত বছর এই সময়ে মোট মজুদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৩ টন। এর মধ্যে চাল ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার ৮ টন ও গম ছিল এক লাখ ৯৩ হাজার ১৫ টন।

খাদ্য অধিদপ্তরের থেকে জানা গেছে, গত বছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বোরো সংগ্রহের ব্যর্থতার কারণে সরকারি মজুদ তলানিতে গিয়ে দাঁড়ায়। তাই এবার আমন সংগ্রহের সময় সতর্ক ছিল সরকার। তাই এ বছর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হয়েছে। গত ৭ মার্চ আমন সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ হয়। এই সময়ে ৬ লাখ ১ হাজার ৯৮৪ টন আমন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া গত ৮ এপ্রিল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় বোরোতে ৮ লাখ টন সিদ্ধ চাল, এক লাখ টন আতপ চাল এবং দেড় লাখ টন বোরো ধান (দেড় লাখ টন ধানে ১ লাখ টন চাল পাওয়া যাবে) সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ৩৮ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৬ টাকায় এই ধান কেনা হবে। গত ২ মে থেকে বোরো সংগ্রহ শুরু হয়েছে, আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তা চলবে বলে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে।