বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বিদেশে যাচ্ছে সিলেটের জৈন্তাপুরের উৎপাদিত তেজপাতা। আর মূল্যবৃদ্ধি ও ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ খাতে বিনিয়োগকারীরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, সিলেটসহ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে যায় এখানকার উৎপাদিত এসব তেজপাতা। ইংল্যান্ড (লন্ডন), আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কুয়েত, দুবাই, কাতার, বাহরাইন, লেবাননসহ বেশকটি দেশে সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম হয়ে এসব তেজপাতা বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। বিমান, নৌপথে বিদেশে যায় এসব তেজপাতার চালান। এ অঞ্চলের অনেক যুবক কিশোর এখন তেজপাতাকে আয় রোজগারের বাড়তি ও বিকল্প মাধ্যম হিসেবে নিতে শুরু করেছেন। শৌখিনের পাশাপাশি এ শিল্পে জড়াচ্ছেন অনেক কৃষক পরিবারের সদস্যও।
তবে উপজেলা স্থানীয় কৃষি বিভাগের পর্যাপ্ত দেখভালসহ সহযোগিতা না থাকায় সনাতন পদ্ধতিতেই চলে আসছে লাভবান এ খাতের চাষাবাদ ও উৎপাদন। তেজপাতা একটি সুগন্ধী পাতা। মাংস, মাছ, পোলাও, বিরিয়ানি, সেমাই, ফিরনি, পায়েসসহ মুখরোচক সব খাবারের বাড়তি সুগন্ধী পেতে পাচকরা এ পাতা ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ করে সিলেটের মানুষের ঘরে ঘরে তেজপাতার ব্যবহার থাকে বছরজুড়েই। সিলেটী ভাষাভাষির মানুষজন যেখানেই আছেন সেখানেই সরব উপস্থিতি তেজপাতার। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ৫নং ফতেহপুর ইউনিয়নের হরিপুর, উৎলারপাড়, শিকারখাঁ, উমনপুর, চিকনাগুল, শ্যামপুর, বাঘেরখাল, নিজপাটের কমলাবাড়ি, গৌরি শংকর, ফুলবাড়ি, গোয়াবাড়ি, ঢুপি, ডৌডিক, রুপচেং, কাপরাংঙ্গি, থূবাং, লালাখালসহ আশপাশের টিলা পাহাড় বেষ্টিত গ্রামসমূহের বাড়িতে বাড়িতে প্রচুর তেজপাতার গাছ দেখা যায়। কোন কোন বাড়ির টিলায় সারি সারিভাবে লাগানো আছে তেজপাতার গাছ।
আবার কোনো কোনো বাড়িতে ফলমূলের গাছের সঙ্গে রোপণকৃত তেজপাতা গাছ থেকে উৎপাদন করা হয় প্রচুর সুগন্ধী তেজপাতা। উল্লিখিত এলাকাসমূহে প্রায় সারা বছরই তেজপাতার উৎপাদন, সরবরাহ লক্ষ করা যায়। সোমবার সরজমিনে উপজেলার হরিপুর ফতেহপুর ইউনিয়নের বাঘেরখাল, উমনপুর পরিদর্শনে কথা হয় কজন তেজপাতা উৎপাদনকারীর সঙ্গে। তারা জানান, সেই বাপ-দাদার আমলের মান্ধাতার চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করেই চলে আমাদের এ লাভজনক কৃষি পণ্যের উৎপাদন, পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ফলন উৎপাদন। হরিপুর শ্যামপুরের তেজপাতার পাইকারি বিক্রেতা হাজি জহিরুল আমিন জানান, ৪৬ বছর থেকে তিনি এ ব্যবসায় জড়িত। কার্তিক থেকে অগ্রাহায়ণ মাস তেজপাতার মৌসুম। এসময়ই উৎপাদিত তেজপাতা কেটে সংগ্রহ করা হয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন নামি দামি প্রতিষ্ঠান যেমন বনফুল, এসিআই, বিডি ফুডসহ অনেক প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছ থেকে তেজপাতা সংগ্রহ করে।
তাদের বিদেশ শাখায়ও প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করা হয় এসব তেজপাতা। তার বাগানে ২০ হাজারেরও বেশি তেজপাতা গাছ রয়েছে, যা থেকে বছরজুড়েই পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব। ১০০টাকা কেজি দরে এসব তেজপাতা বিক্রি করে তিনি বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করতে পারেন বলে জানান। আজিদ উল্যাহ, আবুল, কাশেম, আব্দুল কাদিরসহ বেশকজন তেজপাতা চাষি জানান, অল্প পূঁজি বিনিয়োগ করে সর্বোপরি লাভবান হওয়ার মতো এমন প্রকল্প এটি। এখানে বিনিয়োগকারীরা বেকারত্ব গুছিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে সহজেই। এতদসত্ত্বেও সম্ভাবনাময় এখাতে নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। চাষাবাদ, রোগবালাইসহ তথ্যবদানে আমরা উপজেলা কৃষি বিভাগ কিংবা মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কোনো ন্যূনতম সহযোগিতা পাইনা, যে কারণে গাছ রোপণ পাতা উত্তোলনে আমরা মান্ধাতার আমলের কৃষি আবাদে আবদ্ধ আছি।
আর এ কারণেই লাভবান এ কৃষিখাতের উন্নয়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মান্ধাতার আমলের আবাদ পদ্ধতি, গাছ রোপণ, পরিচর্যায় এখনো আবদ্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে এখানকার তেজপাতা উৎপাদন প্রক্রিয়া। জৈন্তাপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নুরুল ইসলাম জানান, হরিপুরসহ আশপাশের টিলাশ্রেণির মাটিতে তেজপাতার ফলন অত্যন্ত ভালো হয়ে থাকে। আমার মনে হয় ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব টিলায় তেজপাতা রোপণকারীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়ে আসলে তাদের পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব আদায় সাপেক্ষ লাভবান হবেন। আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে জৈন্তাপুরের উপজেলা কৃষি অফিসে বারবার ফোন করলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। জৈন্তাপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরিন করিম জানান, জৈন্তাপুর উপজেলার মাটির সঙ্গে মানানসই ফল, ফসল জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের নানামুখী উদ্যোগ নেয়া আছে। তেজপাতা একটি লাভজনক কৃষি ফসল। এখাতে বিনিয়োগকারী ও জড়িতদের যে কোন সহযোগিতায় আমরা প্রস্তুত আছি। সহজ শর্তে কৃষিঋণসহ তেজপাতা চাষিদের প্রয়োজনে সরকারের অর্থও বরাদ্দ করা হবে।