ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের সবজি উঠলেও কমছে না ডিমের দাম

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানীর বাজারগুলোতে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। দাম কিছুটা বেশি হলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পালং শাক, লাল শাক, মুলা শাক, লাউ শাক, সরিষা শাকসহ বেগুন, মুলা, লাউ, শিম, টমেটো, গাজর, বাঁধাকপি, ফুলকপি। তবে বাজারজুড়ে সবজির সরবরাহ বাড়লেও কমছে না ডিমের দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিম এখন নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ— বাজারে কারও নজরদারি না থাকায় ডিমের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। দুই সপ্তাহ আগে যেখানে এক ডজন ডিম বিক্রি হতো ৯৫ টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এতথ্য পাওয়া গেছে।

রামপুরা বাজারে কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সঙ্গে। বাজারে কারও কোনও মনিটরিং নাই। ফলে আড়তদাররা নানা অজুহাতে যখন যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছে নিম্নআয়ের মানুষেরা।’

জানতে চাইলে একই বাজারের ডিমের খুচরা ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন জানান, এখন ডিমের চাহিদা বেড়েছে। বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, খামারিরা তা সরবরাহ করতে পারছে না। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় ডিমের দাম বেড়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ডিম ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি করছেন। এক সপ্তাহ আগেও এই ব্যবসায়ীরা ৯৫-১০০ টাকা দরে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করেছেন।

বর্তমানে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০-১১ টাকায়। আর হালি হিসেবে ৪০-৪২ টাকা, ডজন বিক্রি করছেন ১১৫-১২০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি আড়তে দাম বেশি হলে খুচরা বাজারে দাম বাড়বেই। তারা যে দামে আনেন তার চেয়ে কিছুটা মুনাফা পেলেই খুশি। তারা জানান, গত একমাসের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে তিন দফা। কেন দাম বাড়ছে সেটা তাদের জানা নেই। ডিমের দাম বাড়ার কারণ খামারিরাই ভালো বলতে পারবেন বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।

এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের সবজি আসা শুরু হয়েছে। দাম একটু বেশি হলেও বেশ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কিনছেন সবাই। কোনাপাড়া বাজারে প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, প্রতি পিস ফুল কপি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। কদিন আগেও শিম বিক্রি হতো প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। হঠাৎ করেই তা বেড়ে গেছে, এখন শিমের দাম প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। সবজি বিক্রেতারা বলছেন— ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া নাকি সবজির দাম ওঠানামা করছে। প্রতি পিস লাউ সাইজ অনুসারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিটি ডিমের দাম সাত টাকা না পেলে উৎপাদনকারী খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বে। কারণ, প্রতি পিস ডিমের উৎপাদন খরচ হয় ছয় টাকা ১৫ পয়সা থেকে ছয় টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। বর্তমানে খামারিরা প্রতিটি ডিম সাত টাকার কমে সরবরাহ করছে। এ অবস্থায় ডিমের দাম বাড়ানোর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। তারা আরও জানান, খামারিদের কাছ থেকে অন্তত ২/৩ হাত ঘুরে ডিম ভোক্তাদের যায়। তারাও মুনাফা করে। এ কারণেও ডিমের দাম বেড়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজারে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ অপ্রতুল। কারণ, গত একবছর ধরে ডিমের দাম বিভিন্ন কারণে নিম্নমুখী ছিল।এসময় অনেক ব্যবসায়ী লোকসানের কারণে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। পূঁজির অভাবে তারা আর ব্যবসায় ফিরে আসতে পারেননি। তখন বেশি পরিমাণে ডিম বাজারে সরবরাহ হতো। এখন সরবরাহ কম, কিন্তু চাহিদা কমেনি। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় ডিমের দাম বেড়েছে।

এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোল্ট্রি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের কনভেনর মসিউর রহমান খান সাংবাদিককে বলেন, ‘লোকসান দিয়ে দিয়ে যে সব খামারি সর্বস্বান্ত হয়ে চলে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনার কোনও উদ্যোগ নেই।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়বে কোন উপায়ে? আর বাজারে সরবরাহ না বাড়লে ডিমের ওপর চাপ কমবে কিভাবে? চাপ না কমলে দাম কমবে কিভাবে? এসব সমস্যা নিরসনের কি কোনও উদ্যোগ আছে কারও?’, প্রশ্ন তার।

তিনি জানান, একজন খামারির প্রতি পিস ডিম উৎপাদনের খরচ পড়ে ছয় টাকার ওপরে। কাজেই তাকে টিকে থাকতে হলে প্রতি পিস ডিম কমপক্ষে সাত টাকা দরে ডিম বিক্রি করতে হবে। না পারলে তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আর খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হলে খাত টিকবে না।

এ প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের ডিমের পাইকারি ব্যবসায়ী আশরাফ আলী সাংবাদিককে জানান, সিজনের কারণেই এখন ডিমের চাহিদা বেশি। সে তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় বেড়েছে ডিমের দাম। দুই পয়সা মুনাফা না পেলে ব্যবসা করবো কেন? প্রশ্ন আশরাফ আলীর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সফিউল আলম মুনসী সাংবাদিককে জানান, বাজার মনিটরিং টিম নিয়মিত কাজ করছে। ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে যদি কোথাও কোনও অসঙ্গতি চোখে পড়ে, তাহলে অবশ্যই বাবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

শীতের সবজি উঠলেও কমছে না ডিমের দাম

আপডেট টাইম : ১০:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানীর বাজারগুলোতে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। দাম কিছুটা বেশি হলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পালং শাক, লাল শাক, মুলা শাক, লাউ শাক, সরিষা শাকসহ বেগুন, মুলা, লাউ, শিম, টমেটো, গাজর, বাঁধাকপি, ফুলকপি। তবে বাজারজুড়ে সবজির সরবরাহ বাড়লেও কমছে না ডিমের দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিম এখন নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ— বাজারে কারও নজরদারি না থাকায় ডিমের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। দুই সপ্তাহ আগে যেখানে এক ডজন ডিম বিক্রি হতো ৯৫ টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এতথ্য পাওয়া গেছে।

রামপুরা বাজারে কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সঙ্গে। বাজারে কারও কোনও মনিটরিং নাই। ফলে আড়তদাররা নানা অজুহাতে যখন যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছে নিম্নআয়ের মানুষেরা।’

জানতে চাইলে একই বাজারের ডিমের খুচরা ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন জানান, এখন ডিমের চাহিদা বেড়েছে। বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, খামারিরা তা সরবরাহ করতে পারছে না। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় ডিমের দাম বেড়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ডিম ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি করছেন। এক সপ্তাহ আগেও এই ব্যবসায়ীরা ৯৫-১০০ টাকা দরে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করেছেন।

বর্তমানে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০-১১ টাকায়। আর হালি হিসেবে ৪০-৪২ টাকা, ডজন বিক্রি করছেন ১১৫-১২০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি আড়তে দাম বেশি হলে খুচরা বাজারে দাম বাড়বেই। তারা যে দামে আনেন তার চেয়ে কিছুটা মুনাফা পেলেই খুশি। তারা জানান, গত একমাসের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে তিন দফা। কেন দাম বাড়ছে সেটা তাদের জানা নেই। ডিমের দাম বাড়ার কারণ খামারিরাই ভালো বলতে পারবেন বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।

এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের সবজি আসা শুরু হয়েছে। দাম একটু বেশি হলেও বেশ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কিনছেন সবাই। কোনাপাড়া বাজারে প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, প্রতি পিস ফুল কপি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। কদিন আগেও শিম বিক্রি হতো প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। হঠাৎ করেই তা বেড়ে গেছে, এখন শিমের দাম প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। সবজি বিক্রেতারা বলছেন— ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া নাকি সবজির দাম ওঠানামা করছে। প্রতি পিস লাউ সাইজ অনুসারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিটি ডিমের দাম সাত টাকা না পেলে উৎপাদনকারী খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বে। কারণ, প্রতি পিস ডিমের উৎপাদন খরচ হয় ছয় টাকা ১৫ পয়সা থেকে ছয় টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। বর্তমানে খামারিরা প্রতিটি ডিম সাত টাকার কমে সরবরাহ করছে। এ অবস্থায় ডিমের দাম বাড়ানোর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। তারা আরও জানান, খামারিদের কাছ থেকে অন্তত ২/৩ হাত ঘুরে ডিম ভোক্তাদের যায়। তারাও মুনাফা করে। এ কারণেও ডিমের দাম বেড়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজারে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ অপ্রতুল। কারণ, গত একবছর ধরে ডিমের দাম বিভিন্ন কারণে নিম্নমুখী ছিল।এসময় অনেক ব্যবসায়ী লোকসানের কারণে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। পূঁজির অভাবে তারা আর ব্যবসায় ফিরে আসতে পারেননি। তখন বেশি পরিমাণে ডিম বাজারে সরবরাহ হতো। এখন সরবরাহ কম, কিন্তু চাহিদা কমেনি। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় ডিমের দাম বেড়েছে।

এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোল্ট্রি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের কনভেনর মসিউর রহমান খান সাংবাদিককে বলেন, ‘লোকসান দিয়ে দিয়ে যে সব খামারি সর্বস্বান্ত হয়ে চলে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনার কোনও উদ্যোগ নেই।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়বে কোন উপায়ে? আর বাজারে সরবরাহ না বাড়লে ডিমের ওপর চাপ কমবে কিভাবে? চাপ না কমলে দাম কমবে কিভাবে? এসব সমস্যা নিরসনের কি কোনও উদ্যোগ আছে কারও?’, প্রশ্ন তার।

তিনি জানান, একজন খামারির প্রতি পিস ডিম উৎপাদনের খরচ পড়ে ছয় টাকার ওপরে। কাজেই তাকে টিকে থাকতে হলে প্রতি পিস ডিম কমপক্ষে সাত টাকা দরে ডিম বিক্রি করতে হবে। না পারলে তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আর খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হলে খাত টিকবে না।

এ প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের ডিমের পাইকারি ব্যবসায়ী আশরাফ আলী সাংবাদিককে জানান, সিজনের কারণেই এখন ডিমের চাহিদা বেশি। সে তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় বেড়েছে ডিমের দাম। দুই পয়সা মুনাফা না পেলে ব্যবসা করবো কেন? প্রশ্ন আশরাফ আলীর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সফিউল আলম মুনসী সাংবাদিককে জানান, বাজার মনিটরিং টিম নিয়মিত কাজ করছে। ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে যদি কোথাও কোনও অসঙ্গতি চোখে পড়ে, তাহলে অবশ্যই বাবস্থা নেওয়া হবে।