বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ঢাকা নগরে এখনো শীতের কোনো আভাস নেই। তবে দু-তিন সপ্তাহ ধরে বাজারে আসছে শীতের আগাম সবজি। দাম বেশি হলেও পাওয়া যাচ্ছে পালংশাক, লালশাক, মুলাশাক, লাউশাক, সরিষাশাকসহ বেগুন, মুলা, লাউ, শিম, টমেটো, গাজর, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ শীতকালীন সবজি। তবে বাজারজুড়ে সবজির সরবরাহ বাড়লেও কমছে না ডিমের দাম। এ ছাড়া চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, গরুর মাংসসহ বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিম এখন নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ বাজারে কারো নজরদারি না থাকায় ডিমের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। দুই সপ্তাহ আগে যেখানে এক ডজন ডিম বিক্রি হতো ৯৫ টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকায়।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রামপুরা বাজারে কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজারে কারো কোনো মনিটরিং নেই। ফলে আড়তদাররা নানা অজুহাতে যখন যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষ।’
জানতে চাইলে একই বাজারের ডিমের খুচরা ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন জানান, এখন ডিমের চাহিদা বেড়েছে। বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, খামারিরা তা সরবরাহ করতে পারছে না। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় ডিমের দাম বেড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ডিম ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি করছেন। এক সপ্তাহ আগেও এই ব্যবসায়ীরা ৯৫-১০০ টাকা দরে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করেছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি আড়তে দাম বেশি হলে খুচরা বাজারে দাম বাড়বেই। তারা যে দামে আনেন তার চেয়ে কিছুটা মুনাফা পেলেই খুশি। তারা জানান, গত এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে তিন দফা। কেন দাম বাড়ছে সেটা তাদের জানা নেই। ডিমের দাম বাড়ার কারণ খামারিরাই ভালো বলতে পারবেন বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের সবজি আসা শুরু হয়েছে। দাম একটু বেশি হলেও বেশ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কিনছেন সবাই। কোনাপাড়া বাজারে প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়, প্রতি পিস ফুলকপি ৪০-৪৫ টাকা, টমেটো বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে। কদিন আগেও শিম বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ১৪০ টাকা, যা গতকালের বাজারে বিক্রি ৮০-১০০ টাকায়। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা দরে। বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকায়, ঢেঁড়স ৪০-৫০, বেগুন ৫০-৭০, কচুর লতি ৫০-৬০, গাজর ৮০, ঝিঙা ৬০, করলা ৫০, কাঁকরোল ৫০, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারে শাকের দাম কিছুটা কমেছে। কলমিশাক প্রতি আঁটি ৫-৭ টাকা, লালশাক ৭-১০, লাউশাক ২৫-৩০ ও পালংশাক ২৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। কাঁচাবাজারে পর্যাপ্ত সবজি থাকলেও বাড়তি দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন শীতের আগাম চাষের শাক পরিমাণে কম, এ জন্য একটু বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার উপযোগী সরবরাহ আসতে আরো অন্তত ১৫ দিনের মতো সময় লাগবে। চাহিদা বাড়লে দাম কমতে থাকবে।
গতকাল বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৪০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। যা গত সপ্তাহে ছিল মাত্র ১০০-১২০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়।
এদিকে, স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য স্বস্তির লক্ষ্য চাষের পাঙাশ, কৈ, তেলাপিয়া। যার দাম মোটামুটি সস্তা রয়েছে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশ ১৪০-১৭০ টাকা, কৈ ১৫০-২০০, তেলাপিয়া ১৪০-১৬০, ট্যাংরা ৪০০-৬০০, শিং ৫০০-৬০০, পাবদা ৪০০-৬০০, চিংড়ি ৫০০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ৫ টাকা করে বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। সঙ্গে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪৮০-৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাজার ঘুরে সপ্তাহের ব্যবধানে দামে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। মোটা গুটি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়। এ ছাড়া পাইজাম ৪৩ টাকা, মিনিকেট ৫৫, নাজিরশাইল ৬২-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।