ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সম্ভাবনা দেখাচ্ছে পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত চারকোল

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পাট দেশের গর্ব হলেও এর কোনো দৃশ্যমান সফলতা চোখে পড়েনি জনসাধারণের। অর্থের অভাব আর শ্রমিক অসন্তোষে একের পর এক পাটকল বন্ধ হওয়ার খবর আমরা শুনতে পাই। তবে আর আগের সময় নেই। এখন সময় পাল্টেছে। বদলে যাচ্ছে পাটশিল্পের অবস্থান। এই পাট থেকে সম্ভাবনার আশা দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন সেক্টরে। এর মধ্যে পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত অ্যাকটিভেটেড চারকোল। এক সময় চারকোল স্বল্প পরিসরে উৎপাদিত হতো। এখন তা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। তবে দেশের মোট উৎপাদিত পাটকাঠির ৫০ ভাগ দিয়ে চারকোল উৎপাদন করতে পারলে তা বিদেশে রপ্তানি করে বছরে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

আগে পাটকাঠি সাধারণত কৃষকের রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজে ব্যবহৃত হতো। এরপর আখের ছোবড়ার সঙ্গে মিশিয়ে পার্টিকেল বোর্ড তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হতো। এখন চারকোল তৈরির মিলে ব্যবহৃত হওয়ায় পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। পাটের দাম না পাওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে কৃষক। একদিকে সোনালী আঁশ, অন্যদিকে রূপালী কাঠি-দুটো মিলে এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে পাটচাষে। পাটখড়ি বা পাটকাঠির কার্বন চারকোল নামে পরিচিত। চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাটকাঠি পুড়িয়ে পাওয়া কার্বন থেকে আতশবাজি, কার্বন পেপার, প্রিন্টার ও ফটোকপিয়ারের কালি, মোবাইলের ব্যাটারি, ফেসওয়াশের উপকরণ ও প্রসাধনপণ্য, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও সারসহ নানা পণ্য তৈরি করা হয়।

চারকোল বা কয়লা ছাড়াও পাটকাঠি থেকে অ্যাকটিভেটেড কার্বন উৎপাদন করা যায়। ইউরোপে ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্টে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।দেশে প্রথম ২০১২ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে পাটকাঠি থেকে অ্যাকটিভেটেড চারকোল উৎপাদন শুরু হয়। ওই বছরই সর্বপ্রথম চীনে এ পণ্য রপ্তানি করা হয়। ৬ বছর আগে পাটকাঠিকে ছাই বানিয়ে তা রপ্তানির পথ দেখান ওয়াং ফেই নামের চীনের এক নাগরিক। বর্তমানে চীন ছাড়াও তাইওয়ান, জাপান, হংকং ও ব্রাজিলেও এটি রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া চারকোলের বড় বাজার রয়েছে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে।এই শিল্পের সাথে জড়িত জয়া কোম্পানি লি-এর এমডি জয় হোসাইন আমার সংবাদকে বলেন, এক সময়ের সোনালী আঁশ পাট তার ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছিলো। এখন সেই হারানো গৌরব আবার ফিরে এসেছে।

চারকোল উৎপাদনের ফলে কৃষকরা এখন পাটের দামের পাশাপাশি পাটকাঠিরও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। ফলে কৃষকরা নতুন করে পাটচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০টির মতো চারকোল ফ্যাক্টরি আছে। তবে আমাদের এ শিল্পের জন্য অর্থের বিষয়টা সরকারকে দেখতে হবে। আমাদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা ও ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।গতকাল সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক) সঙ্গে বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাক্সারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সাথে এক মতবিনিময় সভা হয়। এ সময় মন্ত্রী বলেন, পাটকাঠি থেকে অ্যাকটিভেটেড চারকোল বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। যাতে কৃষকরা পাট উৎপাদন করে আগের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। ফলে দিন দিন পাটচাষ ও উৎপাদনে কৃষক আগ্রহী হচ্ছে। চারকোল উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে সব ধরনের সহয়তা করবে সরকার। পাট থেকে এ ধরনের যত বেশি বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে তত দ্রুত সোনালী আঁশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

চারকোল ম্যানুফ্যাক্সারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চারকোলের এ অবারিত সম্ভাবনার কথা উপস্থাপন করা হয়। দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ টন পাটকাঠি উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে যদি ৫০ ভাগ পাটকাঠি চারকোল উৎপাদনে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন চারকোল উৎপাদন সম্ভব হবে। যা বিদেশে রপ্তানি করে প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার ৫শ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সারা দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।সভায় অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মির্জা জিল্লুর রহমান দাবি করে বলেন, চারকোল শিল্পকে একটি উদীয়মান শিল্প হিসাবে ঘোষণা দিতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও পাটজাত পণ্য হিসাবে ২০ ভাগ ক্যাশ ইনসেনটিভ পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

এ শিল্প বিকাশে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের সুযোগ দিতে হবে। এ শিল্পের জন্য দ্রুত পৃথক নীতিমালা তৈরি করতে হবে। এছাড়া এ শিল্পের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা ও ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মন্ত্রী সকল প্রস্তাব ও পরামর্শ সম্পর্কে বলেন, নতুন এ খাতে যে সকল সমস্যা রয়েছে তা সরকার অবগত আছে। এ সমস্যা দূর করতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহায়তা করবে। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। চারকোল শিল্পের বিকাশের জন্য সকল পক্ষের সার্বিক সহযোগিতা চান বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী। বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০টি চারকোল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সানবিম কর্পোরেশন, মাহফুজা এন্ড আহান এন্টারপ্রাইজ, জামালপুর চারকোল লিমিটেড ও রিগারো প্রাইভেট লিমিটেড।

বর্তমানে জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে বাণিজ্যিকভাবে চারকোল উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, চারকোল বা এক্টিভেটেড কার্বন পাটখড়ি থেকে উৎপাদিত একটি পণ্য। এছাড়া কাঠের গুঁড়া, নারকেলের ছোবড়া ও বাঁশ থেকেও চারকোল উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে দেশে এখন পর্যন্ত পাটখড়ি থেকেই চারকোল উৎপাদিত হয়ে আসছে। জানা গেছে, বিশেষ চুল্লিতে পাটখড়ি লোড করে তাতে আগুন দেয়া হয়। ১০-১২ ঘণ্টা রাখার পরে চুলা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়, যাতে চুলার ভেতরে অক্সিজেন প্রবেশ করতে না পারে। এভাবে ৪ দিন রাখার পরে এটি কার্বনে পরিণত হয়। পরে সেই কার্বন প্যাকেজিং করে রপ্তানি হয় বিদেশে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

সম্ভাবনা দেখাচ্ছে পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত চারকোল

আপডেট টাইম : ১০:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পাট দেশের গর্ব হলেও এর কোনো দৃশ্যমান সফলতা চোখে পড়েনি জনসাধারণের। অর্থের অভাব আর শ্রমিক অসন্তোষে একের পর এক পাটকল বন্ধ হওয়ার খবর আমরা শুনতে পাই। তবে আর আগের সময় নেই। এখন সময় পাল্টেছে। বদলে যাচ্ছে পাটশিল্পের অবস্থান। এই পাট থেকে সম্ভাবনার আশা দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন সেক্টরে। এর মধ্যে পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত অ্যাকটিভেটেড চারকোল। এক সময় চারকোল স্বল্প পরিসরে উৎপাদিত হতো। এখন তা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। তবে দেশের মোট উৎপাদিত পাটকাঠির ৫০ ভাগ দিয়ে চারকোল উৎপাদন করতে পারলে তা বিদেশে রপ্তানি করে বছরে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

আগে পাটকাঠি সাধারণত কৃষকের রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজে ব্যবহৃত হতো। এরপর আখের ছোবড়ার সঙ্গে মিশিয়ে পার্টিকেল বোর্ড তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হতো। এখন চারকোল তৈরির মিলে ব্যবহৃত হওয়ায় পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। পাটের দাম না পাওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে কৃষক। একদিকে সোনালী আঁশ, অন্যদিকে রূপালী কাঠি-দুটো মিলে এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে পাটচাষে। পাটখড়ি বা পাটকাঠির কার্বন চারকোল নামে পরিচিত। চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাটকাঠি পুড়িয়ে পাওয়া কার্বন থেকে আতশবাজি, কার্বন পেপার, প্রিন্টার ও ফটোকপিয়ারের কালি, মোবাইলের ব্যাটারি, ফেসওয়াশের উপকরণ ও প্রসাধনপণ্য, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও সারসহ নানা পণ্য তৈরি করা হয়।

চারকোল বা কয়লা ছাড়াও পাটকাঠি থেকে অ্যাকটিভেটেড কার্বন উৎপাদন করা যায়। ইউরোপে ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্টে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।দেশে প্রথম ২০১২ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে পাটকাঠি থেকে অ্যাকটিভেটেড চারকোল উৎপাদন শুরু হয়। ওই বছরই সর্বপ্রথম চীনে এ পণ্য রপ্তানি করা হয়। ৬ বছর আগে পাটকাঠিকে ছাই বানিয়ে তা রপ্তানির পথ দেখান ওয়াং ফেই নামের চীনের এক নাগরিক। বর্তমানে চীন ছাড়াও তাইওয়ান, জাপান, হংকং ও ব্রাজিলেও এটি রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া চারকোলের বড় বাজার রয়েছে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে।এই শিল্পের সাথে জড়িত জয়া কোম্পানি লি-এর এমডি জয় হোসাইন আমার সংবাদকে বলেন, এক সময়ের সোনালী আঁশ পাট তার ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছিলো। এখন সেই হারানো গৌরব আবার ফিরে এসেছে।

চারকোল উৎপাদনের ফলে কৃষকরা এখন পাটের দামের পাশাপাশি পাটকাঠিরও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। ফলে কৃষকরা নতুন করে পাটচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০টির মতো চারকোল ফ্যাক্টরি আছে। তবে আমাদের এ শিল্পের জন্য অর্থের বিষয়টা সরকারকে দেখতে হবে। আমাদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা ও ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।গতকাল সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক) সঙ্গে বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাক্সারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সাথে এক মতবিনিময় সভা হয়। এ সময় মন্ত্রী বলেন, পাটকাঠি থেকে অ্যাকটিভেটেড চারকোল বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। যাতে কৃষকরা পাট উৎপাদন করে আগের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। ফলে দিন দিন পাটচাষ ও উৎপাদনে কৃষক আগ্রহী হচ্ছে। চারকোল উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে সব ধরনের সহয়তা করবে সরকার। পাট থেকে এ ধরনের যত বেশি বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে তত দ্রুত সোনালী আঁশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

চারকোল ম্যানুফ্যাক্সারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চারকোলের এ অবারিত সম্ভাবনার কথা উপস্থাপন করা হয়। দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ টন পাটকাঠি উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে যদি ৫০ ভাগ পাটকাঠি চারকোল উৎপাদনে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন চারকোল উৎপাদন সম্ভব হবে। যা বিদেশে রপ্তানি করে প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার ৫শ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সারা দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।সভায় অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মির্জা জিল্লুর রহমান দাবি করে বলেন, চারকোল শিল্পকে একটি উদীয়মান শিল্প হিসাবে ঘোষণা দিতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও পাটজাত পণ্য হিসাবে ২০ ভাগ ক্যাশ ইনসেনটিভ পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

এ শিল্প বিকাশে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের সুযোগ দিতে হবে। এ শিল্পের জন্য দ্রুত পৃথক নীতিমালা তৈরি করতে হবে। এছাড়া এ শিল্পের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা ও ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মন্ত্রী সকল প্রস্তাব ও পরামর্শ সম্পর্কে বলেন, নতুন এ খাতে যে সকল সমস্যা রয়েছে তা সরকার অবগত আছে। এ সমস্যা দূর করতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহায়তা করবে। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। চারকোল শিল্পের বিকাশের জন্য সকল পক্ষের সার্বিক সহযোগিতা চান বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী। বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০টি চারকোল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সানবিম কর্পোরেশন, মাহফুজা এন্ড আহান এন্টারপ্রাইজ, জামালপুর চারকোল লিমিটেড ও রিগারো প্রাইভেট লিমিটেড।

বর্তমানে জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে বাণিজ্যিকভাবে চারকোল উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, চারকোল বা এক্টিভেটেড কার্বন পাটখড়ি থেকে উৎপাদিত একটি পণ্য। এছাড়া কাঠের গুঁড়া, নারকেলের ছোবড়া ও বাঁশ থেকেও চারকোল উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে দেশে এখন পর্যন্ত পাটখড়ি থেকেই চারকোল উৎপাদিত হয়ে আসছে। জানা গেছে, বিশেষ চুল্লিতে পাটখড়ি লোড করে তাতে আগুন দেয়া হয়। ১০-১২ ঘণ্টা রাখার পরে চুলা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়, যাতে চুলার ভেতরে অক্সিজেন প্রবেশ করতে না পারে। এভাবে ৪ দিন রাখার পরে এটি কার্বনে পরিণত হয়। পরে সেই কার্বন প্যাকেজিং করে রপ্তানি হয় বিদেশে।