ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁ সদর উপজেলার জাগেশ্বর গ্রামে দেড়শ পরিবারের বসবাস

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নওগাঁ সদর উপজেলার জাগেশ্বর গ্রামে দেড়শ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ১০০ পরিবারই পানের চাষ করে। অর্ধশত বছর ধরে এ গ্রামে পান চাষ হয়ে আসছে। পান চাষই এ গ্রামের পরিবারগুলোর উপার্জনের প্রধান উপায়।
উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে জাগেশ্বর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটির চারপাশে যেদিকে চোখ যায়, কেবলই পানের বরজ। কৃষকরা পানের বরজের পরিচর্যা করছেন, বরজ থেকে পান সংগ্রহ করে বাড়ির উঠানে এনে স্তূপ করে রাখছেন। সেখানে পরিবারের সদস্যরা মিলে পান বাছাই করে আলাদা করে রাখছেন।
গ্রামের পান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামটিতে বর্তমানে ১২০টি পানের বরজ রয়েছে। গ্রামের প্রায় ৮৫টি পরিবার পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এ উপজেলায় গত বছর প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। উপজেলার কীর্ত্তিপুর ইউনিয়নের জাগেশ্বর, জালম, জোকাকান্দর, আতিথা, বজরুক আতিথা, হরিরামপুর ও বর্ষাইল ইউনিয়নের কেশবপুর, চকআতিথা, বর্ষাইল, লক্ষ্মীপুরসহ ১৫-১৬টি গ্রামে পানের চাষ হয়ে থাকে। কীর্ত্তিপুর, বর্ষাইল, বদলগাছী উপজেলা সদর ও নওগাঁ সদর হাটবাজারের ক্রেতারা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা বরজে এসে পান কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় বাজারে বড় আকারের এক বিড়া (৮০টি) পান বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। মধ্যম আকারের এক বিড়া পান ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আর ছোট পানের বিড়া ৩০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়।
জাগেশ্বর গ্রামের পান চাষি চন্দন কুমার বলেন, আমার দাদু সুবোধ কুমার ৫০-৬০ বছর আগে সর্বপ্রথম এই এলাকায় পান চাষ শুরু করেন। এখন আমি পান চাষ করছি। বর্তমানে এক বিঘা জমির ওপর আমার তিনটি পানের বরজ রয়েছে। এ বছর তিনটি বরজে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। পান বিক্রি হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকার। এবার পানের দামও ভালো রয়েছে। পান চাষের টাকায় আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও সংসারের যাবতীয় খরচ চলে। আরেক পান চাষি সুবোধ কুমার বলেন, পানের বরজ থেকে সারা বছরই পান সংগ্রহ করা যায়। তবে শীতকালে তুলনামূলক কম পান উৎপাদন হয়। কারণ শীতকালে পান পাতা বাড়ে কম। তবে উৎপাদন কম হলেও এ সময় বাজারে পানের দাম থাকে বেশি।
কীর্ত্তিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, এ ইউনিয়নের ছয়-সাতটি গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবার পান চাষ করে। বরজ রয়েছে চার শতাধিক। এ বছর বরজগুলোতে পানের ফলন হয়েছে ভালো। দাম ভালো থাকায় কৃষকরাও বেশ খুশি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মফিদুল ইসলাম বলেন, নওগাঁ সদর উপজেলায় দিন দিন পান চাষ বাড়ছে। অন্যান্য ফসল আবাদের তুলনায় পান চাষ লাভজনক। তাই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করে থাকি। পানের ফলন ভালো করার জন্য আমাদের মাঠ কর্মীরা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহযোগিতা করে থাকেন।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

নওগাঁ সদর উপজেলার জাগেশ্বর গ্রামে দেড়শ পরিবারের বসবাস

আপডেট টাইম : ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৯
বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নওগাঁ সদর উপজেলার জাগেশ্বর গ্রামে দেড়শ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ১০০ পরিবারই পানের চাষ করে। অর্ধশত বছর ধরে এ গ্রামে পান চাষ হয়ে আসছে। পান চাষই এ গ্রামের পরিবারগুলোর উপার্জনের প্রধান উপায়।
উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে জাগেশ্বর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটির চারপাশে যেদিকে চোখ যায়, কেবলই পানের বরজ। কৃষকরা পানের বরজের পরিচর্যা করছেন, বরজ থেকে পান সংগ্রহ করে বাড়ির উঠানে এনে স্তূপ করে রাখছেন। সেখানে পরিবারের সদস্যরা মিলে পান বাছাই করে আলাদা করে রাখছেন।
গ্রামের পান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামটিতে বর্তমানে ১২০টি পানের বরজ রয়েছে। গ্রামের প্রায় ৮৫টি পরিবার পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এ উপজেলায় গত বছর প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। উপজেলার কীর্ত্তিপুর ইউনিয়নের জাগেশ্বর, জালম, জোকাকান্দর, আতিথা, বজরুক আতিথা, হরিরামপুর ও বর্ষাইল ইউনিয়নের কেশবপুর, চকআতিথা, বর্ষাইল, লক্ষ্মীপুরসহ ১৫-১৬টি গ্রামে পানের চাষ হয়ে থাকে। কীর্ত্তিপুর, বর্ষাইল, বদলগাছী উপজেলা সদর ও নওগাঁ সদর হাটবাজারের ক্রেতারা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা বরজে এসে পান কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় বাজারে বড় আকারের এক বিড়া (৮০টি) পান বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। মধ্যম আকারের এক বিড়া পান ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আর ছোট পানের বিড়া ৩০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়।
জাগেশ্বর গ্রামের পান চাষি চন্দন কুমার বলেন, আমার দাদু সুবোধ কুমার ৫০-৬০ বছর আগে সর্বপ্রথম এই এলাকায় পান চাষ শুরু করেন। এখন আমি পান চাষ করছি। বর্তমানে এক বিঘা জমির ওপর আমার তিনটি পানের বরজ রয়েছে। এ বছর তিনটি বরজে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। পান বিক্রি হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকার। এবার পানের দামও ভালো রয়েছে। পান চাষের টাকায় আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও সংসারের যাবতীয় খরচ চলে। আরেক পান চাষি সুবোধ কুমার বলেন, পানের বরজ থেকে সারা বছরই পান সংগ্রহ করা যায়। তবে শীতকালে তুলনামূলক কম পান উৎপাদন হয়। কারণ শীতকালে পান পাতা বাড়ে কম। তবে উৎপাদন কম হলেও এ সময় বাজারে পানের দাম থাকে বেশি।
কীর্ত্তিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, এ ইউনিয়নের ছয়-সাতটি গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবার পান চাষ করে। বরজ রয়েছে চার শতাধিক। এ বছর বরজগুলোতে পানের ফলন হয়েছে ভালো। দাম ভালো থাকায় কৃষকরাও বেশ খুশি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মফিদুল ইসলাম বলেন, নওগাঁ সদর উপজেলায় দিন দিন পান চাষ বাড়ছে। অন্যান্য ফসল আবাদের তুলনায় পান চাষ লাভজনক। তাই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করে থাকি। পানের ফলন ভালো করার জন্য আমাদের মাঠ কর্মীরা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহযোগিতা করে থাকেন।