বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ভারত থেকে ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফ্রান্স—দেশে দেশে তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। অনেক দেশেই দেখা দিয়েছে তীব্র খরা। ২০১৯ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা। এর প্রভাব পড়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মানুষের জীবনযাপনে। বাদ যায়নি কৃষি উৎপাদনও। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ২০১৯-২০ মৌসুমে শস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন আগের প্রাক্কলনের তুলনায় কমতে পারে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিল (আইজিসি)। প্রতিষ্ঠানটির মতে, ২০১৯-২০ মৌসুমে শস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন দুই কোটি টনের বেশি কমতে পারে। ওয়ার্ল্ডগ্রেইনডটকম ও এগ্রিমানি সূত্রে এমন তথ্য জানা যায়।
লন্ডনভিত্তিক আইজিসির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে দেশে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ২০১৯-২০ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী ২১৫ কোটি ৬০ লাখ টন শস্য উৎপাদন হতে পারে, যা প্রতিষ্ঠানটির আগের প্রাক্কলনের তুলনায় ২ কোটি ১০ লাখ টন কম। তবে আগের প্রাক্কলনের তুলনায় কমলেও গত মৌসুমের তুলনায় এবার শস্যের বৈশ্বিক উৎপাদনে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।
কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, গত মৌসুমে ইউরোপের দেশগুলোয় খরার তীব্রতা বেশি ছিল। এ কারণে এসব দেশে কৃষি উৎপাদন চলতি বছরের তুলনায় বেশি ব্যাহত হয়েছিল। অন্যদিকে এবার ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে মারাত্মক আকারে খরা ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বৈশ্বিক শস্য উৎপাদন অনেকটাই কমে যেতে পারে।
আইজিসির আগের প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল, ২০১৯-২০ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী ১০৯ কোটি ৫০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন পূর্বাভাসে কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন ২ কোটি ৩০ লাখ টন কমানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত ভুট্টার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩৩ কোটি ৩৫০ লাখ টনে। দেশটির ভুট্টা উৎপাদনের আগের প্রাক্কলন ছিল ৩৬ কোটি ২৪০ লাখ টন।
অন্যদিকে ২০১৯-২০ মৌসুমে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় কৃষিপণ্যটির উৎপাদন বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আইজিসি। প্রতিষ্ঠানটির আগের প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল, ইইউভুক্ত দেশগুলোয় ২০১৯-২০ মৌসুমে ৬ কোটি ৪৪ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে এর পরিমাণ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৭০ লাখ টন।
এদিকে ২০১৯-২০ মৌসুম শেষে ভুট্টার বৈশ্বিক মজুদের পরিমাণ আগের করা প্রাক্কলন ৩১ কোটি ৯০ লাখ টন থেকে কমিয়ে ২৭ কোটি ১০ লাখ টনে স্থির করেছে আইজিসি।
একই অবস্থা বজায় থাকতে পারে সয়াবিনের ক্ষেত্রেও। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে সয়াবিনের বৈশ্বিক উৎপাদন আগের প্রাক্কলন ৩৫ কোটি ৮০ লাখ টন থেকে কমে হতে পারে ৩৪ কোটি ৯০ লাখ টন। আর ২০১৯-২০ মৌসুমে কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩৬ কোটি ৮০ লাখ টনে।
অন্যদিকে ২০১৯-২০ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী গম উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে আইজিসি। এ কারণে গমের বৈশ্বিক উৎপাদন পূর্বাভাসে আগের প্রাক্কলন ৭৩ কোটি ৯০ লাখ টনের সঙ্গে বাড়তি ৩০ লাখ টন যুক্ত করা হয়েছে। ভারত, ইউক্রেন ও ইইউভুক্ত দেশগুলোয় উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনার কারণে ২০১৯-২০ মৌসুমে বৈশ্বিক গম উৎপাদন বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। একই সময়ে গমের বৈশ্বিক মজুদ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টনে। আগের মৌসুমে এর পরিমাণ ছিল ২৬ কোটি ৩০ লাখ টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বব্যাপী গমের মজুদ বাড়তে পারে ১ কোটি ২০ লাখ টন।