ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

তেলাপিয়া ও দেশি মাগুরের মিশ্র চাষ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশি মাগুর আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। এ মাগুরের পুষ্টিমান, স্বাদ ও বাজার মূল্য সবটাই বেশি। জিওল মাছ হিসেবে এ মাছ জীবিত বাজারজাত এবং পরিবহন করা যায় বলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রাকৃতিক জলাশয়ে বিশেষত খাল-বিলে দেশি মাগুর আগের মতো প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে না, তবে এ মাছটির চাষ করা সম্ভব। দেখা গেছে দেশি মাগুরের একক ও মিশ্র চাষ সম্ভব হলেও মিশ্র চাষে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে মাছের দেহের রং ও স্বাস্থ্য আকর্ষণীয় হয়। আমাদের দেশে এর আগে বিদেশি বা ‘আফ্রিকান মাগুর’ মাছের চাষ শুরু হওয়ার পর সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ কারণে মাগুর চাষের প্রতি অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এখন দেশি মাগুর চাষ করে ভোক্তাদের আস্থা ফিরয়ে আনা সম্ভব।

তেলাপিয়ার সঙ্গে দেশি মাগুর চাষের সুবিধা: মনোসেক্স তেলাপিয়ার সঙ্গে দেশি মাগুর চাষে নেতিবাচক প্রভাব তেমন দেখা যায়নি বরং বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যেমন-
* উভয় মাছই অন্যান্য মাছের চেয়ে প্রতিকূল পরিবেশে অধিক সহনশীল।
* পানির অক্সিজেন হ্রাস-বৃদ্ধিতে খুব ত্বরিত প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
* সম্পূরক খাবারে সহজেই অভ্যস্ত।
* পোনা প্রাপ্তিতে ঝামেলা নেই।
* খাদ্যের জন্য একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় না।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বলে চাষির দুশ্চিন্তা কম।

পুকুর প্রস্তুতি : লাভজনক মাছ চাষে পুকুর প্রস্তুতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিকভাবে পুকুর প্রস্তুত করা গেলে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। পুরনো পুকুর হলে পানি শুকিয়ে পাড় মেরামত এবং পুকুরে পাইপের সংযোগ থাকলে তা মেরামত করতে হবে। কোনোভাবেই পাড়ে ইঁদুরের গর্ত বা সুড়ঙ্গ থাকা যাবে না। পুকুরের তলদেশ সমান হওয়া আবশ্যক। বেশি কাদাযুক্ত পুকুর হলে তলদেশ শুকিয়ে তিন-চার ইঞ্চি মাটি তুলে নিলে পুকুরের স্বাস্থ্য ভালো হয়। পুকুর নতুন কাটা হলে তা আয়তাকার এবং এক মিটার গভীর হতে হবে। পুকুরের ভেতরের দিকে বকচর থাকবে। তবে নতুন কাটানো পুকুরে প্রথম বছর মাগুর মাছের বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম হয়।

তেলাপিয়ার পোনা নার্সিং : তেলাপিয়ার মনোসেক্স পোনা হ্যাচারি থেকে নেওয়ার সময় ওজন থাকে ০.১৫-০.২ গ্রাম। এত ছোট পোনা সরাসরি চাষের পুকুরে মজুদ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে না, কেননা এতে পোনা অনেক মারাও যেতে পারে। এমতাবস্থায় প্রকৃত বেঁচে থাকা মাছের সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। এ কারণে পূর্ণ নিরাপত্তাসহ ২০-২৫ দিন তেলাপিয়ার পোনা নার্সিং করার পর গণনা করে মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করতে হবে।

তেলাপিয়ার পোনা মজুদ : নার্সিং করা তেলাপিয়ার পোনা পুকুরে মজুদ করা হয়। এ সময় প্রতি শতাংশে তেলাপিয়ার ১৮০-২০০টি পোনা মজুদ করা যায়। তেলাপিয়ার পোনা আরো কম মজুদ করলে বিক্রির সময় তেলাপিয়ার ওজন তুলনামূলকভাবে বেশি হবে। তেলাপিয়ার পোনা মজুদ করার আগে অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত পুকুর প্রস্তুত করা আবশ্যক। মাটি ও পানির স্থিতি মাপ জেনে নিয়ে করণীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

মাগুরের পোনা নার্সিং : তেলাপিয়ার মতো মাগুরেরও ছোট পোনা সরাসরি চাষে দেওয়া নিরাপদ নয়। ভালো ও মানসম্মত দেশি মাগুরের পোনা সঠিক নিয়মে নার্সিং করা আবশ্যক। এ সময় মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে। মাগুরের পোনা নার্সিং করার সময় শতাংশে ১০০০ পোনা দেওয়া যায়, তবে পানির গুণাগুণ রক্ষা করা ঝুঁকিপূর্ণ হলে আরো কম পোনা নার্সিংয়ে দিতে হবে। মাগুরের পোনা নার্সিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কমপক্ষে তিন-চার ইঞ্চি লম্বা হওয়া পর্যন্ত নার্সিং করা উত্তম। পোনা নার্সিংয়ের সময় নাইলনের জালের বেষ্টনী দেওয়া আবশ্যক।

মাগুরের পোনা মজুদ : তেলাপিয়ার পোনা মজুদ পুকুরে অভ্যস্ত হয়ে গেলে দেশি মাগুরের তিন-চার ইঞ্চি আকারের রোগমুক্ত স্বাস্থ্যবান পোনা প্রতি শতাংশে ১০-১২টি হারে মজুদ করতে হবে। মাগুরের পোনা মজুদের সময় লক্ষ রাখতে হবে সব পোনা যেন একই মানের ও আকারের হয়।

খাবার ব্যবস্থাপনা : তেলাপিয়া এবং দেশি মাগুরের মিশ্র চাষে মানসম্মত সুষম এবং পরিমিত খাবার সরবরাহ অত্যাবশ্যক। তেলাপিয়ার খাদ্যনালি ছোট হওয়ায় একই সময়ে বেশি খাবার গ্রহণ করতে পারে না। এ কারণে দিনে দুই-তিনবার খাবার সরবরাহ করা আবশ্যক। তেলাপিয়া এবং মাগুর মাছের মিশ্র চাষে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এ ক্ষেত্রে তেলাপিয়াকে প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করা হলে মাগুর মাছের জন্য অধিক বা আলাদা খাবার সরবরাহ করার প্রয়োজন নেই। তেলাপিয়ার জন্য সরবরাহকৃত খাবারের উচ্ছিষ্ট খেয়ে মাগুর মাছ বৃদ্ধি পেতে পারে। তেলাপিয়ার জন্য শুরুতে ২০% (দেহ ওজনের শতকরা) খাবার সরবরাহ করা হলেও পরে তা ৩%-এ নেমে আসে। তেলাপিয়ার খাবারে কমপক্ষে ২৬-২৮% প্রোটিন এবং ভিটামিন, খনিজ, এনজাইম সংযোজন করা হলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

অন্যান্য পরিচর্যা : পানির পিএইচ (PH) কমে গেলে চুন প্রয়োগ করা আবশ্যক। পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের নিরাপদ মাত্রা রক্ষা করতে নিয়মিত জিওলাইট এবং গ্যাসের উপস্থিতিতে ‘গ্যাসোনেক্স প্লাস’ ব্যবহার করলে চাষি উপকৃত হবেন। প্রতি মাসে একবার ‘গ্যাসোনেক্স প্লাস’ ব্যবহারে মৎস্য চাষি নিরাপদে থাকতে পারেন।

* ১০-১৫ দিন পর পর তেলাপিয়ার গড় ওজন এবং স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা আবশ্যক। Sampling করার সময় মাগুর মাছ ঠিকভাবে জালে না এলে বেড়জাল টানলে মাগুর ধরা পড়ে। মাছের গায়ের রং, বৃদ্ধি, ত্বকের কোনো অস্বাভাবিক দাগ বা ক্ষত আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে দুই-তিন দিন খাবারের সঙ্গে এজাইম (বায়োজাইম) প্রয়োগ করলে খাদ্য রূপান্তর হার ভালো হয়।

* খাবার সরবরাহে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে খাবারের অপচয় না হয়, আবার চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ করা না হয়।

* মাগুর মাছের দেহ স্বাভাবিক না থাকলে বাজার মূল্য ভালো পাওয়া যায় না। এ কারণে পুকুরে ‘প্রোবায়োটিক্স’ (অ্যাকোয়া ম্যাজিক) ব্যবহারে পুকুরের তলদেশের পরিবেশ এবং মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

* মাগুর মাছের ত্বকে দাগ (সাদা তুলার মতো) দেখা দিলে এগুলোকে ম্যালাকাইট গ্রিন বা ফরমালিনে গোসল করালে উপশম হয়।

* মাছে ক্ষত রোগ দেখা দিলে প্রতি শতকে প্রতি তিন ফুট পানির জন্য এক কেজি হারে লবণ প্রয়োগ করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে প্রতি একরে ৫০০ মিলি Sanitizer হিসেবে ‘পলগার্ড প্লাস’ ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়।

অনেকে মাগুর মাছের ‘মিক্সো ব্যাকটেরিয়া’ নিয়ন্ত্রণে ‘ফুরাজলিডন’ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মনে রাখতে হবে, এটি মৎস্য খাদ্যে অনুমোদিত নয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

তেলাপিয়া ও দেশি মাগুরের মিশ্র চাষ

আপডেট টাইম : ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশি মাগুর আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। এ মাগুরের পুষ্টিমান, স্বাদ ও বাজার মূল্য সবটাই বেশি। জিওল মাছ হিসেবে এ মাছ জীবিত বাজারজাত এবং পরিবহন করা যায় বলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রাকৃতিক জলাশয়ে বিশেষত খাল-বিলে দেশি মাগুর আগের মতো প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে না, তবে এ মাছটির চাষ করা সম্ভব। দেখা গেছে দেশি মাগুরের একক ও মিশ্র চাষ সম্ভব হলেও মিশ্র চাষে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে মাছের দেহের রং ও স্বাস্থ্য আকর্ষণীয় হয়। আমাদের দেশে এর আগে বিদেশি বা ‘আফ্রিকান মাগুর’ মাছের চাষ শুরু হওয়ার পর সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ কারণে মাগুর চাষের প্রতি অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এখন দেশি মাগুর চাষ করে ভোক্তাদের আস্থা ফিরয়ে আনা সম্ভব।

তেলাপিয়ার সঙ্গে দেশি মাগুর চাষের সুবিধা: মনোসেক্স তেলাপিয়ার সঙ্গে দেশি মাগুর চাষে নেতিবাচক প্রভাব তেমন দেখা যায়নি বরং বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যেমন-
* উভয় মাছই অন্যান্য মাছের চেয়ে প্রতিকূল পরিবেশে অধিক সহনশীল।
* পানির অক্সিজেন হ্রাস-বৃদ্ধিতে খুব ত্বরিত প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
* সম্পূরক খাবারে সহজেই অভ্যস্ত।
* পোনা প্রাপ্তিতে ঝামেলা নেই।
* খাদ্যের জন্য একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় না।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বলে চাষির দুশ্চিন্তা কম।

পুকুর প্রস্তুতি : লাভজনক মাছ চাষে পুকুর প্রস্তুতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিকভাবে পুকুর প্রস্তুত করা গেলে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। পুরনো পুকুর হলে পানি শুকিয়ে পাড় মেরামত এবং পুকুরে পাইপের সংযোগ থাকলে তা মেরামত করতে হবে। কোনোভাবেই পাড়ে ইঁদুরের গর্ত বা সুড়ঙ্গ থাকা যাবে না। পুকুরের তলদেশ সমান হওয়া আবশ্যক। বেশি কাদাযুক্ত পুকুর হলে তলদেশ শুকিয়ে তিন-চার ইঞ্চি মাটি তুলে নিলে পুকুরের স্বাস্থ্য ভালো হয়। পুকুর নতুন কাটা হলে তা আয়তাকার এবং এক মিটার গভীর হতে হবে। পুকুরের ভেতরের দিকে বকচর থাকবে। তবে নতুন কাটানো পুকুরে প্রথম বছর মাগুর মাছের বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম হয়।

তেলাপিয়ার পোনা নার্সিং : তেলাপিয়ার মনোসেক্স পোনা হ্যাচারি থেকে নেওয়ার সময় ওজন থাকে ০.১৫-০.২ গ্রাম। এত ছোট পোনা সরাসরি চাষের পুকুরে মজুদ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে না, কেননা এতে পোনা অনেক মারাও যেতে পারে। এমতাবস্থায় প্রকৃত বেঁচে থাকা মাছের সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। এ কারণে পূর্ণ নিরাপত্তাসহ ২০-২৫ দিন তেলাপিয়ার পোনা নার্সিং করার পর গণনা করে মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করতে হবে।

তেলাপিয়ার পোনা মজুদ : নার্সিং করা তেলাপিয়ার পোনা পুকুরে মজুদ করা হয়। এ সময় প্রতি শতাংশে তেলাপিয়ার ১৮০-২০০টি পোনা মজুদ করা যায়। তেলাপিয়ার পোনা আরো কম মজুদ করলে বিক্রির সময় তেলাপিয়ার ওজন তুলনামূলকভাবে বেশি হবে। তেলাপিয়ার পোনা মজুদ করার আগে অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত পুকুর প্রস্তুত করা আবশ্যক। মাটি ও পানির স্থিতি মাপ জেনে নিয়ে করণীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

মাগুরের পোনা নার্সিং : তেলাপিয়ার মতো মাগুরেরও ছোট পোনা সরাসরি চাষে দেওয়া নিরাপদ নয়। ভালো ও মানসম্মত দেশি মাগুরের পোনা সঠিক নিয়মে নার্সিং করা আবশ্যক। এ সময় মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে। মাগুরের পোনা নার্সিং করার সময় শতাংশে ১০০০ পোনা দেওয়া যায়, তবে পানির গুণাগুণ রক্ষা করা ঝুঁকিপূর্ণ হলে আরো কম পোনা নার্সিংয়ে দিতে হবে। মাগুরের পোনা নার্সিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কমপক্ষে তিন-চার ইঞ্চি লম্বা হওয়া পর্যন্ত নার্সিং করা উত্তম। পোনা নার্সিংয়ের সময় নাইলনের জালের বেষ্টনী দেওয়া আবশ্যক।

মাগুরের পোনা মজুদ : তেলাপিয়ার পোনা মজুদ পুকুরে অভ্যস্ত হয়ে গেলে দেশি মাগুরের তিন-চার ইঞ্চি আকারের রোগমুক্ত স্বাস্থ্যবান পোনা প্রতি শতাংশে ১০-১২টি হারে মজুদ করতে হবে। মাগুরের পোনা মজুদের সময় লক্ষ রাখতে হবে সব পোনা যেন একই মানের ও আকারের হয়।

খাবার ব্যবস্থাপনা : তেলাপিয়া এবং দেশি মাগুরের মিশ্র চাষে মানসম্মত সুষম এবং পরিমিত খাবার সরবরাহ অত্যাবশ্যক। তেলাপিয়ার খাদ্যনালি ছোট হওয়ায় একই সময়ে বেশি খাবার গ্রহণ করতে পারে না। এ কারণে দিনে দুই-তিনবার খাবার সরবরাহ করা আবশ্যক। তেলাপিয়া এবং মাগুর মাছের মিশ্র চাষে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এ ক্ষেত্রে তেলাপিয়াকে প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করা হলে মাগুর মাছের জন্য অধিক বা আলাদা খাবার সরবরাহ করার প্রয়োজন নেই। তেলাপিয়ার জন্য সরবরাহকৃত খাবারের উচ্ছিষ্ট খেয়ে মাগুর মাছ বৃদ্ধি পেতে পারে। তেলাপিয়ার জন্য শুরুতে ২০% (দেহ ওজনের শতকরা) খাবার সরবরাহ করা হলেও পরে তা ৩%-এ নেমে আসে। তেলাপিয়ার খাবারে কমপক্ষে ২৬-২৮% প্রোটিন এবং ভিটামিন, খনিজ, এনজাইম সংযোজন করা হলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

অন্যান্য পরিচর্যা : পানির পিএইচ (PH) কমে গেলে চুন প্রয়োগ করা আবশ্যক। পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের নিরাপদ মাত্রা রক্ষা করতে নিয়মিত জিওলাইট এবং গ্যাসের উপস্থিতিতে ‘গ্যাসোনেক্স প্লাস’ ব্যবহার করলে চাষি উপকৃত হবেন। প্রতি মাসে একবার ‘গ্যাসোনেক্স প্লাস’ ব্যবহারে মৎস্য চাষি নিরাপদে থাকতে পারেন।

* ১০-১৫ দিন পর পর তেলাপিয়ার গড় ওজন এবং স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা আবশ্যক। Sampling করার সময় মাগুর মাছ ঠিকভাবে জালে না এলে বেড়জাল টানলে মাগুর ধরা পড়ে। মাছের গায়ের রং, বৃদ্ধি, ত্বকের কোনো অস্বাভাবিক দাগ বা ক্ষত আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে দুই-তিন দিন খাবারের সঙ্গে এজাইম (বায়োজাইম) প্রয়োগ করলে খাদ্য রূপান্তর হার ভালো হয়।

* খাবার সরবরাহে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে খাবারের অপচয় না হয়, আবার চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ করা না হয়।

* মাগুর মাছের দেহ স্বাভাবিক না থাকলে বাজার মূল্য ভালো পাওয়া যায় না। এ কারণে পুকুরে ‘প্রোবায়োটিক্স’ (অ্যাকোয়া ম্যাজিক) ব্যবহারে পুকুরের তলদেশের পরিবেশ এবং মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

* মাগুর মাছের ত্বকে দাগ (সাদা তুলার মতো) দেখা দিলে এগুলোকে ম্যালাকাইট গ্রিন বা ফরমালিনে গোসল করালে উপশম হয়।

* মাছে ক্ষত রোগ দেখা দিলে প্রতি শতকে প্রতি তিন ফুট পানির জন্য এক কেজি হারে লবণ প্রয়োগ করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে প্রতি একরে ৫০০ মিলি Sanitizer হিসেবে ‘পলগার্ড প্লাস’ ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়।

অনেকে মাগুর মাছের ‘মিক্সো ব্যাকটেরিয়া’ নিয়ন্ত্রণে ‘ফুরাজলিডন’ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মনে রাখতে হবে, এটি মৎস্য খাদ্যে অনুমোদিত নয়।