ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ৭ কোটি ছাড়াল

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই দ্রুত টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে, দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক, বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ।

চলতি বছরের মে মাস শেষে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৪ লাখ। আর একক মাস হিসাবে মে-তে লেনদেনের পরিমাণ ৪২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছরই ঈদ উৎসবকে কেন্দ্রে করে এমএফএসে এ লেনদেন বাড়ে। এছাড়া গত ১৯ মে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন সীমা বাড়ানো হয়েছে। সবমিলিয়ে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে এ সেবায়।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। যাদের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৬ কোটি ৮২ লাখ ৮২ হাজার। অর্থাৎ এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

এদিকে টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থাকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই হিসাবে মে শেষে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২১ লাখ ২৯ হাজার।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এমএফএসে গত মে মাসে প্রতিদিন গড়ে ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আদান-প্রদান হয়েছে। মে মাসে মোট লেনদেন হয়েছে ৪২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ২০ দশমকি ৮ শতাংশ বেশি। গত এপ্রিলে লেনদেন হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৭৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৩১২ জন।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণ ইত্যাকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন পছন্দের মাধ্যম। মে মাসে সব ধরনের সেবায় লেনদেন বেড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, আলোচিত মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১৬ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ১৫ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে এক হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪৮২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৬০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সরকারি পরিশোধ ৩২২ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৬১১ কোটি টাকা।

২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমএফএস লেনদেনের সর্বশেষ ১৯ মে’র নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন গ্রাহক তার অ্যাকাউন্টে দিনে পাঁচ বারে ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন বা জমা করতে পারবেন। আর মাসে ২৫ বারে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ক্যাশ ইন করা যায়। আগে প্রতিদিন দুই বারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা করতে পারতো একজন গ্রাহক। আর মাসে ২০ বারে এক লাখ টাকা ক্যাশ ইন করতে পারতো।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ৭ কোটি ছাড়াল

আপডেট টাইম : ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই দ্রুত টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে, দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক, বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ।

চলতি বছরের মে মাস শেষে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৪ লাখ। আর একক মাস হিসাবে মে-তে লেনদেনের পরিমাণ ৪২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছরই ঈদ উৎসবকে কেন্দ্রে করে এমএফএসে এ লেনদেন বাড়ে। এছাড়া গত ১৯ মে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন সীমা বাড়ানো হয়েছে। সবমিলিয়ে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে এ সেবায়।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। যাদের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৬ কোটি ৮২ লাখ ৮২ হাজার। অর্থাৎ এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

এদিকে টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থাকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই হিসাবে মে শেষে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২১ লাখ ২৯ হাজার।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এমএফএসে গত মে মাসে প্রতিদিন গড়ে ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আদান-প্রদান হয়েছে। মে মাসে মোট লেনদেন হয়েছে ৪২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ২০ দশমকি ৮ শতাংশ বেশি। গত এপ্রিলে লেনদেন হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৭৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৩১২ জন।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণ ইত্যাকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন পছন্দের মাধ্যম। মে মাসে সব ধরনের সেবায় লেনদেন বেড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, আলোচিত মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১৬ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ১৫ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে এক হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪৮২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৬০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সরকারি পরিশোধ ৩২২ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৬১১ কোটি টাকা।

২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমএফএস লেনদেনের সর্বশেষ ১৯ মে’র নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন গ্রাহক তার অ্যাকাউন্টে দিনে পাঁচ বারে ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন বা জমা করতে পারবেন। আর মাসে ২৫ বারে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ক্যাশ ইন করা যায়। আগে প্রতিদিন দুই বারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা করতে পারতো একজন গ্রাহক। আর মাসে ২০ বারে এক লাখ টাকা ক্যাশ ইন করতে পারতো।