তৎপরতার পরও খেলাপি ঋণ না কমায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা। খেলাপি ঋণ বাড়ায় প্রভিশন রাখতে গিয়ে ঘাটতি মেটাতে হিমশিম অবস্থায় পড়ছে ব্যাংক। আর ব্যাংকের টানাটানির অবস্থার মধ্যে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি বেড়ে গেছে, প্রতিদিনই ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ছে।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর একটানা পতনের মুখে পড়ে পুঁজিবাজার। বোনাস লভ্যাংশ, কম্পানির রিটেইনড আর্নিংস ও রিজার্ভের ওপর করারোপের সিদ্ধান্তে শেয়ার বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একাধিক বৈঠকের পর ক্রমেই পতন অবস্থার উন্নতি হয়। কিন্তু আবারও পতনের মধ্যে পড়েছে পুঁজিবাজার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি অন্যতম। বিটিআরসির সঙ্গে গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্ব ও এক কম্পানির আইপিও সাবস্ক্রিপশনে মূলধন বেরিয়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র বলছে, বছর বছর খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকায় ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীর অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। খেলাপি ঋণের ঘাটতি মেটাতে গিয়ে ব্যাংক বিনিয়োগকারীকে বঞ্চিত করছে। ২০১৮ সালে ব্যাংক বিশাল মুনাফা করলেও হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া নগদ অর্থ হাতে পায়নি বিনিয়োগকারীরা। নামমাত্র বোনাস লভ্যাংশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বকেয়া পাওনা নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও গ্রামীণফোন দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। বকেয়া পরিশোধ করতে টালবাহানায় কঠোর অবস্থান নিচ্ছে সরকার। এমনকি লাইসেন্স বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্তের দিকেও হাঁটছে সরকার। আর এই দ্বন্দ্বে লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম। তালিকাভুক্ত বড় কম্পানিটির শেয়ারের দাম কমায় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ ছাড়া পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলনে একটি কম্পানি আইপিও সাবস্ক্রিপশন চলায় অনেকে প্রাইমারি মার্কেটে শেয়ার কিনতে বিদ্যমান কেনা শেয়ার বিক্রি করছে। কাজেই বড় অঙ্কের মূলধন পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। কারণ ১৫০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলনে কয়েক গুণ আইপিও আবেদন পড়তে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে নতুন করে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের শেয়ার বিক্রি বেড়েছে। আর বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় এই খাতের কম্পানির শেয়ারের দামও হ্রাস পাচ্ছে। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে দাম কমার মধ্যেই রয়েছে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম। সর্বশেষ গতকাল ৭০ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে আর ৬ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে। তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২১টির শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে। মাত্র দুটি কম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সাত ব্যাংকের শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মৌলভিত্তির ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমতে কমতে অনেকটা তলানিতে নেমেছে। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ছয় কম্পানির শেয়ার এখন ১০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে ছয় কম্পানি। আর অন্যগুলোও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থার মধ্যে নেই।
এদিকে ডিএসইর তথ্য মতে, গত ২৭ জুন গ্রামীণফোনের শেয়ার লেনদেন হয় ৩৬৫.১০ টাকায়। ২৯ আগস্ট গতকাল কম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন হয়েছে ৩১৩ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম কমেছে ৫২ টাকা। এদিকে দেশে ব্যবসা করা বিদেশি কম্পানিগুলোর মধ্যে একটি শতভাগ রপ্তানিমুখী রিং সাইন টেক্সটাইলের আইপিও সাবস্ক্রিপশনে চাঁদা গ্রহণ শুরু হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট থেকে এই চাঁদা গ্রহণ চলবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এতে পুঁজিবাজারে বড় একটি অংশের মূলধন বের হচ্ছে বলেও জানায় সংশ্লিষ্টরা।
ডিবিএ সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ার বিক্রির চাপ থাকায় শেয়ারের দাম কমছে, যাতে সূচকও কমছে।’
সূচকের পতন চলছেই : সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার দেশের দুই পুঁজিবাজার ডিএসই ও সিএসই সূচক হ্রাস পেয়েছে। ডিএসইতে শেয়ার বিক্রির চাপ থাকায় ৬৬ শতাংশ কম্পানির শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে। আর সিএসইতে ৭৬ শতাংশ কম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।