-‘কি ভাই এত মিষ্টি? ছেলে হইসে নিশ্চই।’
-‘না, ভাই, মেয়ে হইসে।’
-‘আবারও মেয়ে! ভাই আপনি পারেনও ’।
লোকের টিপ্পনি শোনা বাবা বাসায় এসে তৃতীয় কন্যাকে কোলে তুলে নিলেন। ছেলের ইচ্ছায় তৃতীয় কন্যা। কিন্তু সন্তান তো আমারই। ‘বাবা’ ডাক তো ছেলে হলেও দিত, মেয়েও তাই দেবে। তাহলে?
আজ আইন না সমাজের কিছু নোংরা মনোভাব নিয়ে কথা বলি।
মেয়েগুলো বড় হয় তার বাবা, মায়ের বেষ্টনীতে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যায় বাবা মার অস্তিত্ব। বাবা, মা চিন্তায় অস্থির মেয়ে কার ঘরে বাস করবে? কার শাসনে শাসিত হবে? কখনও কোনো বাড়িতে দেয়া হয় আদরের কারখানা। কখনো শাসনের কারখানা। দুটোই দেয়া হয় অনিশ্চিত অনিয়ন্ত্রিত ভবিষ্যৎ চিন্তা করে।
বাবা মা চিন্তা করেন, কখনও স্বামীর বাড়িতে যদি মেয়েটি আদর না পায় তাহল?! তাই আগেই আদর দিয়ে সাজিয়ে দিই। আবার কখনো ভাবেন যদি সেখানে (শ্বশুর বাড়ি) গিয়ে শাসন না মানতে পারে তাহলে? কান ফোঁড়ানোরর আগে থেকেই শুরু সামাজিক শাসন।
ওহ আচ্ছা, মেয়েদের নাকি রাগ থাকতে নেই?
সেদিন কেউ একজন কোন একটি মামলার ব্যাপারে বলছিল আর আমি শুনলাম, কথায় নাকি আছে ‘ছেলের রাগ থাকলে হয় বাদশাহ, মেয়ের রাগ থাকলে বেশ্যা’।
ভেবে দেখুন, প্রবাদের আড়ালে সুশীল সমাজপতি বুঝিয়ে ঐতিহ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন এক আজব সমতা, যাতে নারীরা তার অধিকার খর্ব হলেও পতিতা না হয়ার স্বার্থে চুপ মেরে যায়। জি আমরা লজ্জাবতী।
আচ্ছা, মেয়েদের কথা তো হলো; বাবার কথা আবার ভাবছি, শুধুমাত্র কন্যা সন্তান এর জনক হওয়ার জন্য বাবা উপাধির মানুষটি পারিবারিক আচার বিচারে গেলেও, তার ঔরসজাত কন্যা বাবার প্রতিনিধিত্ব করলে কন্যাকে শুনতে হয় ‘why are you taking leadership?’। তোমার বাবা তো বেঁচে আছেন। পুত্রের কথা বোধকরি বলার প্রয়োজন নাই, সমাজে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আছে।
বাবা কেও তার ছোট্ট নেশা ধুমপানের অস্ত্র ও অসুস্থতায় নিজেকে কিনতে হয়। সমাজ যে তাকে বাঁচতে দেয় না। পরিবার (আত্মীয়) এবং সমাজ মাথায় সেট করে দেয় এবং তার আগে পিছে নোংরা আংগুল তুলে রাখে, বাবার দিকে। আচ্ছা কন্যার পিতাকে কি আলাদা নামে উপাধিত করবার প্রয়োজন আছে কি?
ভাবছি বাবা বলাতে না শুধুই পুত্রের পিতা ভেবে বসেন। বাবা মানুষটি তার সামাজিক সক্ষমতা বোঝানোর জন্য নিজেকে সক্ষম রাখার জন্য প্রকৃতির সাথে যুদ্ধে নামে। কিন্তু প্রকৃতি তার কাজ ঠিকই করে যায়। পুরুষ শাসিত সমাজ এই জাতির লোভের কারণে কন্যা শিশুর পরিবার তথা কন্যাকে করে মানসিক নির্যাতন।
পুত্র বাবার কথা- বাবার কাজ ঘাড়ে নিলে ‘বাহ, যোগ্য বাবার যোগ্য পুত্র’, সমাজের করতালি। আর কন্যার ক্ষেত্রে? উত্তর টা আপনার জন্য ছেড়ে দিলাম। মা হীন পুত্র সেই পিতারও কপালে জুটে না। তথাপি তার মতই কারো ঘরে মা এলে যা করে তার নাম আমি দিলাম ‘নাস্তিক’।
সবশেষে প্রমাণ সহকারে ‘পুত্র প্রিয়’ বাবার তথাকথিত লোভী সমাজের জন্য চিরন্তন সত্য রেফারেন্স টেনে লিখা শেষ করছি –
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর যোগ্য কন্যা আজ আমাদের এবং আমাদের বর্তমানের পুরো বিশ্বে অন্যতম যোগ্য নেত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তিনিও কিন্তু আল্লাহর রহমতে চার কন্যার পিতা হয়েছেন।
So, who the hell are you?
লেখক: আইনজীবী ও রেডিও জকি