বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বলে কয়ে হার্ট অ্যাটাক হয় না। এটা হঠাৎ করেই হয়ে থাকে। এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন এমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই। এটা হলো এমন একটি কার্ডিয়াক ইভেন্ট, যেখানে হার্টের অংশবিশেষ পর্যাপ্ত রক্ত পায় না। এর ফলে স্থায়ী ক্ষতি বা মৃত্যু হতে পারে।
প্রত্যেক হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু ঘটে না, যারা এই ঘটনার সম্মুখীন হন তাদের অধিকাংশই (সংখ্যার হিসাবে প্রতি ১০ জনে ১ জন) বেঁচে থাকেন। তবে কারো একবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেলে তার জীবনে কিছু পরিবর্তন আবশ্যক হয়ে পড়ে, অন্যথায় দ্বিতীয়বারে বড়সড় কার্ডিয়াক ইভেন্টের ঝুঁকি রয়েছে। এই ঘটনা যত বড় হবে, মৃত্যুর ঝুঁকি তত বেশি। কারো কারো ক্ষেত্রে এরকম ঘটনার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাটা মানসিক চাপের হতে পারে।
একটি অপ্রত্যাশিত হার্ট অ্যাটাকের পর একজন রোগী স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন না, যেমনটা ঘটে স্ট্রোক হলে। তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, করতে পারেন পূর্ণোদ্দমে কাজ। তবে এটা ঠিক যে একটি হার্ট অ্যাটাক মৃত্যু ঘটানোর মতো যথেষ্ট শক্তিশালী না হলেও একজন রোগীর জীবনে কিছু বিষয়ের অবতারণা ঘটতে পারে। এখানে প্রথমবার হার্ট অ্যাটাকের পর যা হতে পারে তার একটি তালিকা দেয়া হলো।
* দ্রুত হাসপাতাল ছাড়তে পারেন: যেসব মানুষের তীব্র হার্ট অ্যাটাক হয়, সাধারণত তাদের এক সপ্তাহ বা আরো বেশি সময় হাসপাতালে অবস্থানের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে- তারা হার্ট অ্যাটাকের পর একদিন বা দুইদিনের মধ্যে ঘরে ফিরতে পারেন, বলেন হাউসটনে অবস্থিত টেক্সাস হার্ট ইনস্টিটিউটের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ব্রায়ানা কস্টিলো। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকেরা রোগীদের অবরুদ্ধ রক্তনালী খুলতে একটি স্টেন্ট বসাই। এই পদ্ধতি অধিকাংশ রোগীদের ক্ষেত্রে এতটাই সহনীয় যে তারা আসলেই দ্রুত ঘরে ফিরে আসতে পারেন।’
* খুব শিগগির স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে পারেন: হার্ট অ্যাটাক এমনকোনো পরিস্থিতি নয় যেখানে শারীরিক নিরাময়ের জন্য সোফা বা বিছানায় সপ্তাহের পর সপ্তাহ বিশ্রাম নিতে হবে। ডা. কস্টিলো বলেন, ‘হার্ট অ্যাটাকে পেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হলে আমরা রোগীর ধমনীকে অল্পসময়েই সারিয়ে তুলতে পারি, যার ফলে তিনি কয়েকদিনের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন। তিনি এতটাই স্বাভাবিক হতে পারেন যে যেদিন হাসপাতাল ছাড়বেন সেদিনই হাঁটতে ও সিঁড়িতে ওঠানামা করতে পারেন।’ তবে শ্রমসাধ্য কাজ (যেমন- দৌঁড়ানো, ভারোত্তোলন ও মেনুয়্যাল লেবার) করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেকেই হার্ট অ্যাটাকের পর এক সপ্তাহের মধ্যে গাড়ি চালাতে পারেন এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সহবাসও সম্ভব হতে পারে।
* বাকি জীবন ওষুধ চালিয়ে যেতে হতে পারে: বেশিরভাগ রোগীই এটা প্রত্যাশা করেন না। অনেকের কাছে এটা বিশাল এক ধাক্কা। ডা. কস্টিলো বলেন, ‘হার্ট অ্যাটাকের পূর্বে অনেক রোগীই ওষুধ ব্যবহার করেন না, তাই তারা যখন শুনেন যে এখন থেকে চারটি ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে তখন তারা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না। তারা বেশ হতাশ হয়ে পড়েন।’ হার্ট অ্যাটাকের পর একজন রোগীর প্রতিদিন কমপক্ষে একবার কম ডোজের অ্যাসপিরিন, রক্ত জমাট প্রতিরোধী ওষুধ, কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ ও বিটা ব্লকার গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। প্রথম দুটি রক্তকে পাতলা করে স্থাপনকৃত স্টেন্টটিকে উন্মুক্ত রাখবে এবং পরের দুটি হার্টকে ভবিষ্যতে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। ডা. কস্টিলো বলেন, ‘অবশিষ্ট জীবন অ্যাসপিরিন এবং অন্তত একবছর অন্য ওষুধগুলো অব্যাহত রাখার প্রয়োজন হবে। আমরা আরেকটি হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে অনেক রোগীকে বাকি জীবনের জন্য ওষুধ লিখে দিয়ে থাকি।’
* কার্ডিয়াক পুনর্বাসনের প্রয়োজন হতে পারে: হার্ট অ্যাটাকের পর আপনার কার্ডিওলজিস্ট আপনাকে কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশনের (পুনর্বাসন) পরামর্শ দিতে পারেন। এটা হলো হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর, অ্যানজিওপ্লাস্টি অথবা হার্ট সার্জারির পর হার্ট-রক্তনালীর স্বাস্থ্যোন্নয়নের কর্মসূচি। একজন রোগী কার্ডিয়াক পুনর্বাসনে গেলে হার্টের জন্য যা ভালো তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। ডা. কস্টিলো বলেন, ‘হার্ট অ্যাটাকের পর কার্ডিয়াক পুনর্বাসনে জড়িত হওয়াতে স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধার দ্রুত হয়েছে।’ কার্ডিয়াক পুনর্বাসনের তিনটি সমান গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে: শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ। এটা হলো চিকিৎসক, ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের একটি দলগত প্রচেষ্টা। সবার লক্ষ্য একটাই, রোগীর নিরাময় যেন ঠিকঠাকভাবে হয়। কয়েক মাস কার্ডিয়াক পুনর্বাসনে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, তবে প্রতিদিন নয়।
* জীবনযাপনে নজরদারি আবশ্যক হয়ে পড়ে: হার্ট অ্যাটাক জনিত কারণে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক আপনাকে এর রিস্ক ফ্যাক্টর সম্পর্কে জানাতে পারেন। সেসব বিষয়কে রিস্ক ফ্যাক্টর বলা হয় যা শরীরে কোনো সমস্যা তৈরি করে। হার্ট অ্যাটাকের উল্লেখযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টর হলো- অস্বাস্থ্যকর খাবার, শরীরচর্চার ঘাটতি ও ধূমপানের অভ্যাস। চিকিৎসক আপনাকে হার্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাসগুলো পরিহার করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে উৎসাহিত করতে পারেন। তবে এটা শুনতে সহজ মনে হলেও বাস্তবায়ন বেশ কঠিনই বটে, যেমন- বেশিরভাগ রোগীই ধূমপান সহজে বর্জন করতে পারেন না। ডা. কস্টিলো বলেন, ‘আমরা একজন রোগীকে ধূমপান করতে নিষেধ করলেও হাসপাতাল থেকে বেরিয়েই তিনি সিগারেটে আগুন ধরিয়ে ফেলেন! প্রায় প্রত্যেক রোগীরই প্রতিষ্ঠিত বদাভ্যাস রয়েছে, যা পরিহারের জন্য তাদেরকে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়।’ প্রতিসপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট শরীরচর্চা করলে, প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে, মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কমালে ও সিগারেটে আগুন ধরানোর মতো বাজে অভ্যাস ছেড়ে দিলে দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বিস্ময়কর হারে হ্রাস পাবে। জীবনে একবার হার্ট অ্যাটাক হলে নিয়মিত কার্ডিওলজিস্টের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া ভালো।
* মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন হতে পারে: একটি হার্ট অ্যাটাক একজন মানুষের মানসিক বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তিনি মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতায় আচ্ছন্ন হতে পারেন। ডা. কস্টিলো বলেন, ‘রোগীরা খুবই ভয়ে থাকেন যে যেকোনোসময় আরেকটি হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এটা তাদের প্রাত্যহিক জীবনকে কঠিন করে তোলে।’ অমূলক ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে প্যানিক অ্যাটাকের সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও আতঙ্ক সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে মনে হলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে পারেন। এছাড়া হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এমন মানুষের সঙ্গে কথা বলেও মানসিক বিপর্যয় এড়ানো যেতে পারে। প্রয়োজনে নিজে উদ্যোগ নিয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এমন মানুষদের একটি সংঘ তৈরি করতে পারেন অথবা সোশ্যাল মিডিয়াতে গ্রুপ খুলতে পারেন।