ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্নীতিতে ডুবছে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টি (বিএসএমএমইউ) বর্তমানে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ডুবতে বসেছে। নিয়োগ, কেনাকাটা, পদোন্নতিসহ কিছুই হয় না ঘুষ ছাড়া।

সিনিয়র, জুনিয়র ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে বলছেন, বিএসএমএইউতে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নেই। এখন সর্বাঙ্গে দুর্নীতির ক্ষতচিহ্ন। সিংহভাগ ডাক্তারদের মধ্যে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

তাদের মতে, চিকিৎসা সেবার মানও ভেঙে পাড়ার উপক্রম। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ভিসিসহ একটি গ্রুপের বিরুদ্ধে ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বলা হয়। যার নেতৃত্বে রয়েছেন ভিসি নিজেই বলে সিনিয়র চিকিৎসকরা দাবি করেছেন।

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশ-বিদেশে চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণায় সুনাম অর্জন করে চলছিল। বিএনপিসহ চার দলীয় সরকারের আমলে সেই সময় এক ভিসির নেতৃত্বে একটি গ্রুপ নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, কেনাকাটাসহ দুর্নীতির দুর্গে পরিণত করেছিল। ঐ সময় চিকিৎসক সমাজের মধ্যে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। বর্তমান ভিসির আমলেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে।

নিয়োগ, কেনাকটা, পদোন্নতি ও অব্যবস্থাপনা দৃশ্যমান। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গাড়িচালকও জানান, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুষ ছাড়া কিছুই হয় না। এই প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে ঐ চালক বলেন, এমন দুর্নীতি আমি জীবনেও দেখিনি। চিকিৎসা পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তি এভাবে দুর্নীতি করতে পারে।

প্রখ্যাত নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ভিসি থাকাকালে এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা, শিক্ষা, গবেষণায় ব্যাপক উন্নয়ন অর্জিত হয়। যার সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।

বর্তমান ভিসির আমলে সেই সুনাম মুছে যাচ্ছে। সিনিয়র অধ্যাপকরা এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এই ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন।

প্রতিনিধি টানা ১০ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার তথ্য পান। একাধিক সিনিয়র চিকিৎসক বলেন, একজন সিনিয়র ডাক্তার এভাবে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে—তা ভাবতে অবাক লাগে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে, ভিসির পিএস ডাক্তার রাসেলের স্ত্রী ছাত্রলীগের ঐ নেতাকে ফোন করে বলেন, তুমি আরও ১২ লাখ টাকা নিয়ে আমার সাহেবের চেম্বারে যাও, আমার কথা হয়েছে, তোমার কাজ হয়ে যাবে।

ঐ নেতা ১২ লাখ টাকা নিয়ে ভিসির পিএস রাসেলের চেম্বারে যান, ১২ লাখ টাকা হাতে দিলে পিএস বলেন, ১২ লাখ টাকা আমার স্যারকে দেওয়া যাবে, আরও বেশি টাকা লাগবে। আমারটা কোথায়? এই অডিও রেকর্ড এই প্রতিনিধির কাছে রয়েছে।

এই রাসেল দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা গ্রুপের নেতৃত্বে দেন। তার মাধ্যমেই সব দুর্নীতি পরিচালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। এই ভিসি মাত্র আড়াই বছরে ১ হাজার ৮০০ ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মাত্র ৫০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি প্রায় ১ হাজার ৩০০ জনকে এডহক ভিত্তিতে সরাসরি নিয়োগ দেন। এই নিয়োগে নিম্নে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা উেকাচ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

সিনিয়র অধ্যাপককে বিভাগের চেয়ারম্যান নিয়োগ না করে, তার ছাত্রকে নিয়োগ দিয়েছেন। এখানেও মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ধরনের আরও ১০টি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন সিনিয়র ডাক্তাররা।

বিএসএমএমইউয়ের সাগর চুরির মতো কোনো দুর্নীতি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়েছে কি না সিনিয়র ডাক্তাররা তা জানেন না। এই ভিসির কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবারতন্ত্র করার শীর্ষে রয়েছেন বর্তমান ভিসি।

অতীতে কোনো কোনো ভিসির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ থাকলেও, বর্তমান ভিসির মতো স্বজনপ্রীতি কেউ করেননি। তিনি ক্ষমতাবলে সন্তানসহ পরিবারের ১১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের নামে করেছেন হরিলুট।

কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করেননি। সার্টিফিকেটে, লেখক ও মনীষী বাণীতে ভুলে ভরা ছিল। এ নিয়ে অডিটে লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কোনো নিয়মনীতিতে তোয়াক্কা করেননি। এই দুর্নীতির সঙ্গে ভিসিসহ একটি গ্রুপ জড়িত—যারা তার কথায় উঠবস করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ৭৫০ বেডের একটি সুপার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটা অবকাঠামো, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ আলাদা। এটা হবে সব ধরনের জটিল রোগসহ সব ধরনের রোগী সুচিকিৎসা পাবে—এমন মনোভাব নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ১৩০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেয়। সেই ঋণে গত জুন মাসে হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। নির্মাণকাজ পূর্ণাঙ্গ শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে এই ভিসি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে এটা উদ্বোধন করান।

কিন্তু এই হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে এখনো চালু হয়নি। তার খবরদারির কারণে এই হাসপাতালটিও এখন রসাতলে যাওয়ার উপক্রম। ইতিমধ্যে একজন রোগী এনজিওগ্রাম করতে গিয়ে টেবিলেই মারা গেছেন।

এটা নিয়ে হইচই শুরু হয়। মূল ভবন থেকে ডাক্তার এনে এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি কোনো রকম চালানো হচ্ছে। কিন্তু এটা এমন হওয়ার কথা ছিল না। এটা এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ইতিমধ্যে ডাক্তার-নার্স নিয়োগের নামেও দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খান জানান, এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি পরিচালনা, প্রশাসনসহ আলাদা অবকাঠামো থাকার কথা। কিন্তু চলছে উলটো পথে।

যার কারণে অব্যবস্থাপনা হওয়া স্বাভাবিক। এই অবস্থায় চললে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি হয়ে যাবে একটি ক্লিনিকের মতো। এমন দাবি করছেন সিনিয়র ডাক্তাররা। তারা বলেন, এটার চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সিনিয়র ডাক্তারদের কাজে লাগানো হয় না।

এই ব্যাপারে ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এখানে চিকিৎসা, সেবা ও গবেষণার মান উন্নত হয়েছে। নিয়োগ, টেন্ডারসহ সব প্রক্রিয়াই নিয়মমাফিক হয়েছে। কোনো দুর্নীতি হয়নি।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

দুর্নীতিতে ডুবছে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট টাইম : ০৬:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩

দেশের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টি (বিএসএমএমইউ) বর্তমানে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ডুবতে বসেছে। নিয়োগ, কেনাকাটা, পদোন্নতিসহ কিছুই হয় না ঘুষ ছাড়া।

সিনিয়র, জুনিয়র ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে বলছেন, বিএসএমএইউতে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নেই। এখন সর্বাঙ্গে দুর্নীতির ক্ষতচিহ্ন। সিংহভাগ ডাক্তারদের মধ্যে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

তাদের মতে, চিকিৎসা সেবার মানও ভেঙে পাড়ার উপক্রম। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ভিসিসহ একটি গ্রুপের বিরুদ্ধে ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বলা হয়। যার নেতৃত্বে রয়েছেন ভিসি নিজেই বলে সিনিয়র চিকিৎসকরা দাবি করেছেন।

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশ-বিদেশে চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণায় সুনাম অর্জন করে চলছিল। বিএনপিসহ চার দলীয় সরকারের আমলে সেই সময় এক ভিসির নেতৃত্বে একটি গ্রুপ নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, কেনাকাটাসহ দুর্নীতির দুর্গে পরিণত করেছিল। ঐ সময় চিকিৎসক সমাজের মধ্যে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। বর্তমান ভিসির আমলেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে।

নিয়োগ, কেনাকটা, পদোন্নতি ও অব্যবস্থাপনা দৃশ্যমান। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গাড়িচালকও জানান, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুষ ছাড়া কিছুই হয় না। এই প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে ঐ চালক বলেন, এমন দুর্নীতি আমি জীবনেও দেখিনি। চিকিৎসা পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তি এভাবে দুর্নীতি করতে পারে।

প্রখ্যাত নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ভিসি থাকাকালে এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা, শিক্ষা, গবেষণায় ব্যাপক উন্নয়ন অর্জিত হয়। যার সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।

বর্তমান ভিসির আমলে সেই সুনাম মুছে যাচ্ছে। সিনিয়র অধ্যাপকরা এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এই ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন।

প্রতিনিধি টানা ১০ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার তথ্য পান। একাধিক সিনিয়র চিকিৎসক বলেন, একজন সিনিয়র ডাক্তার এভাবে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে—তা ভাবতে অবাক লাগে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে, ভিসির পিএস ডাক্তার রাসেলের স্ত্রী ছাত্রলীগের ঐ নেতাকে ফোন করে বলেন, তুমি আরও ১২ লাখ টাকা নিয়ে আমার সাহেবের চেম্বারে যাও, আমার কথা হয়েছে, তোমার কাজ হয়ে যাবে।

ঐ নেতা ১২ লাখ টাকা নিয়ে ভিসির পিএস রাসেলের চেম্বারে যান, ১২ লাখ টাকা হাতে দিলে পিএস বলেন, ১২ লাখ টাকা আমার স্যারকে দেওয়া যাবে, আরও বেশি টাকা লাগবে। আমারটা কোথায়? এই অডিও রেকর্ড এই প্রতিনিধির কাছে রয়েছে।

এই রাসেল দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা গ্রুপের নেতৃত্বে দেন। তার মাধ্যমেই সব দুর্নীতি পরিচালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। এই ভিসি মাত্র আড়াই বছরে ১ হাজার ৮০০ ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মাত্র ৫০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি প্রায় ১ হাজার ৩০০ জনকে এডহক ভিত্তিতে সরাসরি নিয়োগ দেন। এই নিয়োগে নিম্নে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা উেকাচ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

সিনিয়র অধ্যাপককে বিভাগের চেয়ারম্যান নিয়োগ না করে, তার ছাত্রকে নিয়োগ দিয়েছেন। এখানেও মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ধরনের আরও ১০টি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন সিনিয়র ডাক্তাররা।

বিএসএমএমইউয়ের সাগর চুরির মতো কোনো দুর্নীতি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়েছে কি না সিনিয়র ডাক্তাররা তা জানেন না। এই ভিসির কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবারতন্ত্র করার শীর্ষে রয়েছেন বর্তমান ভিসি।

অতীতে কোনো কোনো ভিসির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ থাকলেও, বর্তমান ভিসির মতো স্বজনপ্রীতি কেউ করেননি। তিনি ক্ষমতাবলে সন্তানসহ পরিবারের ১১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের নামে করেছেন হরিলুট।

কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করেননি। সার্টিফিকেটে, লেখক ও মনীষী বাণীতে ভুলে ভরা ছিল। এ নিয়ে অডিটে লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কোনো নিয়মনীতিতে তোয়াক্কা করেননি। এই দুর্নীতির সঙ্গে ভিসিসহ একটি গ্রুপ জড়িত—যারা তার কথায় উঠবস করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ৭৫০ বেডের একটি সুপার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটা অবকাঠামো, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ আলাদা। এটা হবে সব ধরনের জটিল রোগসহ সব ধরনের রোগী সুচিকিৎসা পাবে—এমন মনোভাব নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ১৩০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেয়। সেই ঋণে গত জুন মাসে হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। নির্মাণকাজ পূর্ণাঙ্গ শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে এই ভিসি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে এটা উদ্বোধন করান।

কিন্তু এই হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে এখনো চালু হয়নি। তার খবরদারির কারণে এই হাসপাতালটিও এখন রসাতলে যাওয়ার উপক্রম। ইতিমধ্যে একজন রোগী এনজিওগ্রাম করতে গিয়ে টেবিলেই মারা গেছেন।

এটা নিয়ে হইচই শুরু হয়। মূল ভবন থেকে ডাক্তার এনে এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি কোনো রকম চালানো হচ্ছে। কিন্তু এটা এমন হওয়ার কথা ছিল না। এটা এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ইতিমধ্যে ডাক্তার-নার্স নিয়োগের নামেও দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খান জানান, এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি পরিচালনা, প্রশাসনসহ আলাদা অবকাঠামো থাকার কথা। কিন্তু চলছে উলটো পথে।

যার কারণে অব্যবস্থাপনা হওয়া স্বাভাবিক। এই অবস্থায় চললে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি হয়ে যাবে একটি ক্লিনিকের মতো। এমন দাবি করছেন সিনিয়র ডাক্তাররা। তারা বলেন, এটার চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সিনিয়র ডাক্তারদের কাজে লাগানো হয় না।

এই ব্যাপারে ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এখানে চিকিৎসা, সেবা ও গবেষণার মান উন্নত হয়েছে। নিয়োগ, টেন্ডারসহ সব প্রক্রিয়াই নিয়মমাফিক হয়েছে। কোনো দুর্নীতি হয়নি।’