ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁচ বছরে স্বাস্থ্যখাতে গত চল্লিশ বছরের সমান কাজ হয়েছে

এমন একটা সময় ছিল যখন স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সমালোচনামূলক খবরই ছিল নৈমত্তিক ঘটনা। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে কত কী’ই না শোনা যেত। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় হত অনিয়ম, পত্রিকার পাতাজুড়ে ভরে থাকত স্বাস্থ্যের নানাখাতে দুর্নীতি আর অপচিকিৎসার খবর। দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে সরকারি হাসপাতালে যাওয়াই ছিল কঠিন। হাসপাতালে পাওয়া যেত না ডাক্তার, ছিল না পর্যাপ্ত বেড। প্রায় কোনো হাসপাতালেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ছিল না। আইসিউ সংকটে কত মানুষ মারা গেছে তার হিসেব নেই। ছিল শুধু নেই আর নেই।

সেই নেই নেই দিন এখন আর বেশি চোখে পড়ে না। পত্রিকার পাতা জুড়েও পাওয়া যায়না সেরকম কোনো অনিয়মের খবর। আজ দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চোখে পড়ে নির্মলা পরিছন্ন পরিবেশ। প্রতিটি হাসপাতালেই করা হয়েছে ফুলের বাগান। একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন, কীভাবে যেন গত ৫ বছরে দেশের স্বাস্থ্যখাতে এক নিরব বিপ্লব ঘটে গেছে। একদিকে করোনার দানবীয় তিনটি বছর সামলানো, অন্যদিকে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর নানাদিকে পরিবর্তনের নান্দনিক এক নিরব বিপ্লব। আর এই নিরব বিপ্লবে একেবারে সামনে থেকে দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর আস্থার প্রতীক মন্ত্রী এবং মন্ত্রীর সাথে কিছু সৎ ও চৌকস কর্মকর্তা। একদিকে হাসপাতালের পরিবেশ পরিবর্তন হয়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে চিকিসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট সংখ্যা।

গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য খাতের সাথে কীভাবে বিগত চল্লিশ বছরের স্বাস্থ্যখাতের তুলনা হলো সেটি কিছুটা ব্যাখ্যায় যাওয়া যাক। এইতো মাত্র ৫-৭ বছর আগেই সরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা জেলায় ছিল মাত্র ৫০ টি, উপজেলা হাসপাতালে ছিল মাত্র ১০টি করে।

এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য বিভাগের ফলপ্রসূ উদ্যোগে সরকারি হাসপাতালে সেবার মান বেড়েছে অনেক গুণ। একইসঙ্গে বেড়েছে রোগীর চাপও। দেশে এখন দিনে ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রতিদিনই চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালের প্রতি এই আস্থার কারন প্রতিটি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার যথাযথ মান বৃদ্ধি। গত পাঁচ বছরে হাসপাতালের সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৩৫ হাজার থেকে ৭২ হাজার হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতাল ৫০ থেকে ২৫০ শয্যা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সব হাসপাতালেই বেড়েছে শয্যা। দ্রুততম সময়ে প্রতিটি হাসপাতালেই শয্যা বৃদ্ধির এই উদ্যোগগুলোতে সরাসরি নেতৃত্বে ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এসময়ে কাজ করা মেধাবি চিকিৎসক, নার্সসহ চৌকস একঝাক কর্মকর্তা।

আগে সরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে একটি বেড পেতে হিমশিম খেতে হতো রোগীদের। তাই সারা দেশেই আইসিইউ বেড বৃদ্ধির উদ্যোগ নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বর্তমানে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা চার গুণ বাড়িয়ে মাত্র ৩৮১ থেকে ১৮৬০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া, প্রতিটি মেডিকেল কলেজ, জেলা সদর হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাপসাতালে ১০ থেকে ২০টি আইসিইউ শয্যা বাড়ছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট বসানে হয়েছে যা দেশের দরিদ্র্য মানুষের জন্য অমূল্য পাওয়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিনা মূল্যে পাওয়া এসব সুবিধায় সাধারণ মানুষের কত যে উপকার হচ্ছে তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় সাধারণ মানুষের ভরসা ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানে বিনামূল্যে দেয়া হয় ৩২ ধরনের ওষুধ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকে নিরাপদ সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা চালু করেছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণাকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এই কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের বিশেষ করে দরিদ্র্য মহিলা ও শিশুদের জন্য এক বিরাট আর্শিবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্বের ৭৬টি দেশও ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিকের এই ধারণাকে গ্রহণ করেছেন এবং তাদের নিজ দেশে এই সুবিধা চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

শত অভিযোগ মাথায় নিয়ে শতবছর পেরিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানেও দিন বদলের গল্প শুরু হয়েছে। আধুনিক জরুরি বিভাগ, আইসিইউ বেড বৃদ্ধি, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনসহ নানা উদ্যোগে ঢাকা মেডিকেল এখন রোগীদের কাছে আস্থার প্রতীক। দুই হাজার ৬০০ বেড থাকলেও রোগী ভর্তি থাকে চার হাজারের মতো। সেবার পরিধি বাড়াতে আধুনিক স্থাপনাসহ ঢাকা মেডিকেলকে ৫ হাজার বেডের হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা মেডিকেল ৫০০০ বেডের হয়ে গেলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা পাবেন ঢাকার মানুষ জন। একইভাবে, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ ঢাকার অন্যান্য প্রায় সব হাসপাতালেই দ্বিগুণ করা হয়েছে শয্যা সংখ্যা। শুধু তাই নয়, মাত্র ৫০ বেডের জেলা সদর হাসপাতালকে ২৫০ বেড এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০ বেড থেকে বাড়িয়ে ৫০ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। এগুলো থেকে বিনামূল্যে দেশের লাখ লাখ মানুষ সেবা নিচ্ছেন, সুস্থ হচ্ছেন।

সেবার মান বাড়াতে গত ৫ বছর ব্যাপক কাজ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারি হাসপাতালে সেবার মান এখন অনেক বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে রোগীর চাপও। এখন প্রতিদিন ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ সরকারি হাসপাতালে সেবা নিচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে হাসপাতালের সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৩৫ হাজার থেকে ৭২ হাজার হয়েছে। এই ৭২ হাজার হাসাপাতাল বেড থেকে দেশের মানুষ প্রতিদিনই বিনামূল্যে আগের থেকে কয়েকগুণ বেশি সেবা পাচ্ছেন।

গত ৫ বছরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বড় সাফল্য হচ্ছে করোনা মোকাবিলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে নেতৃত্বে ছিলেন করোনা মোকাবিলার কাজে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিনই নির্দেশনা দিতেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে। বিশ্ব যখন করোনায় ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ তখনও ছিল নিরাপদ ও দুর্ভিক্ষ মুক্ত।

করোনার সময়টি নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। সময়টা ৮ মার্চ, ২০২০। দেশে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। দেখা দেয় নানা সংকট। তবে খুব দ্রুততম সময়ে সব প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলে নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। গোটা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ মানুষকে প্রায় ৩৭ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয় বিনামূল্যে। এক দিনেই দেয়া হয়েছিল ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষকে টিকা। যা বিশ্বে এক বিরল রেকর্ড হয়ে আছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল দেশের তালিকায় বিশ্বে পঞ্চম আর দক্ষিণ এশিয়ায় সবার উপরে অবস্থান বাংলাদেশের। এই সাফল্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে গোটা দেশবাসীর।

টিকাদানে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত সূদৃঢ়। টিকাদানে উন্নয়নশীল দেশের রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে ১১ ধরনের টিকা। ১২ মাসের কম-বয়সী শিশুকে টিকাদান ৭৬ ভাগ থেকে বেড়ে বর্তমানে ৯৪ ভাগ হয়েছে। স্বীকৃতি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভ্যাকসিন হিরো পুরস্কার দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশের হাসপাতলগুলোতে এনসিডি কর্ণার চালু করে আরেকটি যুগান্তকারী উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। ইতোমধ্যেই এনসিডি কর্ণার হিসেবে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ অসংক্রামক নানা রোগের নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসায় সারা দেশে চালু করা হয়েছে ৩৪৪টি সেবাকেন্দ্র। এখান থেকে বছরে ১০০ কোটি টাকার ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছেন রোগীরা।

মাত্র কিছুদিন আগেই ভারতে হয়ে গেল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র দেশ হিসেবে কালাজ্বর নির্মূলের স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়া ২০২৩ সালেই মিলেছে আরেক রোগ ফাইলেরিয়া নির্মূলের স্বীকৃতিও। রোগ নির্মূলে কার্যকরী পদক্ষেপেই এসেছে এই সাফল্য।

এক সময় সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মী সংকট ছিল প্রকট। এতে ব্যাহত হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা। সংকট কাটাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ৫ বছরে চিকিৎসক, নার্স-সহ ৭০ হাজারের বেশি জনবল নিয়োগ দিয়েছে। এসব জনবল এখন দেশের হাসপাতালগুলোতে মানুষকে দ্বিগুণ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

দেশের মানুষের বর্তমান গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৪ বছর। যা এক সময় ছিল ষাট বছরেরও কম। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে উন্নতি ঘটেছে গড় আয়ু বৃদ্ধি তার প্রমাণ বহন করে।

গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্যখাত যেসব কাজ করেছে তার সুফল মানুষ এখন পেতে শুরু করেছে। গ্রামীণ জনপদে চক্ষু চিকিৎসায় ২০০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি আই সেন্টার, সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে বৈকালিক চেম্বার, গুরুতর রোগীর প্রাণ বাঁচাতে ২৪ ঘন্টা আধুনিক জরুরি বিভাগ সেবা বা ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সার্ভিস এন্ড ক্যাজুয়াল্টি-ওসেক, সকল সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন এবং অনেক হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন, নির্ভুল রোগ নির্ণয়ে সকল সরকারি হাসপাতালে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ, এক হাজার সাতশ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরো স্বাস্থ্য খাতকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ, মা ও শিশু মৃত্যু কমানো, প্রাতিষ্ঠাতিক প্রসব বৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ সন্তান প্রসব নিশ্চিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮ ঘন্টার পরিবর্তে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা, সারা দেশে ৫০০টি মডেল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের বিপুল ভোটে জয়লাভ গত ৫ বছরে স্বাস্থ্যখাতের অভূতপূর্ব অর্জন।

বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে হৃদরোগ, ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের সমস্যায়। শুধু হৃদরোগেই প্রতিদিন গড়ে ৭০০ মানুষ মারা যাচ্ছে বাংলাদেশে। ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে দিনে ৩০০ মানুষ। বিষয়টিতে স্বাস্থ্যখাত সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। রোগী ভোগান্তি ও চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ৮ বিভাগেই নির্মাণ হচ্ছে ১৫ তলা বিশিষ্ট ৪ হাজার বেডের ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার হাসপাতাল। এই হাসপাতালগুলো প্রতিটি ১৫ তলা বিশিষ্ট। যেমন আধুনিক তেমনি উন্নত চিকিৎসাসেবা থাকবে এগুলোতে। নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। কাজ শেষ হলে নিজ এলাকা থেকেই মানুষ বিদেশ তো নয়ই ঢাকাতেও আসতে হবে না। ৪ হাজার বেডের উন্নত ও আধুনিক হাসপাতাল দেশে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার রোগের চিকিৎসায় নতুন প্রাণ এনে দেবে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন।

এছাড়াও, শতভাগ স্বচ্ছভাবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, এমবিবিএস ভর্তি প্রক্রিয়ায় অটোমেশন পদ্ধতি চালু, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম ও খুলনায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে মেডিকেল শিক্ষায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা।

চিকিৎসার জন্য একজন রোগীকেও যেন দেশের বাইরে যেতে না হয়, টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছেন মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য খাতের পুরো টিম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এসব যুগোপযোগী নানা উদ্যোগে দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাত আজ এমন শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে যে গত ৫ বছরের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নকে নির্দ্বিধায় বিগত ৪০ বছরের স্বাস্থ্য সেবার মানের সাথে তুলনা করলে এতটুকুও অতুক্তি হয় না। (মোঃ মাইদুল ইসলাম প্রধান, সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়)।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

পাঁচ বছরে স্বাস্থ্যখাতে গত চল্লিশ বছরের সমান কাজ হয়েছে

আপডেট টাইম : ০৬:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৪

এমন একটা সময় ছিল যখন স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সমালোচনামূলক খবরই ছিল নৈমত্তিক ঘটনা। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে কত কী’ই না শোনা যেত। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় হত অনিয়ম, পত্রিকার পাতাজুড়ে ভরে থাকত স্বাস্থ্যের নানাখাতে দুর্নীতি আর অপচিকিৎসার খবর। দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে সরকারি হাসপাতালে যাওয়াই ছিল কঠিন। হাসপাতালে পাওয়া যেত না ডাক্তার, ছিল না পর্যাপ্ত বেড। প্রায় কোনো হাসপাতালেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ছিল না। আইসিউ সংকটে কত মানুষ মারা গেছে তার হিসেব নেই। ছিল শুধু নেই আর নেই।

সেই নেই নেই দিন এখন আর বেশি চোখে পড়ে না। পত্রিকার পাতা জুড়েও পাওয়া যায়না সেরকম কোনো অনিয়মের খবর। আজ দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চোখে পড়ে নির্মলা পরিছন্ন পরিবেশ। প্রতিটি হাসপাতালেই করা হয়েছে ফুলের বাগান। একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন, কীভাবে যেন গত ৫ বছরে দেশের স্বাস্থ্যখাতে এক নিরব বিপ্লব ঘটে গেছে। একদিকে করোনার দানবীয় তিনটি বছর সামলানো, অন্যদিকে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর নানাদিকে পরিবর্তনের নান্দনিক এক নিরব বিপ্লব। আর এই নিরব বিপ্লবে একেবারে সামনে থেকে দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর আস্থার প্রতীক মন্ত্রী এবং মন্ত্রীর সাথে কিছু সৎ ও চৌকস কর্মকর্তা। একদিকে হাসপাতালের পরিবেশ পরিবর্তন হয়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে চিকিসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট সংখ্যা।

গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য খাতের সাথে কীভাবে বিগত চল্লিশ বছরের স্বাস্থ্যখাতের তুলনা হলো সেটি কিছুটা ব্যাখ্যায় যাওয়া যাক। এইতো মাত্র ৫-৭ বছর আগেই সরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা জেলায় ছিল মাত্র ৫০ টি, উপজেলা হাসপাতালে ছিল মাত্র ১০টি করে।

এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য বিভাগের ফলপ্রসূ উদ্যোগে সরকারি হাসপাতালে সেবার মান বেড়েছে অনেক গুণ। একইসঙ্গে বেড়েছে রোগীর চাপও। দেশে এখন দিনে ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রতিদিনই চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালের প্রতি এই আস্থার কারন প্রতিটি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার যথাযথ মান বৃদ্ধি। গত পাঁচ বছরে হাসপাতালের সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৩৫ হাজার থেকে ৭২ হাজার হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতাল ৫০ থেকে ২৫০ শয্যা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সব হাসপাতালেই বেড়েছে শয্যা। দ্রুততম সময়ে প্রতিটি হাসপাতালেই শয্যা বৃদ্ধির এই উদ্যোগগুলোতে সরাসরি নেতৃত্বে ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এসময়ে কাজ করা মেধাবি চিকিৎসক, নার্সসহ চৌকস একঝাক কর্মকর্তা।

আগে সরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে একটি বেড পেতে হিমশিম খেতে হতো রোগীদের। তাই সারা দেশেই আইসিইউ বেড বৃদ্ধির উদ্যোগ নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বর্তমানে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা চার গুণ বাড়িয়ে মাত্র ৩৮১ থেকে ১৮৬০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া, প্রতিটি মেডিকেল কলেজ, জেলা সদর হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাপসাতালে ১০ থেকে ২০টি আইসিইউ শয্যা বাড়ছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট বসানে হয়েছে যা দেশের দরিদ্র্য মানুষের জন্য অমূল্য পাওয়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিনা মূল্যে পাওয়া এসব সুবিধায় সাধারণ মানুষের কত যে উপকার হচ্ছে তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় সাধারণ মানুষের ভরসা ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানে বিনামূল্যে দেয়া হয় ৩২ ধরনের ওষুধ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকে নিরাপদ সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা চালু করেছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণাকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এই কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের বিশেষ করে দরিদ্র্য মহিলা ও শিশুদের জন্য এক বিরাট আর্শিবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্বের ৭৬টি দেশও ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিকের এই ধারণাকে গ্রহণ করেছেন এবং তাদের নিজ দেশে এই সুবিধা চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

শত অভিযোগ মাথায় নিয়ে শতবছর পেরিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানেও দিন বদলের গল্প শুরু হয়েছে। আধুনিক জরুরি বিভাগ, আইসিইউ বেড বৃদ্ধি, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনসহ নানা উদ্যোগে ঢাকা মেডিকেল এখন রোগীদের কাছে আস্থার প্রতীক। দুই হাজার ৬০০ বেড থাকলেও রোগী ভর্তি থাকে চার হাজারের মতো। সেবার পরিধি বাড়াতে আধুনিক স্থাপনাসহ ঢাকা মেডিকেলকে ৫ হাজার বেডের হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা মেডিকেল ৫০০০ বেডের হয়ে গেলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা পাবেন ঢাকার মানুষ জন। একইভাবে, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ ঢাকার অন্যান্য প্রায় সব হাসপাতালেই দ্বিগুণ করা হয়েছে শয্যা সংখ্যা। শুধু তাই নয়, মাত্র ৫০ বেডের জেলা সদর হাসপাতালকে ২৫০ বেড এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০ বেড থেকে বাড়িয়ে ৫০ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। এগুলো থেকে বিনামূল্যে দেশের লাখ লাখ মানুষ সেবা নিচ্ছেন, সুস্থ হচ্ছেন।

সেবার মান বাড়াতে গত ৫ বছর ব্যাপক কাজ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারি হাসপাতালে সেবার মান এখন অনেক বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে রোগীর চাপও। এখন প্রতিদিন ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ সরকারি হাসপাতালে সেবা নিচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে হাসপাতালের সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৩৫ হাজার থেকে ৭২ হাজার হয়েছে। এই ৭২ হাজার হাসাপাতাল বেড থেকে দেশের মানুষ প্রতিদিনই বিনামূল্যে আগের থেকে কয়েকগুণ বেশি সেবা পাচ্ছেন।

গত ৫ বছরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বড় সাফল্য হচ্ছে করোনা মোকাবিলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে নেতৃত্বে ছিলেন করোনা মোকাবিলার কাজে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিনই নির্দেশনা দিতেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে। বিশ্ব যখন করোনায় ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ তখনও ছিল নিরাপদ ও দুর্ভিক্ষ মুক্ত।

করোনার সময়টি নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। সময়টা ৮ মার্চ, ২০২০। দেশে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। দেখা দেয় নানা সংকট। তবে খুব দ্রুততম সময়ে সব প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলে নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। গোটা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ মানুষকে প্রায় ৩৭ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয় বিনামূল্যে। এক দিনেই দেয়া হয়েছিল ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষকে টিকা। যা বিশ্বে এক বিরল রেকর্ড হয়ে আছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল দেশের তালিকায় বিশ্বে পঞ্চম আর দক্ষিণ এশিয়ায় সবার উপরে অবস্থান বাংলাদেশের। এই সাফল্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে গোটা দেশবাসীর।

টিকাদানে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত সূদৃঢ়। টিকাদানে উন্নয়নশীল দেশের রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে ১১ ধরনের টিকা। ১২ মাসের কম-বয়সী শিশুকে টিকাদান ৭৬ ভাগ থেকে বেড়ে বর্তমানে ৯৪ ভাগ হয়েছে। স্বীকৃতি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভ্যাকসিন হিরো পুরস্কার দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশের হাসপাতলগুলোতে এনসিডি কর্ণার চালু করে আরেকটি যুগান্তকারী উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। ইতোমধ্যেই এনসিডি কর্ণার হিসেবে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ অসংক্রামক নানা রোগের নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসায় সারা দেশে চালু করা হয়েছে ৩৪৪টি সেবাকেন্দ্র। এখান থেকে বছরে ১০০ কোটি টাকার ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছেন রোগীরা।

মাত্র কিছুদিন আগেই ভারতে হয়ে গেল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র দেশ হিসেবে কালাজ্বর নির্মূলের স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়া ২০২৩ সালেই মিলেছে আরেক রোগ ফাইলেরিয়া নির্মূলের স্বীকৃতিও। রোগ নির্মূলে কার্যকরী পদক্ষেপেই এসেছে এই সাফল্য।

এক সময় সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মী সংকট ছিল প্রকট। এতে ব্যাহত হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা। সংকট কাটাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ৫ বছরে চিকিৎসক, নার্স-সহ ৭০ হাজারের বেশি জনবল নিয়োগ দিয়েছে। এসব জনবল এখন দেশের হাসপাতালগুলোতে মানুষকে দ্বিগুণ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

দেশের মানুষের বর্তমান গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৪ বছর। যা এক সময় ছিল ষাট বছরেরও কম। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে উন্নতি ঘটেছে গড় আয়ু বৃদ্ধি তার প্রমাণ বহন করে।

গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্যখাত যেসব কাজ করেছে তার সুফল মানুষ এখন পেতে শুরু করেছে। গ্রামীণ জনপদে চক্ষু চিকিৎসায় ২০০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি আই সেন্টার, সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে বৈকালিক চেম্বার, গুরুতর রোগীর প্রাণ বাঁচাতে ২৪ ঘন্টা আধুনিক জরুরি বিভাগ সেবা বা ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সার্ভিস এন্ড ক্যাজুয়াল্টি-ওসেক, সকল সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন এবং অনেক হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন, নির্ভুল রোগ নির্ণয়ে সকল সরকারি হাসপাতালে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ, এক হাজার সাতশ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরো স্বাস্থ্য খাতকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ, মা ও শিশু মৃত্যু কমানো, প্রাতিষ্ঠাতিক প্রসব বৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ সন্তান প্রসব নিশ্চিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮ ঘন্টার পরিবর্তে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা, সারা দেশে ৫০০টি মডেল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের বিপুল ভোটে জয়লাভ গত ৫ বছরে স্বাস্থ্যখাতের অভূতপূর্ব অর্জন।

বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে হৃদরোগ, ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের সমস্যায়। শুধু হৃদরোগেই প্রতিদিন গড়ে ৭০০ মানুষ মারা যাচ্ছে বাংলাদেশে। ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে দিনে ৩০০ মানুষ। বিষয়টিতে স্বাস্থ্যখাত সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। রোগী ভোগান্তি ও চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ৮ বিভাগেই নির্মাণ হচ্ছে ১৫ তলা বিশিষ্ট ৪ হাজার বেডের ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার হাসপাতাল। এই হাসপাতালগুলো প্রতিটি ১৫ তলা বিশিষ্ট। যেমন আধুনিক তেমনি উন্নত চিকিৎসাসেবা থাকবে এগুলোতে। নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। কাজ শেষ হলে নিজ এলাকা থেকেই মানুষ বিদেশ তো নয়ই ঢাকাতেও আসতে হবে না। ৪ হাজার বেডের উন্নত ও আধুনিক হাসপাতাল দেশে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার রোগের চিকিৎসায় নতুন প্রাণ এনে দেবে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন।

এছাড়াও, শতভাগ স্বচ্ছভাবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, এমবিবিএস ভর্তি প্রক্রিয়ায় অটোমেশন পদ্ধতি চালু, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম ও খুলনায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে মেডিকেল শিক্ষায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা।

চিকিৎসার জন্য একজন রোগীকেও যেন দেশের বাইরে যেতে না হয়, টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছেন মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য খাতের পুরো টিম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এসব যুগোপযোগী নানা উদ্যোগে দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাত আজ এমন শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে যে গত ৫ বছরের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নকে নির্দ্বিধায় বিগত ৪০ বছরের স্বাস্থ্য সেবার মানের সাথে তুলনা করলে এতটুকুও অতুক্তি হয় না। (মোঃ মাইদুল ইসলাম প্রধান, সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়)।