ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসক ও হাজামের ভুলের খেসারত দিচ্ছে শিশুরা

সুন্নতে খতনা এখন এক আতঙ্কের নাম। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থেকে হাজাম (স্থানীয়ভাবে খতনাকারী)-কারও কাছেই যেন নিরাপদ নয় শিশু। খতনা করাতে গিয়ে কখনো লিঙ্গ কেটে ফেলা হচ্ছে, আবার কখনো ঘটছে ‘মৃত্যুর’ ঘটনা। সম্প্রতি হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে খোদ রাজধানীতেই দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয়। যদিও দুটি ঘটনাকে চিকিৎসকদের ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করে আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খতনা করাতে গিয়ে অন্তত পাঁচ শিশুর লিঙ্গ কেটে ফেলেছেন হাজাম। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে শরীয়তপুর ও ময়মনসিংহে হাজামদের হাতে লিঙ্গ কর্তনের শিকার দুই শিশু ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে।

এদিকে, খতনা করাতে গিয়ে লিঙ্গ কাটা কিংবা মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছেন, চিকিৎসক ও হাজামদের অবহেলা ও অতিরিক্ত লোভের খেসারত দিচ্ছে শিশুরা। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিচার ও শাস্তির নজির না থাকায় এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে বলে অভিমত অপরাধ গবেষকদের। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে খতনার কাজে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খতনা করানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

শরীয়তপুরে শিশুর লিঙ্গ কর্তন হাজামের : শরীয়তপুরের পালং উপজেলার একটি গ্রামে সুন্নতে খতনা করার সময় ৮ বছরের এক শিশুর লিঙ্গ কেটে ফেলেছেন সত্তরোর্ধ্ব এক হাজাম। ভুক্তভোগী শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিভাগের প্রধান ডা. আশরাফ উল হক কাজলের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। শিশুটি গ্রামের একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাসের রোলও এক। শিশুটির বাবা রাজধানীর সিদ্দিক বাজারে একটি টেইলার্সে দর্জির কাজ করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট সে।

শিশুটির মা ও বাবা কান্নাজড়িত অবস্থায় যুগান্তরকে বলেন, ১৩ এপ্রিল সকালে স্থানীয় হাজাম তোতা মিয়া বাসায় ঢুকে খুব তাড়াহুড়ো করতে থাকেন। তার মোবাইল ফোনে একের পর এক কল আসতে থাকে। আমার ছেলে ছাড়া আরও দুটি শিশুকে খতনা করাতে হবে বলে জানান তিনি। এভাবে তাড়াহুড়োর মধ্যে আরও একটি কল আসলে তিনি ২ মিনিটের মধ্যে যাচ্ছেন বলে অপরপ্রান্তের লোকটিকে জানান।

শিশুটির মা বলেন, বারবার অনুরোধ করার পরেও তাড়াহুড়ো করে বাঁশের কঞ্চির আগায় লাগানো একটি ব্লেড দিয়ে আমার ছেলের লিঙ্গে পোচ দেন। ছেলেটি খুব জোরে চিৎকার করে ওঠে। রক্ত বের হতে দেখে হাজাম নিজেও ভয় পেয়ে যান।

ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক কাজল যুগান্তরকে জানান, শিশুটির লিঙ্গের মুণ্ডুসহ অনেকাংশ কেটে ফেলা হয়েছে। কেটে ফেলা অংশটুকু ৬ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ে আসলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সংযুক্ত করার সম্ভাবনা থাকত। কিন্তু তারা লিঙ্গের কেটে ফেলা অংশ আনতে পারেননি। তবে হাসপাতালে ভর্তির পর প্রাথমিকভাবে শিশুটির রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া স্বাভাবিকভাবে প্রস্রাবের জন্য একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

এই অধ্যাপক বলেন, শিশুটি সুস্থ হলেও ভবিষ্যৎ যৌন জীবন ঝুঁকিতে থেকে যাবে। কিছুদিন পরে লিঙ্গে প্লাস্টিক সার্জারির একটা উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেটাও কতটা সফল হবে এখনই বলা যাচ্ছে না।

ঈশ্বরগঞ্জে হাজামের বলি ১১ বছরের শিশু : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ১১ বছর বয়সি এক শিশুর খতনা করতে গিয়ে লিঙ্গ কেটে ফেলেছেন হাজাম। বর্তমানে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশুটি। তার বাবাও বেঁচে নেই।

ভুক্তভোগী শিশুটির চাচাতো বোনের স্বামী বলেন, রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের বাসায় খতনা করাতে আসে হাজাম আকবর আলী। প্রথমবার হাজাম পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া কাটলে সাদা অংশ বেরিয়ে আসে। তখন খতনা হয়নি বলে দ্বিতীয়বার লিঙ্গ কাটতে গিয়ে অর্ধেকের বেশি অংশ কেটে ফেলে হাজাম। এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে শিশুটিকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেকে আনা হয়।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীতে খতনা করাতে গিয়ে দুই শিশুর মৃত্যুতে তোলপাড় শুরু হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে মালিবাগের মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ৮ জানুয়ারি রাজধানীর সাতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড হাসপাতালে আরেক শিশুর মৃত্যু হয়। দুটি ঘটনায় ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন শিশুটির বাবা।

এছাড়া ২৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে, ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালের উজিরপুরে ও ২৮ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের চিতলমারীতে ইউটিউব দেখে হাত-পা ও মুখ বেঁধে খতনা করাতে গিয়ে সাড়ে ৩ বছর বয়সি এক শিশুকে হত্যা করে স্থানীয় এক যুবক।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, খতনা করানো একটি সাধারণ অস্ত্রোপচার, যেখানে মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। তিনি বলেন, মুসলিম প্রধান দেশ হিসাবে বাংলাদেশে খতনা করানোর জন্য বেশকিছু চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দিয়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া সব ধরনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। তিনি এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, আগের ঘটনাগুলোতে চিকিৎসায় অবহেলা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসাপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলাম। বিষয়গুলো বর্তমানে তদন্ত চলছে।

হাজামের হাতে লিঙ্গ কর্তন বা মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, হাজামদের বিষয়ে তো আমাদের কিছু করার নেই। তবে খতনায় সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খতনা করানোর ব্যবস্থা চালু করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সমাজ ও অপরাধ গবেষক ড. তৌহিদুল হক যুগান্তরকে বলেন, চিকিৎসকদের কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা হলেও শাস্তির নজির নেই। আবার হাজামদের ক্ষেত্রে মামলার নজিরও খুবই কম। এক্ষেত্রে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের মাধ্যমে খতনার ব্যবস্থা করতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

চিকিৎসক ও হাজামের ভুলের খেসারত দিচ্ছে শিশুরা

আপডেট টাইম : ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

সুন্নতে খতনা এখন এক আতঙ্কের নাম। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থেকে হাজাম (স্থানীয়ভাবে খতনাকারী)-কারও কাছেই যেন নিরাপদ নয় শিশু। খতনা করাতে গিয়ে কখনো লিঙ্গ কেটে ফেলা হচ্ছে, আবার কখনো ঘটছে ‘মৃত্যুর’ ঘটনা। সম্প্রতি হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে খোদ রাজধানীতেই দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয়। যদিও দুটি ঘটনাকে চিকিৎসকদের ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করে আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খতনা করাতে গিয়ে অন্তত পাঁচ শিশুর লিঙ্গ কেটে ফেলেছেন হাজাম। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে শরীয়তপুর ও ময়মনসিংহে হাজামদের হাতে লিঙ্গ কর্তনের শিকার দুই শিশু ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে।

এদিকে, খতনা করাতে গিয়ে লিঙ্গ কাটা কিংবা মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছেন, চিকিৎসক ও হাজামদের অবহেলা ও অতিরিক্ত লোভের খেসারত দিচ্ছে শিশুরা। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিচার ও শাস্তির নজির না থাকায় এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে বলে অভিমত অপরাধ গবেষকদের। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে খতনার কাজে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খতনা করানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

শরীয়তপুরে শিশুর লিঙ্গ কর্তন হাজামের : শরীয়তপুরের পালং উপজেলার একটি গ্রামে সুন্নতে খতনা করার সময় ৮ বছরের এক শিশুর লিঙ্গ কেটে ফেলেছেন সত্তরোর্ধ্ব এক হাজাম। ভুক্তভোগী শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিভাগের প্রধান ডা. আশরাফ উল হক কাজলের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। শিশুটি গ্রামের একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাসের রোলও এক। শিশুটির বাবা রাজধানীর সিদ্দিক বাজারে একটি টেইলার্সে দর্জির কাজ করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট সে।

শিশুটির মা ও বাবা কান্নাজড়িত অবস্থায় যুগান্তরকে বলেন, ১৩ এপ্রিল সকালে স্থানীয় হাজাম তোতা মিয়া বাসায় ঢুকে খুব তাড়াহুড়ো করতে থাকেন। তার মোবাইল ফোনে একের পর এক কল আসতে থাকে। আমার ছেলে ছাড়া আরও দুটি শিশুকে খতনা করাতে হবে বলে জানান তিনি। এভাবে তাড়াহুড়োর মধ্যে আরও একটি কল আসলে তিনি ২ মিনিটের মধ্যে যাচ্ছেন বলে অপরপ্রান্তের লোকটিকে জানান।

শিশুটির মা বলেন, বারবার অনুরোধ করার পরেও তাড়াহুড়ো করে বাঁশের কঞ্চির আগায় লাগানো একটি ব্লেড দিয়ে আমার ছেলের লিঙ্গে পোচ দেন। ছেলেটি খুব জোরে চিৎকার করে ওঠে। রক্ত বের হতে দেখে হাজাম নিজেও ভয় পেয়ে যান।

ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক কাজল যুগান্তরকে জানান, শিশুটির লিঙ্গের মুণ্ডুসহ অনেকাংশ কেটে ফেলা হয়েছে। কেটে ফেলা অংশটুকু ৬ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ে আসলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সংযুক্ত করার সম্ভাবনা থাকত। কিন্তু তারা লিঙ্গের কেটে ফেলা অংশ আনতে পারেননি। তবে হাসপাতালে ভর্তির পর প্রাথমিকভাবে শিশুটির রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া স্বাভাবিকভাবে প্রস্রাবের জন্য একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

এই অধ্যাপক বলেন, শিশুটি সুস্থ হলেও ভবিষ্যৎ যৌন জীবন ঝুঁকিতে থেকে যাবে। কিছুদিন পরে লিঙ্গে প্লাস্টিক সার্জারির একটা উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেটাও কতটা সফল হবে এখনই বলা যাচ্ছে না।

ঈশ্বরগঞ্জে হাজামের বলি ১১ বছরের শিশু : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ১১ বছর বয়সি এক শিশুর খতনা করতে গিয়ে লিঙ্গ কেটে ফেলেছেন হাজাম। বর্তমানে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশুটি। তার বাবাও বেঁচে নেই।

ভুক্তভোগী শিশুটির চাচাতো বোনের স্বামী বলেন, রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের বাসায় খতনা করাতে আসে হাজাম আকবর আলী। প্রথমবার হাজাম পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া কাটলে সাদা অংশ বেরিয়ে আসে। তখন খতনা হয়নি বলে দ্বিতীয়বার লিঙ্গ কাটতে গিয়ে অর্ধেকের বেশি অংশ কেটে ফেলে হাজাম। এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে শিশুটিকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেকে আনা হয়।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীতে খতনা করাতে গিয়ে দুই শিশুর মৃত্যুতে তোলপাড় শুরু হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে মালিবাগের মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ৮ জানুয়ারি রাজধানীর সাতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড হাসপাতালে আরেক শিশুর মৃত্যু হয়। দুটি ঘটনায় ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন শিশুটির বাবা।

এছাড়া ২৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে, ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালের উজিরপুরে ও ২৮ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের চিতলমারীতে ইউটিউব দেখে হাত-পা ও মুখ বেঁধে খতনা করাতে গিয়ে সাড়ে ৩ বছর বয়সি এক শিশুকে হত্যা করে স্থানীয় এক যুবক।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, খতনা করানো একটি সাধারণ অস্ত্রোপচার, যেখানে মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। তিনি বলেন, মুসলিম প্রধান দেশ হিসাবে বাংলাদেশে খতনা করানোর জন্য বেশকিছু চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দিয়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া সব ধরনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। তিনি এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, আগের ঘটনাগুলোতে চিকিৎসায় অবহেলা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসাপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলাম। বিষয়গুলো বর্তমানে তদন্ত চলছে।

হাজামের হাতে লিঙ্গ কর্তন বা মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, হাজামদের বিষয়ে তো আমাদের কিছু করার নেই। তবে খতনায় সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খতনা করানোর ব্যবস্থা চালু করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সমাজ ও অপরাধ গবেষক ড. তৌহিদুল হক যুগান্তরকে বলেন, চিকিৎসকদের কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা হলেও শাস্তির নজির নেই। আবার হাজামদের ক্ষেত্রে মামলার নজিরও খুবই কম। এক্ষেত্রে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের মাধ্যমে খতনার ব্যবস্থা করতে হবে।