বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ তৌফা-তহুরা, মুক্তামনি ও আবুল বাজানদারের চিকিৎসার সাফল্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম।
তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা আন্তরিকতার মাধ্যমে অসাধ্যকে সাধন করেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) চিকিৎসকেরা স্মরণীয় কাজ করেছেন। বিরল চিকিৎসায় সাফল্যের কারণে গোটা দেশ তাদের স্মরণ করছে।
তিনি বলেন, ঢামেকের এ সাফল্য ধরে রাখতে হবে। দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোকে এ বিষয়গুলো স্মরণ রাখতে হবে।
বাংলাদেশের চিকিৎসকদের ভূঁয়সী প্রশংসা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, তৌফা-তহুরা, মুক্তামনি ও আবুল বাজানদারে চিকিৎসার সাফল্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে জোড়া শিশু তৌফা-তহুরাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রিলিজ দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম এ প্রশংসা করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তৌফা-তহুরা ভালো থাকুক। সুশিক্ষায় তাদের শিক্ষিত করতে হবে যেন বড় হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের চিকিৎসকদের অপারেশন সফল হওয়ায় খুশি হয়েছেন।
এসময় চিকিৎকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকদের হৃদয়বান হতে হবে। মমত্ববোধ নিয়ে কাজ করতে হবে। সব রোগীর ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে।
মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে মোহাম্মাদ নাসিম বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি মানবিক রাষ্ট্র। সীমিত সম্পদের দেশ। তারপরও নির্যাতিতদের জন্য সীমান্ত (বর্ডার) খুলে দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তৌফা-তোহুরার বাবা কৃষক রাজুকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, যুগে-যুগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। উন্নত চিকিৎসা সেবায় জাতির পাশে দাঁড়াবে এবং অন্যদের ইতিহাস তৈরির পথ দেখাবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবায় বিশ্ববাসীর আস্থা ফিরছে। বিভিন্ন দেশের বিরল রোগীরাও একসময় বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা নেবেন। একসময় দেশের রোগীরা আর বিদেশে যাবেন না। বর্তমানে চিকিৎসা সেবায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমরা এগিয়ে আছি।
তৌফা-তহুরার সার্জন ও শিশু সার্জারি বিভাগের চতুর্থ ইউনিটের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাগনূর ইসলাম বলেন, অপারেশন করার পর তৌফা-তহুরা এখন স্বাভাবিক শিশুদের মতো। বসতেও শুরু করেছে তারা। ওদের আরো দুটি অপারেশন করতে হবে। প্রতিমাসে ফলোআপে থাকবে। এখন থেকে ছয়মাস পর সিদ্ধান্ত হবে, ওদের পরবর্তী অপারেশন কবে করা হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের আজকের এই সাফল্য।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তৌফা-তহুরার মা শাহিদা বেগম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য সেবা সচিব সিরাজুল হক খান, স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব সিরাজুল ইসলাম, ঢামেক পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএএম নাসির উদ্দিন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন প্রমুখ।
১ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে দুই বোন তৌফা ও তহুরাকে আলাদা করেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের পর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের পাশের একটি কক্ষে তাদের ২০ দিন রাখা হয়।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবনের কৃষক রাজু মিয়ার এই জমজ শিশু জোড়া লাগানো অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। তৌফা আর তহুরার পিঠের দিক থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত মেরুদণ্ডের হাড় সংযুক্ত ছিল। মাথা-হাত-পা আলাদা হলেও তাদের মলদ্বার ছিল একটি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এমন ঘটনাকে বলা হয় ‘পাইগোপেগাস’।