অন্য একটি শিশুর শরীরের অর্ধেক অংশ নিয়ে জন্মানো ছোট্ট শিশুটির নাম মোহাম্মদ আলী। আর দশটি শিশুর চেয়ে আলাদা সে। তার দৈহিক গড়ন সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু কিন্তু তার উপর ভর করে আছে আর একটি শিশুর পেটের নিচের অর্ধেকসহ শরীরের নিন্মাঙ্গ। উর্ধাঙ্গর মাথা, বুক ও দু’ হাত নেই অর্থাৎ আংশিক বা অপূর্ণাঙ্গ শিশুটি তার আংশিক অস্তিত্ব নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশুর উপর ভর করে বেঁচে আছে।
মোহাম্মদ আলী নামের শিশুটি জন্মগ্রহণ করে চলতি বছরের ৭ মার্চ বাগেরহাটে। শিশুটি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিনের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষা একে বলা হয়, প্যারাসাইটিক টুইন বা অপূর্ণাঙ্গ যমজ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের সম্মানিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ২০ই জুন চিকিৎসকবৃন্দ শিশুটিকে ভারমুক্ত করার জন্য অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শিশু সার্জারি বিভাগের সম্মানিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ রুহুল আমিন জানান, ‘অপূর্ণাঙ্গ শিশুটির একটি কিডনী, মূত্রাশয় ও পুঃলিঙ্গ রয়েছে- যা দিয়ে সে নিয়মিত প্রসাব করছে। অপূর্ণাঙ্গ যমজ শিশুটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নীরিক্ষা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। অপূর্ণাঙ্গ শিশুটি সংযুক্ত আছে পূর্ণাঙ্গ শিশুটির পেটের ডান দিকে এবং অপূর্ণাঙ্গ শিশুটির পিঠের হাড় পূর্ণাঙ্গ শিশুটির বুকের হাড়ের সাথে মিশানো আছে। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ শিশুটির নাভিও অসম্পূর্ণ যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় এক্সমফালোস ((Exomphalos)|।
বাড়তি অং ভিতরের যকৃৎ ও খাদ্যনালী রয়েছে একটি পর্দা দিয়ে ঢাকা অবস্থায়। এটাকেও একটি জটিল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে নাভির অসম্পূর্ণতা ঠিক করে দিতে হবে। পূর্ণাঙ্গ শিশুটিকে অপূর্ণাঙ্গ শিশু থেকে আলাদা করার পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ শিশুটির নাভির অপূর্ণতাও ঠিক করে দেয়া হবে। এ্যানালজেশিয়া, এ্যানেসথেশিয়া এ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগ এবং নবজাতক বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত টিম শিশুটিকে অস্ত্রোপচার করবেন।
বাগেরহাট জেলার যাত্রাপুর গ্রামের দিনমজুর মো. জাকারিয়ার স্ত্রী গৃহবধূ হীরামনির ঘরে গত ৭ মার্চ শিশুটির জন্ম হয়।
শিশুর মা হীরামনি জানান, এর আগে তার তিনটি সুস্থ স্বাভাবিক কন্যা সন্তান রয়েছে। শিশুটি মায়ের দুধ খাচ্ছে। সাতমাসের গর্ভাবস্থায় স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনি আলট্রাসনোগ্রাম করান। তখন চিকিৎসকরা ছেলে সন্তান হবে জানালেও আর কোনো সমস্যার কথা বলেননি। বর্তমানে জোড়া লাগানো এই শিশুটির কোন সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানান শিশুর মা হীরামণি বেগম।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু সার্জারি বিভাগই ২০০৮ সালে বন্যা ও বর্ষাকে মাত্র তিন মাস বয়সে জোড়া লাগানো শিশুর সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করেন। শিশু সার্জারি বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ শফিকুল হকের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৮ ঘণ্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা হয়েছিল।