ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালেজিরার কার্যকারিতা জানেন কী

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সাধারণত কালোজিরা নামটি পরিচিত হলেও, কালোজিরার আরো কিছু নাম আছে, যেমন-কালো কেওড়া, রোমান করিয়েন্ডার বা রোমান ধনে, নিজেলা, ফিনেল ফ্লাওয়ার, হাব্বাটুসউডা ও কালঞ্জি ইত্যাদি। যে নামেই ডাকা হোকনা কেন এই কালো বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা অপরিসীম। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন থেকে শুরু করে শরীরের কোষ ও কলার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কালোজিরা। কালোজিরা একটি মাঝারী আকৃতির মৌসুমী গাছ। এই গাছের একবার ফুল ও ফলহয়।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কালোজিরাকে একটি অব্যর্থ রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসাবে বিশ্বাস করে। এর সাথে একটি হাদিস জড়িত আছে। হাদিসটি হলো—‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহিওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “এ কালোজিরা সাম ব্যতীত সমস্ত রোগের নিরাময়। আমি বললাম, সাম কি? তিনি বললেন, মৃত্যু!” আমাদের আধুনিক ডাক্তারিশাস্ত্র আর ধর্মীয় অনুভূতি যাই বলি না কেন, কালোজিরা সবখানে স্বমহিমায় উজ্জ্বল।

কালোজিরার তেলে রয়েছে ১০০টিরও বেশি উপযোগী উপাদান। এতে রয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ আমিষ, ৩৮ শতাংশ শর্করা এবং ৩৫ শতাংশ ভেজষ তেল ও চর্বি। কালোজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। এতে আরো আছে আমিষ, শর্করা ও প্রোয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডসহ নানা উপাদান। পাশাপাশি কালোজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, টাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি। এর মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও জীবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদানসমূহ। ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হর্মোন, প্রস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক রয়েছে এই কালোজিরায়।

আসুন জেনে নেই কালোজিরার কার্যকারিতা:-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে:- এক চা চামচ পুদিনা পাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রঙ চায়ের সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার করে নিয়মিত খেতে হবে তাহলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে, এভাবে নিয়মিত খেলে দুশ্চিন্ত দূর হবে। এছাড়া কালোজিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে কালোজিরা।

সর্দি সারাতে:-এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার খেতে হবে এবং রোগ সেরে না যাওয়া পর্যন্ত মাথায় ও ঘাড়ে  মালিশ করতে হবে। এছাড়া এক চা-চামচ কালোজিরার সাথে তিন চা-চামচ মধু ও দুই চা-চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি দূর হবে। সর্দি বসে গেলে কালোজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিন। একই সাথে পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কালোজিরা বেঁধে শুকতে হবে, শ্লেষ্মা তরল হয়ে ঝরে পড়বে। আরো দ্রুত ফল পেতে বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল প্রতিনিয়ত মালিশ করতে হবে।

মাথা ব্যাথা নিরাময়ে:-হঠাৎ মাথা ব্যথা শুরু হলে ২ চা চামচ কালোজিরার তেল মাথায় ভালোকরে মালিশ করুন এবং এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে তিনবার করে খাবেন। এটা ৩ সপ্তাহ খেলে ভাল হবে।

হার্টের যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রে:-কালোজিরার তেল হার্টের রুগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারি। এক চা চামচ কালোজিরার তেল এবং এক কাপ দুধ প্রতিদিন ২বার করে খেলে হার্টের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। সাথে কালোজিরার তেল দিয়ে বুকে নিয়মিত মালিশ করুন।

চর্মরোগ সারাতে:-চর্ম রোগে আক্রান্ত স্থান ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে তাতে কালোজিরার তেল মালিশ করতে হবে। এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল, সমপরিমান মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে দৈনিক ৩বার খেতেও হবে এটা ২/৩ সপ্তাহ খেতে হবে।

বাতের ব্যাথা:-বাতের ব্যথা হলে সেখানে ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে তাতে কালোজিরার তেল মালিশ করতে হবে। এক চা-চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল সমপরিমান মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে দৈনিক ৩বার খেতে হবে এটা ২/৩ সপ্তাহ খেতে হবে। তাহলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।

অর্শ নিরাময়ে:-এক চা-চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তিলের তেল, এক চা-চামচ কালোজিরার তেলসহ প্রতিদিন খালি পেটে ৪ সপ্তাহ খেতে হবে। এতে অর্শরোগ থেকে নিরাময় পাওয়ার সুযোগ আছে।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে:-প্রতিদিন সকালে রসুনের দুটি কোষ চিবিয়ে খেয়ে এবং সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করে সূর্যেরতাপে কমপক্ষে আধা ঘন্টা বসে থাকতে হবে এবং এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ প্রতি সপ্তাহে ২/৩ দিন খেতে হবে ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে:-ডায়াবেটিকদের রোগ উপশমে বেশ কাজে আসে কালোজিরা। এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সাথে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে থাকলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। এই কালোজিরা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। গরম ভাতের সাথে কালোজিরা মিশিয়ে দৈনিক ২বার করে নিয়মিত খেলে একশত ভাগ ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে:-কালোজিরা নারী পুরুষ উভয়ের যৌনক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। প্রতিদিন কালোজিরা খাবারের সাথে খেলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত আছে যে, কালোজিরা যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। একচা-চামচ মাখন, এক চা চামচ জাইতুন তেল সমপরিমাণ কালোজিরার তেল ও মধুসহ দৈনিক ৩বার ৫ সপ্তাহ ধরে খেলে অনেক উপকার হবে। তবে পুরানো কালোজিরা তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

মায়ের দুধ বৃদ্ধিতে:-যেসব মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাদের মহৌষধ কালোজিরা। মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সাথে খেতে হবে। মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ সমস্যা সমাধানে কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সাথে খেলেও ভাল ফল পাবে।

অনিয়মিত মাসিক সারাতে:-এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক কাপ চা-চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩বার করে নিয়মিত খেতে হবে। তাহলে অনেক ভাল কাজ হবে।

শ্বাস কষ্ট বা হাঁপানি রোগ সারাতে:-যারা হাঁপানী বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য কালোজিরা অনেক বেশি উপকারী। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা রাখুন খাদ্য তালিকায়। কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যা থেকে উপশম দিবে। এছাড়া এক কাপ চা-চামচ কালোজিরার তেল, এক কাপ দুধ বা রং চায়ের সাথে দৈনিক ৩বার করে নিয়মিত খাবেন।

ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে:-ত্বক গঠনের উন্নতি ও ত্বকের প্রভা বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা অত্যাবশ্যকীয়। এতে লিনোলেইক ও লিনোলেনিক নামের এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড থাকে যা পরিবেশের প্রখরতা, স্ট্রেস ইত্যাদি থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বককে সুন্দর করে ও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে।

কিডনির পাথর ও ব্লাডার:-২৫০ গ্রাম কালোজিরা ও সমপরিমাণ বিশুদ্ধ মধু, কালোজিরা উত্তমরূপে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশ্রিত করে দুই চামচ মিশ্রণ আধাকাপ গরমপানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন আধাকাপ তেল সহ পান করতে হবে। কালোজিরার টীংচার মধুসহ দিনে ৩/৪ বার ১৫ ফোটা সেবন করতে পারেন।

রিউমেটিক এবং পিঠেব্যাথা দূরীকরণ:-কালোজিরার থেকে যে তেল বের করা হয় তা আমাদের দেহে বাসা বাঁধা দীর্ঘমেয়াদী রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা কমাতে বেশ সাহায্য করে। এছাড়াও সাধারণভাবে কালোজিরা খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।

উচ্চরক্তচাপ:-যখনই গরম পানীয় বা চা পান করবেন তখনই কালোজিরা কোন না কোন ভাবে সাথে খাবেন। গরমখাদ্য বা ভাত খাওয়ার সময় কালোজিরা ভর্তা খান। এ উভয়পদ্ধতির সাথে রসুনের তেল সাথে রাখুন। সারা দেহে রসুন ও কালোজিরা তেল মালিশ করুন। কালোজিরা, নিম ও রসুনের তেল একসাথে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন। ভালো মনে করলে পুরাতন রোগীদের ক্ষেত্রে একাজটি ২/৩ দিন অন্তরও করা যায়।

স্বাস্থ্য ভাল রাখতে:-মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।

লিভারের সুরক্ষায়:-লিভারের সুরক্ষায় কালোজিরা ভেষজটি অনন্য। লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী আফলাটক্সিন নামক বিষ ধ্বংস করে কালোজিরা।

শান্তিপূর্ণ ঘুমের প্রয়োজনে:-কালোজিরার তেল ব্যবহারে রাতভর প্রশান্তি পূর্ন নিদ্রা হয়।

একটু সতর্কতা, গর্ভাবস্থায় ও দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করানো উচিত নয়। তবে বাহ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যাবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

কালেজিরার কার্যকারিতা জানেন কী

আপডেট টাইম : ০৬:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সাধারণত কালোজিরা নামটি পরিচিত হলেও, কালোজিরার আরো কিছু নাম আছে, যেমন-কালো কেওড়া, রোমান করিয়েন্ডার বা রোমান ধনে, নিজেলা, ফিনেল ফ্লাওয়ার, হাব্বাটুসউডা ও কালঞ্জি ইত্যাদি। যে নামেই ডাকা হোকনা কেন এই কালো বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা অপরিসীম। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন থেকে শুরু করে শরীরের কোষ ও কলার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কালোজিরা। কালোজিরা একটি মাঝারী আকৃতির মৌসুমী গাছ। এই গাছের একবার ফুল ও ফলহয়।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কালোজিরাকে একটি অব্যর্থ রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসাবে বিশ্বাস করে। এর সাথে একটি হাদিস জড়িত আছে। হাদিসটি হলো—‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহিওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “এ কালোজিরা সাম ব্যতীত সমস্ত রোগের নিরাময়। আমি বললাম, সাম কি? তিনি বললেন, মৃত্যু!” আমাদের আধুনিক ডাক্তারিশাস্ত্র আর ধর্মীয় অনুভূতি যাই বলি না কেন, কালোজিরা সবখানে স্বমহিমায় উজ্জ্বল।

কালোজিরার তেলে রয়েছে ১০০টিরও বেশি উপযোগী উপাদান। এতে রয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ আমিষ, ৩৮ শতাংশ শর্করা এবং ৩৫ শতাংশ ভেজষ তেল ও চর্বি। কালোজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। এতে আরো আছে আমিষ, শর্করা ও প্রোয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডসহ নানা উপাদান। পাশাপাশি কালোজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, টাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি। এর মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও জীবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদানসমূহ। ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হর্মোন, প্রস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক রয়েছে এই কালোজিরায়।

আসুন জেনে নেই কালোজিরার কার্যকারিতা:-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে:- এক চা চামচ পুদিনা পাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রঙ চায়ের সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার করে নিয়মিত খেতে হবে তাহলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে, এভাবে নিয়মিত খেলে দুশ্চিন্ত দূর হবে। এছাড়া কালোজিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে কালোজিরা।

সর্দি সারাতে:-এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার খেতে হবে এবং রোগ সেরে না যাওয়া পর্যন্ত মাথায় ও ঘাড়ে  মালিশ করতে হবে। এছাড়া এক চা-চামচ কালোজিরার সাথে তিন চা-চামচ মধু ও দুই চা-চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি দূর হবে। সর্দি বসে গেলে কালোজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিন। একই সাথে পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কালোজিরা বেঁধে শুকতে হবে, শ্লেষ্মা তরল হয়ে ঝরে পড়বে। আরো দ্রুত ফল পেতে বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল প্রতিনিয়ত মালিশ করতে হবে।

মাথা ব্যাথা নিরাময়ে:-হঠাৎ মাথা ব্যথা শুরু হলে ২ চা চামচ কালোজিরার তেল মাথায় ভালোকরে মালিশ করুন এবং এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে তিনবার করে খাবেন। এটা ৩ সপ্তাহ খেলে ভাল হবে।

হার্টের যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রে:-কালোজিরার তেল হার্টের রুগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারি। এক চা চামচ কালোজিরার তেল এবং এক কাপ দুধ প্রতিদিন ২বার করে খেলে হার্টের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। সাথে কালোজিরার তেল দিয়ে বুকে নিয়মিত মালিশ করুন।

চর্মরোগ সারাতে:-চর্ম রোগে আক্রান্ত স্থান ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে তাতে কালোজিরার তেল মালিশ করতে হবে। এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল, সমপরিমান মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে দৈনিক ৩বার খেতেও হবে এটা ২/৩ সপ্তাহ খেতে হবে।

বাতের ব্যাথা:-বাতের ব্যথা হলে সেখানে ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে তাতে কালোজিরার তেল মালিশ করতে হবে। এক চা-চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল সমপরিমান মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে দৈনিক ৩বার খেতে হবে এটা ২/৩ সপ্তাহ খেতে হবে। তাহলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।

অর্শ নিরাময়ে:-এক চা-চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তিলের তেল, এক চা-চামচ কালোজিরার তেলসহ প্রতিদিন খালি পেটে ৪ সপ্তাহ খেতে হবে। এতে অর্শরোগ থেকে নিরাময় পাওয়ার সুযোগ আছে।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে:-প্রতিদিন সকালে রসুনের দুটি কোষ চিবিয়ে খেয়ে এবং সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করে সূর্যেরতাপে কমপক্ষে আধা ঘন্টা বসে থাকতে হবে এবং এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ প্রতি সপ্তাহে ২/৩ দিন খেতে হবে ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে:-ডায়াবেটিকদের রোগ উপশমে বেশ কাজে আসে কালোজিরা। এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সাথে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে থাকলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। এই কালোজিরা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। গরম ভাতের সাথে কালোজিরা মিশিয়ে দৈনিক ২বার করে নিয়মিত খেলে একশত ভাগ ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে:-কালোজিরা নারী পুরুষ উভয়ের যৌনক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। প্রতিদিন কালোজিরা খাবারের সাথে খেলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত আছে যে, কালোজিরা যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। একচা-চামচ মাখন, এক চা চামচ জাইতুন তেল সমপরিমাণ কালোজিরার তেল ও মধুসহ দৈনিক ৩বার ৫ সপ্তাহ ধরে খেলে অনেক উপকার হবে। তবে পুরানো কালোজিরা তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

মায়ের দুধ বৃদ্ধিতে:-যেসব মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাদের মহৌষধ কালোজিরা। মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সাথে খেতে হবে। মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ সমস্যা সমাধানে কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সাথে খেলেও ভাল ফল পাবে।

অনিয়মিত মাসিক সারাতে:-এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক কাপ চা-চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩বার করে নিয়মিত খেতে হবে। তাহলে অনেক ভাল কাজ হবে।

শ্বাস কষ্ট বা হাঁপানি রোগ সারাতে:-যারা হাঁপানী বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য কালোজিরা অনেক বেশি উপকারী। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা রাখুন খাদ্য তালিকায়। কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যা থেকে উপশম দিবে। এছাড়া এক কাপ চা-চামচ কালোজিরার তেল, এক কাপ দুধ বা রং চায়ের সাথে দৈনিক ৩বার করে নিয়মিত খাবেন।

ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে:-ত্বক গঠনের উন্নতি ও ত্বকের প্রভা বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা অত্যাবশ্যকীয়। এতে লিনোলেইক ও লিনোলেনিক নামের এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড থাকে যা পরিবেশের প্রখরতা, স্ট্রেস ইত্যাদি থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বককে সুন্দর করে ও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে।

কিডনির পাথর ও ব্লাডার:-২৫০ গ্রাম কালোজিরা ও সমপরিমাণ বিশুদ্ধ মধু, কালোজিরা উত্তমরূপে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশ্রিত করে দুই চামচ মিশ্রণ আধাকাপ গরমপানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন আধাকাপ তেল সহ পান করতে হবে। কালোজিরার টীংচার মধুসহ দিনে ৩/৪ বার ১৫ ফোটা সেবন করতে পারেন।

রিউমেটিক এবং পিঠেব্যাথা দূরীকরণ:-কালোজিরার থেকে যে তেল বের করা হয় তা আমাদের দেহে বাসা বাঁধা দীর্ঘমেয়াদী রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা কমাতে বেশ সাহায্য করে। এছাড়াও সাধারণভাবে কালোজিরা খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।

উচ্চরক্তচাপ:-যখনই গরম পানীয় বা চা পান করবেন তখনই কালোজিরা কোন না কোন ভাবে সাথে খাবেন। গরমখাদ্য বা ভাত খাওয়ার সময় কালোজিরা ভর্তা খান। এ উভয়পদ্ধতির সাথে রসুনের তেল সাথে রাখুন। সারা দেহে রসুন ও কালোজিরা তেল মালিশ করুন। কালোজিরা, নিম ও রসুনের তেল একসাথে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন। ভালো মনে করলে পুরাতন রোগীদের ক্ষেত্রে একাজটি ২/৩ দিন অন্তরও করা যায়।

স্বাস্থ্য ভাল রাখতে:-মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।

লিভারের সুরক্ষায়:-লিভারের সুরক্ষায় কালোজিরা ভেষজটি অনন্য। লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী আফলাটক্সিন নামক বিষ ধ্বংস করে কালোজিরা।

শান্তিপূর্ণ ঘুমের প্রয়োজনে:-কালোজিরার তেল ব্যবহারে রাতভর প্রশান্তি পূর্ন নিদ্রা হয়।

একটু সতর্কতা, গর্ভাবস্থায় ও দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করানো উচিত নয়। তবে বাহ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যাবে।