বলিউড অভিনেতা তুষার কাপুর বিয়ে না-করেও একটি সন্তানের বাবা হওয়ার কথা ঘোষণা করে দেশকে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন। অতীতের সুপারস্টার জিতেন্দ্রর ছেলে তুষার জানিয়েছেন, আইভিএফ প্রযুক্তি ও সারোগেসির মাধ্যমে এ মাসেই ‘লক্ষ্য’ নামে এই শিশুটির জন্ম হয়েছে – এবং এখন একজন ‘সিঙ্গেল ফাদার’ হিসেবে বাবা-মা-বোনের সাহায্যে তিনি তাকে মানুষ করবেন। বলিউডের অনেক সতীর্থ ও দেশের অনেক সিঙ্গেল বাবা-মা তুষার কাপুরকে সাবাস জানলেও আইনি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন তার এই সিদ্ধান্ত কতটা আইনসিদ্ধ তা এখনও পরিষ্কার নয়।
গত প্রায় ১৫/১৬ বছর ধরে বলিউডে মোটামুটি সাফল্যের সঙ্গেই অভিনয় করে যাচ্ছেন তুষার কাপুর – তবে এতদিন তার কোনও ছবিই ততটা সাড়া ফেলেনি যতটা ফেলেছে তার সোমবার বিকেলের ঘোষণা, যে তিনি সিঙ্গেল ফাদার হচ্ছেন!
তুষার বলছেন, ‘বাবা হওয়ার ইচ্ছে তো ছিলই। ড: ফিরোজা পারিখ আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন কীভাবে সেটা সম্ভব, তার কথা শুনেই আমি এগোই – আমার একটু তাড়াও ছিল, কারণ আমি এ বছর চল্লিশে পড়ব। আমি খুব খুশি যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি – আমার পরিবার, বাবা-মা, আমি, বোন আর ছোট্ট লক্ষ্য-কে নিয়ে এতদিনে সম্পূর্ণ হল।’
তুষারের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই করণ জোহর, ফারাহ খান, রীতেশ দেশমুখের মতো সহকর্মীরা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভারতে সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে বিয়ে না-করেও এভাবে বাবা হওয়ার জন্য তার সাহসের প্রশংসা করেছেন।
তুষার নিজে অবশ্য বলেছেন, এটা সাহসের ব্যাপার নয় – পিতৃত্বের ইনস্টিংক্টের ব্যাপার। যখন তিনি নিজেকে পিতৃত্ব নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত মনে করেছেন তখনই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তুষার কাপুর যে একটা দারুণ দৃষ্টান্ত গড়লেন তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই – বলছিলেন আইভিএফের মাধ্যমে সন্তান নেওয়া
তিনি বলেছেন, ‘সময়ের সাথে ভারতবর্ষে অনেক দরজা জানালাই খুলছে। পৃথিবীতে পরিবারের সংজ্ঞাও খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তার সাথে আমাদের দেশও যে পিছিয়ে নেই, তুষার কাপুর সেটা নিজের জীবনে প্রমাণ করলেন।’
মিস সর্বাধিকারী আরও বলছিলেন, তিনি যখন স্পার্ম ব্যাঙ্ক থেকে স্পার্ম নিয়ে আইভিএফ করে সিঙ্গেল মাদার হয়েছিলেন, তখন তার সে রকম আর কোনও উদাহরণ তার জানা ছিল না।
কিন্তু যখন একজন সেলেব্রিটি এরকম পদক্ষেপ নেন, তখন আরও বহু মানুষ – প্রথাগত রাস্তায় নানা কারণে যাদের পক্ষে বাবা-মা হওয়া সম্ভব নয় – তাদের পিতৃত্ব বা মাতৃত্বের স্বপ্নও পূর্ণ হতে পারে। সে কারণেই মিস সর্বাধিকারীর মতে এটা ভীষণ সাহসী একটা পদক্ষেপ। এর পরেও যে প্রশ্নটা থাকছে তা হল তুষার কাপুরের এই পিতৃত্ব কতটা আইনসিদ্ধ।
তুষার নিজে দাবি করেছেন, সমস্ত আইনি বাধ্যবাধকতা তিনি পূর্ণ করেছেন, তবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী বিক্রমজিৎ ব্যানার্জি মনে করেন সারোগেসি চুক্তি নিয়ে ভারতীয় আইনে বেশ কিছু অস্পষ্টতা আছে।
মি ব্যানার্জির কথায়, ‘দুদিক থেকেই এটা দেখা যেতে পারে। কেউ বলতে পারেন এটা আমার পিতৃত্বের অধিকার, আমি করেছি ব্যাস। আবার অন্য দিক থেকে কেউ বলতে পারেন এই ধরনের পিতৃত্ব নৈতিকতা বা সামাজিকতার পরিপন্থী।’
‘ফলে যতক্ষণ না আদালতে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও রায় আসে – কিংবা ভারত সরকার সারোগেসি চুক্তিতে মা বা গর্ভধারিণীর অধিকার নির্দিষ্ট করে কোনও নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করে, ততদিন এই ধরনের পিতৃত্ব নিয়ে আইনি অস্পষ্টতা থেকেই যাবে,’ বলছিলেন মি ব্যানার্জি।
ফলে কখনও যদি কেউ তুষারের সন্তানের জন্ম নিয়ে বা মাতৃত্বের দাবি নিয়ে কোর্টে যান তখন কী হবে সেটা আলাদা প্রশ্ন, কিন্তু আপাতত তুষার কাপুরকে লোকে নতুন করে চিনছে ভারতে একাকী বাবা-দের আইকন হিসেবেই!