ঢাকা , শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
টাকার পাহাড় গড়েছেন তারা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে শেখ হাসিনা: সেলিমা রহমান ভারতে থাকার বৈধ মেয়াদ শেষ, কী ঘটবে শেখ হাসিনার ভাগ্যে ভারতে ‘এক দেশ এক ভোট’ কি সত্যিই হবে পুলিশের কাজ পুলিশকে দিয়েই করাতে হবে, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না জাতিসংঘ অধিবেশন নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে ড. ইউনূসের বৈশ্বিক-আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক জরুরি: বাইডেন ইলিশের দাম কমছে না কেন বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মধ্যে হাতাহাতি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মধ্যে হাতাহাতি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন

আমি যে বেঁচে আছি পরিবার জানতো না’

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জহিরুল ইসলামের বাড়ি বাংলাদেশের গাজীপুরে। উন্নত জীবনের আশায় ২০১৩ সালে তিনি সমুদ্র পথে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানো হয় নি তার। সেখান থেকে ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া।

সবশেষে পাপুয়া নিউ গিনির এক ক্যাম্পে ঠাঁই হয় তার। সেখানে কেটে যায় জীবনের চারটি বছর। পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারেননি এই চার বছরের বেশির ভাগ সময়। জহিরুল ইসলাম বলছিলেন, এপর্যন্ত তার ১০ লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। দেশে জমি-জমা বিক্রি করে, ঋণ করে তিনি সেই টাকা জোগাড় করেন।

তিনি যে বেঁচে আছেন দীর্ঘদিন তা জানাতে পারেননি তার পরিবারকে। “এই সময়ের মধ্যে আমার বাবা মারা যান। কিন্তু আমি সেই খবর পেয়েছি অনেক পরে। কারণ আমার পরিবার জানতো না যে আমি বেঁচে আছি কিনা,” বলছিলেন মি. ইসলাম। জহিরুল ইসলাম জানালেন, দালালের মাধ্যমে তিনি কাগজপত্র করেছিলেন বিদেশে যাওয়ার। দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি, বিদেশে গিয়ে কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাবেন এমনটাই ছিল তার লক্ষ্য। পরিবারও আশায় বুক বেঁধে ছিল। কিন্তু ২৫ বছরের যে যুবক বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় কাজের সন্ধানে, তার খোঁজ মেলে চার বছর পর।

তিনি বলেন, পদে পদে তাকে অর্থ দিতে হয়েছে কখনো গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য, আবার কখনো আবার কাজ পাইয়ে দেবার জন্য। কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্য কিংবা কাজ কোনটাই হয়নি তার। অস্ট্রেলিয়া পৌঁছানোর পর তিনি দেখতে পান তারই মত আরো অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন সেখানে, যারা কাজের খোঁজে যেয়ে আটকা পরেছেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ এই বাংলাদেশীদের প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ পাপুয়া নিউ গিনির একটি অভিবাসী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়।

নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেসব আশ্রয়প্রার্থী অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করে তাদের পাপুয়া নিউ গিনিতে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে। এই অভিবাসী শিবিরে জহিরুল ইসলামের মতো আটক অভিবাসীদের বলা হয়, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অন্য কোন দেশে পাঠানো হবে। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও একরকম নজরবন্দীর মধ্যে জীবন পার করতে হচ্ছে তাকেসহ আরো অনেক বাংলাদেশিকে। আটক থাকার কারণে কোন কাজের সুযোগ ছিল না। হাতে তাই টাকাপয়সাও নেই। মি. ইসলাম বলছিলেন, শুধুমাত্র তাদের ক্যাম্পেই এই মুহূর্তে রয়েছেন ১২জন বাংলাদেশী।

অন্যান্য ক্যাম্পে আরো বাংলাদেশী আছেন বলে তিনি জানালেন। অতি সম্প্রতি দু’জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে তিনি বলছেন। তাদেরকেও ফেরত পাঠানো হবে বলে তারা জানতে পেরেছেন। পাপুয়া নিউগিনির ক্যাম্প থেকে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলার সময় হতাশা ঝড়ে পড়ছিল জহিরুল ইসলামের কণ্ঠে। “টাকা-পয়সা ধার করে এখানে আসছি, একটা টাকাও ইনকাম করতে পারিনি। অমানবিক কষ্ট সহ্য করেছি।”

“বাবা মারা গেছে, কিন্তু তাকে দেখা তো দূরের কথা, খবর পেয়েছি অনেক দিন পর। এখন যদি আমাকে ফেরত পাঠায়, তাহলে কো‌ন্‌ মুখে বাড়ি ফিরবো?” কারাগারে আটক বাংলাদেশীদের অনেকেই বলছেন, তাদের যদি অন্য কোন দেশে পাঠিয়ে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে কিছু অর্থ তারা পরিবারের কাছে পাঠাতে পারবেন। তে অন্তত ঋণের টাকাগুলো তারা শোধ করতে পারবেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

টাকার পাহাড় গড়েছেন তারা

আমি যে বেঁচে আছি পরিবার জানতো না’

আপডেট টাইম : ০২:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মার্চ ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জহিরুল ইসলামের বাড়ি বাংলাদেশের গাজীপুরে। উন্নত জীবনের আশায় ২০১৩ সালে তিনি সমুদ্র পথে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানো হয় নি তার। সেখান থেকে ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া।

সবশেষে পাপুয়া নিউ গিনির এক ক্যাম্পে ঠাঁই হয় তার। সেখানে কেটে যায় জীবনের চারটি বছর। পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারেননি এই চার বছরের বেশির ভাগ সময়। জহিরুল ইসলাম বলছিলেন, এপর্যন্ত তার ১০ লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। দেশে জমি-জমা বিক্রি করে, ঋণ করে তিনি সেই টাকা জোগাড় করেন।

তিনি যে বেঁচে আছেন দীর্ঘদিন তা জানাতে পারেননি তার পরিবারকে। “এই সময়ের মধ্যে আমার বাবা মারা যান। কিন্তু আমি সেই খবর পেয়েছি অনেক পরে। কারণ আমার পরিবার জানতো না যে আমি বেঁচে আছি কিনা,” বলছিলেন মি. ইসলাম। জহিরুল ইসলাম জানালেন, দালালের মাধ্যমে তিনি কাগজপত্র করেছিলেন বিদেশে যাওয়ার। দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি, বিদেশে গিয়ে কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাবেন এমনটাই ছিল তার লক্ষ্য। পরিবারও আশায় বুক বেঁধে ছিল। কিন্তু ২৫ বছরের যে যুবক বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় কাজের সন্ধানে, তার খোঁজ মেলে চার বছর পর।

তিনি বলেন, পদে পদে তাকে অর্থ দিতে হয়েছে কখনো গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য, আবার কখনো আবার কাজ পাইয়ে দেবার জন্য। কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্য কিংবা কাজ কোনটাই হয়নি তার। অস্ট্রেলিয়া পৌঁছানোর পর তিনি দেখতে পান তারই মত আরো অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন সেখানে, যারা কাজের খোঁজে যেয়ে আটকা পরেছেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ এই বাংলাদেশীদের প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ পাপুয়া নিউ গিনির একটি অভিবাসী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়।

নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেসব আশ্রয়প্রার্থী অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করে তাদের পাপুয়া নিউ গিনিতে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে। এই অভিবাসী শিবিরে জহিরুল ইসলামের মতো আটক অভিবাসীদের বলা হয়, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অন্য কোন দেশে পাঠানো হবে। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও একরকম নজরবন্দীর মধ্যে জীবন পার করতে হচ্ছে তাকেসহ আরো অনেক বাংলাদেশিকে। আটক থাকার কারণে কোন কাজের সুযোগ ছিল না। হাতে তাই টাকাপয়সাও নেই। মি. ইসলাম বলছিলেন, শুধুমাত্র তাদের ক্যাম্পেই এই মুহূর্তে রয়েছেন ১২জন বাংলাদেশী।

অন্যান্য ক্যাম্পে আরো বাংলাদেশী আছেন বলে তিনি জানালেন। অতি সম্প্রতি দু’জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে তিনি বলছেন। তাদেরকেও ফেরত পাঠানো হবে বলে তারা জানতে পেরেছেন। পাপুয়া নিউগিনির ক্যাম্প থেকে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলার সময় হতাশা ঝড়ে পড়ছিল জহিরুল ইসলামের কণ্ঠে। “টাকা-পয়সা ধার করে এখানে আসছি, একটা টাকাও ইনকাম করতে পারিনি। অমানবিক কষ্ট সহ্য করেছি।”

“বাবা মারা গেছে, কিন্তু তাকে দেখা তো দূরের কথা, খবর পেয়েছি অনেক দিন পর। এখন যদি আমাকে ফেরত পাঠায়, তাহলে কো‌ন্‌ মুখে বাড়ি ফিরবো?” কারাগারে আটক বাংলাদেশীদের অনেকেই বলছেন, তাদের যদি অন্য কোন দেশে পাঠিয়ে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে কিছু অর্থ তারা পরিবারের কাছে পাঠাতে পারবেন। তে অন্তত ঋণের টাকাগুলো তারা শোধ করতে পারবেন।