ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রবাসীদের জন্য দুঃসংবাদ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরতে হচ্ছে লক্ষাধিক বাংলাদেশিকে। ৩১ আগস্টের মধ্যে দেশে না ফিরলে জেল-জরিমানা হবে। তাই এর আগেই আত্মসমর্পণ করে দেশে ফিরতে হবে তাদের। অবশ্য এখনো ইমিগ্রেশন এবং পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের। এদের বেশিরভাগই বৈধ হওয়ার সুযোগ গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ফির চেয়েও বেশি অর্থ দালালদের হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু প্রতারণা তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এখন দেশে ফেরার অর্থ দেওয়ার সামর্থ্যও নেই অনেক হতভাগ্য বাংলাদেশির।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে দেশটিতে কর্মরত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতার ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া সরকার। ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে দীর্ঘ আড়াই বছর চলে বৈধকরণ প্রক্রিয়া। শেষ হয় চলতি বছরের ৩০ জুন। এ প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া সরকার দুটি প্রোগ্রাম চালু রেখেছিল। এর একটি রি-হিয়ারিং এবং অন্যটি ই-কার্ড। এ দুটি প্রোগ্রামকে ঘিরেই গড়ে ওঠে শক্তিশালী মধ্যস্বত্বভোগী চক্র। কর্মীদের বৈধ করে দেওয়ার নামে তারা জনপ্রতি ৫-১০ হাজার রিঙ্গিত হাতিয়ে নেয়। কিন্তু বৈধতা তো দূরের কথা, বৈধ করার নাম করে খেটে খাওয়া অবৈধ কর্মীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। প্রতারকদের হাতে টাকা-পয়সা আর পাসপোর্ট তুলে দিলেও তাদের কপালে জোটেনি বৈধতা। এসব অবৈধের সংখ্যা লাখখানেকেরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা ও প্রবাসীরা জানান, মূলত বাংলাদেশি প্রতারকদের কাছেই প্রতারিত হয়েছেন এসব স্বদেশি। প্রতারকরা প্রকাশ্যে এ ধরনের প্রতারণা চালিয়ে অবৈধ কর্মীর কাছ থেকে বৈধ করে দেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মীদের বৈধ করতে পারেনি। কর্মীদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না তারা। উল্টো কর্মীদের পুলিশের ভয় দেখানো হচ্ছে। আর এসব প্রতারকের সঙ্গে স্থানীয় মালয়েশিয়ান পুলিশের সখ্যও চোখে পড়ার মতো। এসব কারণে প্রতারক চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হচ্ছে কর্মীদের। পুলিশের ভয়ে পালিয়ে থাকায় বিভিন্ন মালিক তাদের দিয়ে অর্ধেক মজুরিতে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। ফলে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে মাস শেষে খেয়েপরে বাঁচতেই কষ্ট হচ্ছে অবৈধ কর্মীদের। মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বৈধ হওয়ার আবেদন করতে নিয়মানুসারে ১ হাজার ২০০ রিঙ্গিত জমা দেওয়া লাগলেও অনেকেই প্রতারকদের বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে বৈধ হওয়ার জন্য নিশ্চিত মনে বসেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন ১ জুলাই থেকে মেগা-থ্রি নামে অভিযান শুরু করে মালয়েশীয় সরকার তখন থেকেই আটক হচ্ছেন তারা। আটক হওয়ার পর আদালতের দেওয়া জেল খাটার পর দেশে ফেরার সুযোগ পাবেন এই অবৈধরা। তবে সে জন্য দিতে হবে আরও ৪০০ থেকে ৯০০ রিঙ্গিত।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, বহুদিন মালয়েশিয়া থাকার পরও বৈধ কাগজপত্র না থাকা বাংলাদেশিরা এখন আতঙ্কিত। মালয়েশিয়ার পুলিশ ও ইমিগ্রেশন কোথাও হানা দিচ্ছে, তা জানামাত্র কমিউনিটির লোকজন ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে সবাইকে সতর্ক করে নিমেষে বার্তা পাঠাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও ধরপাকড় এড়ানো যাচ্ছে না। আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের নাগরিকরা আছেন।

মালয়েশিয়ার স্টার অনলাইনের খবরে বলা হয়, ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক শ্রী মোস্তাফার আলি বলেছেন, ৩১ আগস্টের মধ্যে এখান থেকে সব অবৈধ শ্রমিককে থ্রি-প্লাস ওয়ান পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। যারা ওই তারিখের মধ্যে দেশে ফিরবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর থেকে কঠোরতম’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

প্রবাসীদের জন্য দুঃসংবাদ

আপডেট টাইম : ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরতে হচ্ছে লক্ষাধিক বাংলাদেশিকে। ৩১ আগস্টের মধ্যে দেশে না ফিরলে জেল-জরিমানা হবে। তাই এর আগেই আত্মসমর্পণ করে দেশে ফিরতে হবে তাদের। অবশ্য এখনো ইমিগ্রেশন এবং পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের। এদের বেশিরভাগই বৈধ হওয়ার সুযোগ গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ফির চেয়েও বেশি অর্থ দালালদের হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু প্রতারণা তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এখন দেশে ফেরার অর্থ দেওয়ার সামর্থ্যও নেই অনেক হতভাগ্য বাংলাদেশির।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে দেশটিতে কর্মরত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতার ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া সরকার। ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে দীর্ঘ আড়াই বছর চলে বৈধকরণ প্রক্রিয়া। শেষ হয় চলতি বছরের ৩০ জুন। এ প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া সরকার দুটি প্রোগ্রাম চালু রেখেছিল। এর একটি রি-হিয়ারিং এবং অন্যটি ই-কার্ড। এ দুটি প্রোগ্রামকে ঘিরেই গড়ে ওঠে শক্তিশালী মধ্যস্বত্বভোগী চক্র। কর্মীদের বৈধ করে দেওয়ার নামে তারা জনপ্রতি ৫-১০ হাজার রিঙ্গিত হাতিয়ে নেয়। কিন্তু বৈধতা তো দূরের কথা, বৈধ করার নাম করে খেটে খাওয়া অবৈধ কর্মীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। প্রতারকদের হাতে টাকা-পয়সা আর পাসপোর্ট তুলে দিলেও তাদের কপালে জোটেনি বৈধতা। এসব অবৈধের সংখ্যা লাখখানেকেরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা ও প্রবাসীরা জানান, মূলত বাংলাদেশি প্রতারকদের কাছেই প্রতারিত হয়েছেন এসব স্বদেশি। প্রতারকরা প্রকাশ্যে এ ধরনের প্রতারণা চালিয়ে অবৈধ কর্মীর কাছ থেকে বৈধ করে দেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মীদের বৈধ করতে পারেনি। কর্মীদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না তারা। উল্টো কর্মীদের পুলিশের ভয় দেখানো হচ্ছে। আর এসব প্রতারকের সঙ্গে স্থানীয় মালয়েশিয়ান পুলিশের সখ্যও চোখে পড়ার মতো। এসব কারণে প্রতারক চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হচ্ছে কর্মীদের। পুলিশের ভয়ে পালিয়ে থাকায় বিভিন্ন মালিক তাদের দিয়ে অর্ধেক মজুরিতে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। ফলে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে মাস শেষে খেয়েপরে বাঁচতেই কষ্ট হচ্ছে অবৈধ কর্মীদের। মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বৈধ হওয়ার আবেদন করতে নিয়মানুসারে ১ হাজার ২০০ রিঙ্গিত জমা দেওয়া লাগলেও অনেকেই প্রতারকদের বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে বৈধ হওয়ার জন্য নিশ্চিত মনে বসেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন ১ জুলাই থেকে মেগা-থ্রি নামে অভিযান শুরু করে মালয়েশীয় সরকার তখন থেকেই আটক হচ্ছেন তারা। আটক হওয়ার পর আদালতের দেওয়া জেল খাটার পর দেশে ফেরার সুযোগ পাবেন এই অবৈধরা। তবে সে জন্য দিতে হবে আরও ৪০০ থেকে ৯০০ রিঙ্গিত।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, বহুদিন মালয়েশিয়া থাকার পরও বৈধ কাগজপত্র না থাকা বাংলাদেশিরা এখন আতঙ্কিত। মালয়েশিয়ার পুলিশ ও ইমিগ্রেশন কোথাও হানা দিচ্ছে, তা জানামাত্র কমিউনিটির লোকজন ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে সবাইকে সতর্ক করে নিমেষে বার্তা পাঠাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও ধরপাকড় এড়ানো যাচ্ছে না। আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের নাগরিকরা আছেন।

মালয়েশিয়ার স্টার অনলাইনের খবরে বলা হয়, ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক শ্রী মোস্তাফার আলি বলেছেন, ৩১ আগস্টের মধ্যে এখান থেকে সব অবৈধ শ্রমিককে থ্রি-প্লাস ওয়ান পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। যারা ওই তারিখের মধ্যে দেশে ফিরবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর থেকে কঠোরতম’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন