ঢাকা , সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার নিয়ে নতুন সমঝোতা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতেই সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে লোক পাঠানো যাবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুই দেশের মন্ত্রণালয় পর্যায়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া সফররত বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগেরানসহ সরকারি কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয় পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দু’দফা বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী নিজের টুইটারে টুইট করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। আমরা বিদেশি শ্রমিকদের বিষয়ে একটি সমঝোতা করছি।’

বৈঠক শেষে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্মসচিব) আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর জানান, সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়াও কলিং ভিসায় কর্মী নিয়োগের বিষয়েও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এ প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু অপেক্ষমাণ কর্মীদের পথ উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণের বিষয়েও মালয়েশিয়া সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি সুরাহা এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা যৌথভাবে কাজ করতে চায়।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী কুলাসেগেরান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলামকে জানিয়েছি যে, মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশির ব্যাপারে সুরাহা করা প্রয়োজন। এদের বেশিরভাগই নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে।’মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর টুইট তিনি আরও বলেন,  ‘বিদ্যমান অভিবাসন খরচ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে এবং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে আমাদের মন্ত্রণালয় শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি একক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাচ্ছে। এছাড়া সরকার প্রবাসী শ্রমিকদের ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনাও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছে। এর পাশপাশি বিদেশি শ্রমিকদের ব্যাপারে নতুন একটি এমওইউ নিয়ে কাজ করার কথাও তিনি তার টুইটারে উল্লেখ করেন।’

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ ও প্রশাসন) আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন মন্ত্রী দেশে এসে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন।

তবে, নতুন করে সমঝোতার বিষয়ে এখনও কিছু জানেনা জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদেরও কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন বায়রার মহাসচিব শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এখনও মন্ত্রণালয়ের মিটিং হয়নি। ওনারা বৃহস্পতিবার এসেছেন, আমাদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ হয়নি। হয়তো রবিবার কথা হতে পারে, তাহলে আমরা পুরো বিষয়টি জানতে পারবো।’

প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশে অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা ১১৭৯টি। ২০১২ সালে দুই দেশ শুধু সরকারি মাধ্যমে (জি টু জি পদ্ধতি) মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে চুক্তি সই করে। ২০১৬ সালে তা পরিমার্জন করে ১০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকে জি টু জি প্লাসের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিতে বেসরকারি পর্যায়ে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লোক নিয়োগ করে মালয়েশিয়া। এতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর মালয়েশিয়া বিদ্যমান পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ বন্ধের ঘোষণা দেয়। ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়া গেছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ১ লাখ ৯ হাজার ৫৬২ জন শ্রমিক পাঠায় বাংলাদেশ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার নিয়ে নতুন সমঝোতা

আপডেট টাইম : ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতেই সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে লোক পাঠানো যাবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুই দেশের মন্ত্রণালয় পর্যায়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া সফররত বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগেরানসহ সরকারি কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয় পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দু’দফা বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী নিজের টুইটারে টুইট করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। আমরা বিদেশি শ্রমিকদের বিষয়ে একটি সমঝোতা করছি।’

বৈঠক শেষে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্মসচিব) আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর জানান, সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়াও কলিং ভিসায় কর্মী নিয়োগের বিষয়েও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এ প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু অপেক্ষমাণ কর্মীদের পথ উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণের বিষয়েও মালয়েশিয়া সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি সুরাহা এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা যৌথভাবে কাজ করতে চায়।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী কুলাসেগেরান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলামকে জানিয়েছি যে, মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশির ব্যাপারে সুরাহা করা প্রয়োজন। এদের বেশিরভাগই নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে।’মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর টুইট তিনি আরও বলেন,  ‘বিদ্যমান অভিবাসন খরচ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে এবং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে আমাদের মন্ত্রণালয় শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি একক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাচ্ছে। এছাড়া সরকার প্রবাসী শ্রমিকদের ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনাও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছে। এর পাশপাশি বিদেশি শ্রমিকদের ব্যাপারে নতুন একটি এমওইউ নিয়ে কাজ করার কথাও তিনি তার টুইটারে উল্লেখ করেন।’

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ ও প্রশাসন) আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন মন্ত্রী দেশে এসে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন।

তবে, নতুন করে সমঝোতার বিষয়ে এখনও কিছু জানেনা জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদেরও কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন বায়রার মহাসচিব শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এখনও মন্ত্রণালয়ের মিটিং হয়নি। ওনারা বৃহস্পতিবার এসেছেন, আমাদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ হয়নি। হয়তো রবিবার কথা হতে পারে, তাহলে আমরা পুরো বিষয়টি জানতে পারবো।’

প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশে অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা ১১৭৯টি। ২০১২ সালে দুই দেশ শুধু সরকারি মাধ্যমে (জি টু জি পদ্ধতি) মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে চুক্তি সই করে। ২০১৬ সালে তা পরিমার্জন করে ১০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকে জি টু জি প্লাসের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিতে বেসরকারি পর্যায়ে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লোক নিয়োগ করে মালয়েশিয়া। এতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর মালয়েশিয়া বিদ্যমান পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ বন্ধের ঘোষণা দেয়। ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়া গেছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ১ লাখ ৯ হাজার ৫৬২ জন শ্রমিক পাঠায় বাংলাদেশ।