ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

ইউনূসকে হিলারির ডলার অনুদান

হিলারি ক্লিনটন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ডোনার ড. ইউনূসকে ১৩ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন।

এই অর্থ দেওয়া হয়েছে, ঋণ, অনুদান ও কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে। অন্যদিকে ড. ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে ১ থেকে ৩ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর তহবিল থেকে ইউএসএইডের মাধ্যমে ১৮টি পৃথক খাতে তাকে এই অনুদান দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কন্ট্রাক্টের সাইট ইউএসএস্পেন্ডিংডটগভ এ লেনদেনের তালিকা করেছে। এ সাইটটি হিলারি ক্লিনটন কিভাবে সরকারি কাজের সঙ্গে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড মিশিয়ে ফেলেছেন তা তুলে ধরেছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘ডেইলি কলার নিউজ ফাউন্ডেশনের’ (ডিসিএনএফ) এক তদন্তে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যদিও ২০১১ সালে দুর্নীতির অভিযোগের মুখে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

কনট্রাকটিং ওয়েবসাইটের মতে, ইউনূসের মিত্ররা ইউএসএইডের মাধ্যমে আরও ১১ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এদের সকলের সঙ্গেই ইউনূসের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। ইউনূস সাধু পুরুষ হিসেবে দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচির নেতাকর্মীদের কাছে বিবেচিত হতেন। ইউনূসকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বড় বড় অনুষ্ঠানে সেলিব্রিটি হিসেবে পরিচিত করানো হতো। তিনি তিন দশক ধরে বিল ও হিলারির আনুকূল্য পেয়ে আসছেন। বিল ক্লিনটন ড. ইউনূসকে নোবেল প্রাইজ দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তদবির করেছিলেন। ২০০৬ সালে ইউনূসের নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পেছনে এ তদবির জোরালো ভূমিকা রাখে।

এদিকে এফবিআই

তদন্ত কমিটি হিলারির বিরুদ্ধে তার সরকারি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ফাউন্ডেশনের কাজকে জড়িয়ে ফেলার অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে। এর আগে এফবিআই হিলারির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের বাসভবনে বসে ব্যক্তিগত ই-মেইলের মাধ্যমে সরকারি কাজ করার অভিযোগ তদন্ত করেছে। হিলারির বিরুদ্ধে তার সরকারি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ফাউন্ডেশনের জড়িয়ে ফেলার বিষয়টিতে দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তের দ্বিতীয় একটি দৃষ্টান্ত হয়েছে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাবলিক দুর্নীতিবিষয়ক এ তদন্তের বিষয়টি খুবই কম প্রচারিত হয়েছে। হিলারির নিউইয়র্কের বাসভবনে বসে সরকারি কাজ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ই-মেইল সারভার ব্যবহারের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে।

অপরাধ বিভাগ ব্যুরোর সাবেক সহকারী পরিচালক রবার্ট টি হোস্কো বলেন, ধারণা করা হয় ডেইলি কলার নিউজ ফাউন্ডেশনের কাছে যেহেতু এ তথ্য আছে তাহলে এফবি আই-এর কাছেও আছে। তিনি ডিসিএনএফকে বলেন, অবশ্যই এফবিআই এই ধরনের সম্পর্কের প্রকৃতি জানতে চাইবে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকাণ্ডের কোনো দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা শনাক্ত করতে এএফবি আই তদন্ত করবে বলে তিনি মনে করেন।

এফবিআই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে, বিশেষ কোনো তদন্ত নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। পত্রিকাটি আরও লিখেছে, বাংলাদেশ সরকার ড. ইউনূসের আর্থিকসহ নানা কেলেঙ্কারি নিয়ে যখন তদন্তের উদ্যোগ নিচ্ছেন তখনও আমেরিকার প্রধান কূটনীতিক হিসেবে হিলারি ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে তার পদ ব্যবহারে বিষয়ে কুণ্ঠিত হননি।

হিলারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের নাড়িয়ে তোলেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার যখন ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রস্তুতি নেয়, হিলারি তখন তার পক্ষে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করেন। হিলারি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির উপস্থিতিতে বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি এবং আশা করি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যকরভাবে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারবে।’

হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত সার্ভার থেকে প্রকাশিত ই-মেইল থেকে জানা যায়, বিল ক্লিনটন এবং হিলারি ক্লিনটন ড. ইউনূসের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সকল তদন্তের দিকে গভীর নজর রাখতেন। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বেশিরভাগ জনসভায় ইউনূস একজন হাই-প্রফাইল ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত থাকতেন। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটের ৩৭টি স্থানে তাকে দেখানো হয়েছে।

রক্ষণশীল অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ ‘সিটিজেন ইউনাইটেড’-এর সভাপতি ডেভিড বোসি দীর্ঘদিন ধরেই ক্লিনটনের সমালোচনা করে আসছেন। তিনি ইউনূস এবং ক্লিনটনের মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্রতা খতিয়ে দেখতে এফবিআইকে অনুরোধ জানান।

বোসি ডিসিএনএফকে জানান, মার্কিন পররাষ্ট্রদফতর এবং মার্কিন সরকারি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের দাতা ও সুবিধাভোগীদের পারস্পরিক যোগাযোগ থাকার বিষয়টি এমনই একটি বিষয় যা নিয়ে এএফবিআই তদন্ত করতে পারে। বিল ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট মেয়াদে আরকানসাস রাজ্যের গভর্নর হিসেবে থাকাকালীন ক্লিনটন এবং ইউনূসের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। যখন ইউনূস এবং হিলারি দুজনই ক্ষুদ্র ঋণের ধারণার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। তখন বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ইউনূস ১৯৭৮ সাল থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত হন।

পাঁচ বছর আগে ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যংকের জন্য ভয়াবহ দুঃসময় এসে উপস্থিত হয়। যখন কিছু স্বাধীন কর্তৃপক্ষ গ্রামীণ ব্যাংক ও এর সঙ্গে যুক্ত ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত ৫০টি প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে নিবিড় অনুসন্ধান শুরু করে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই পরিচালিত হচ্ছিল, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যেখানে কর্তৃপক্ষের নজরদারি তেমন জোরালো নয়।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং তার স্বামী বিল ক্লিনটন ইউনূসের ক্রমবর্ধমান এ সমস্যাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। ২০১২ সালের ১১ জুন ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ফরেন পলিসি সেক্রেটারি অভিতাভ দেশাই হিলারিকে বাংলাদেশে ইউনূসের ব্যাপারে হওয়া তদন্তের বিষয়ে ইউনূসের একটি প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানান। হোস্কো বলেন, এ ই-মেইল ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের সংমিশ্রনের একটি সম্ভাব্য নিদর্শন বহন করে, যা খুবই উদ্বেগজনক। ক্লিনটন ইউনূসকে দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৮টি তহবিল দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন। এগুলো হলো ইউনূসের আমেরিকাভিত্তিক ফাউন্ডেশন ‘গ্রামীণ ফাউনন্ডেশন ইউএসএ’ এবং ‘গ্রামীণ আমেরিকা’।

ইউনূসকে সর্বমোট ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া হয়। এ অর্থ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও পররাষ্ট্র দফতরের উন্নয়ন বিষয়ক বিভাগের মাধ্যমে দেওয়া হয়। হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর এ অর্থ দেওয়া শুরু করা হয়। ফেডারেল তহবিলের অন্যান্য ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ইউনূসের সহযোগী সংস্থাও চলে গিয়েছিল। ইউনূসকে দেওয়া অনুদান এবং লোনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে ইউএসআইডির মুখপাত্র রাফায়েল কুক বলেন, লেনদেনবিষয়ক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য তার সংস্থার ‘জনশক্তি’ নেই।

এছাড়া প্রশাসনে ক্লিনটন প্রবেশের পর অন্যান্য ফেডারেল সংস্থাও ইউনূসের জন্য তাদের ধনভাণ্ডা উম্মুক্ত করে দেয়। মার্কিন কোষাগার বিভাগ কমিউনিটির উন্নয়নে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ শক্তিশালী করতে বরাদ্দ করা তহবিলের আওতায় গ্রামীণ আমেরিকাকে সরাসরি ৬ লাখ ডলার অর্থ তহবিল প্রদান করে। নিউইয়র্কে এ তহবিলকে ঘিরে গৃহীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কোষাগার বিভাগের এক মুখপাত্র।

‘ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসন’ ২০১১ সালের জুলাইয়ে গ্রামীণ আমেরিকাকে ধারাবাহিকভাবে অর্থ দেওয়া শুরু করে। সর্বমোট ৯ লাখ ৩৪ হাজার ডলার অর্থ দেওয়া হয়। এসব অর্থ ফাউন্ডেশনের নিউইয়র্ক অফিসসমূহ পরিচালনা করতে বেতন ও খরচ হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়, যেখান (নিউইয়র্ক) থেকে ক্লিন্টন একবার মার্কিন সিনেটর হয়েছিলেন।

এছাড়াও দরিদ্র বিমোচনমূলক কর্মকাণ্ডে গভীর শ্রদ্ধা দেখানোয় ইউনূস বাংলাদেশের সামরিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে আর্মি জেনারেলদের একটি গ্রুপ বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এ সময় ইউনূস সামরিক নেতৃত্বাধীন একটি নতুন সরকার পরিচালনা করতে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার চিন্তা করেন। যার ফলে এ অভ্যুত্থানকে বৈধতা দেওয়া হয়।

বিবিসির ২০০৭ সালের ৭ এপ্রিলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনী নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মাদ ইউনূসকে একজন নতুন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পৃষ্ঠপোষক করবে।’ বিবিসি বাংলার সম্পাদক সাবির মুস্তফা আরও উল্লেখ করেন, ‘সেনাবাহিনীর একটি অংশের কাছে ড. ইউনূসকে এ পর্যন্ত একজন গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হয়। যদিও ইউনূস নতুন দল গঠন করেননি। ডেইলি কলার নিউজ ফাউন্ডেশন-এর প্রতিবেদনের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ক্লিনটনের প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইন এবং ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের কোনো মুখপাত্রই মন্তব্য করেননি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ধর্মের শান্তির বাণী নিজের মধ্যে স্থাপন করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ইউনূসকে হিলারির ডলার অনুদান

আপডেট টাইম : ০৪:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০১৬

হিলারি ক্লিনটন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ডোনার ড. ইউনূসকে ১৩ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন।

এই অর্থ দেওয়া হয়েছে, ঋণ, অনুদান ও কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে। অন্যদিকে ড. ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে ১ থেকে ৩ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর তহবিল থেকে ইউএসএইডের মাধ্যমে ১৮টি পৃথক খাতে তাকে এই অনুদান দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কন্ট্রাক্টের সাইট ইউএসএস্পেন্ডিংডটগভ এ লেনদেনের তালিকা করেছে। এ সাইটটি হিলারি ক্লিনটন কিভাবে সরকারি কাজের সঙ্গে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড মিশিয়ে ফেলেছেন তা তুলে ধরেছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘ডেইলি কলার নিউজ ফাউন্ডেশনের’ (ডিসিএনএফ) এক তদন্তে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যদিও ২০১১ সালে দুর্নীতির অভিযোগের মুখে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

কনট্রাকটিং ওয়েবসাইটের মতে, ইউনূসের মিত্ররা ইউএসএইডের মাধ্যমে আরও ১১ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এদের সকলের সঙ্গেই ইউনূসের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। ইউনূস সাধু পুরুষ হিসেবে দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচির নেতাকর্মীদের কাছে বিবেচিত হতেন। ইউনূসকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বড় বড় অনুষ্ঠানে সেলিব্রিটি হিসেবে পরিচিত করানো হতো। তিনি তিন দশক ধরে বিল ও হিলারির আনুকূল্য পেয়ে আসছেন। বিল ক্লিনটন ড. ইউনূসকে নোবেল প্রাইজ দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তদবির করেছিলেন। ২০০৬ সালে ইউনূসের নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পেছনে এ তদবির জোরালো ভূমিকা রাখে।

এদিকে এফবিআই

তদন্ত কমিটি হিলারির বিরুদ্ধে তার সরকারি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ফাউন্ডেশনের কাজকে জড়িয়ে ফেলার অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে। এর আগে এফবিআই হিলারির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের বাসভবনে বসে ব্যক্তিগত ই-মেইলের মাধ্যমে সরকারি কাজ করার অভিযোগ তদন্ত করেছে। হিলারির বিরুদ্ধে তার সরকারি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ফাউন্ডেশনের জড়িয়ে ফেলার বিষয়টিতে দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তের দ্বিতীয় একটি দৃষ্টান্ত হয়েছে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাবলিক দুর্নীতিবিষয়ক এ তদন্তের বিষয়টি খুবই কম প্রচারিত হয়েছে। হিলারির নিউইয়র্কের বাসভবনে বসে সরকারি কাজ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ই-মেইল সারভার ব্যবহারের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে।

অপরাধ বিভাগ ব্যুরোর সাবেক সহকারী পরিচালক রবার্ট টি হোস্কো বলেন, ধারণা করা হয় ডেইলি কলার নিউজ ফাউন্ডেশনের কাছে যেহেতু এ তথ্য আছে তাহলে এফবি আই-এর কাছেও আছে। তিনি ডিসিএনএফকে বলেন, অবশ্যই এফবিআই এই ধরনের সম্পর্কের প্রকৃতি জানতে চাইবে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকাণ্ডের কোনো দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা শনাক্ত করতে এএফবি আই তদন্ত করবে বলে তিনি মনে করেন।

এফবিআই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে, বিশেষ কোনো তদন্ত নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। পত্রিকাটি আরও লিখেছে, বাংলাদেশ সরকার ড. ইউনূসের আর্থিকসহ নানা কেলেঙ্কারি নিয়ে যখন তদন্তের উদ্যোগ নিচ্ছেন তখনও আমেরিকার প্রধান কূটনীতিক হিসেবে হিলারি ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে তার পদ ব্যবহারে বিষয়ে কুণ্ঠিত হননি।

হিলারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের নাড়িয়ে তোলেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার যখন ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রস্তুতি নেয়, হিলারি তখন তার পক্ষে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করেন। হিলারি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির উপস্থিতিতে বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি এবং আশা করি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যকরভাবে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারবে।’

হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত সার্ভার থেকে প্রকাশিত ই-মেইল থেকে জানা যায়, বিল ক্লিনটন এবং হিলারি ক্লিনটন ড. ইউনূসের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সকল তদন্তের দিকে গভীর নজর রাখতেন। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বেশিরভাগ জনসভায় ইউনূস একজন হাই-প্রফাইল ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত থাকতেন। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটের ৩৭টি স্থানে তাকে দেখানো হয়েছে।

রক্ষণশীল অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ ‘সিটিজেন ইউনাইটেড’-এর সভাপতি ডেভিড বোসি দীর্ঘদিন ধরেই ক্লিনটনের সমালোচনা করে আসছেন। তিনি ইউনূস এবং ক্লিনটনের মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্রতা খতিয়ে দেখতে এফবিআইকে অনুরোধ জানান।

বোসি ডিসিএনএফকে জানান, মার্কিন পররাষ্ট্রদফতর এবং মার্কিন সরকারি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের দাতা ও সুবিধাভোগীদের পারস্পরিক যোগাযোগ থাকার বিষয়টি এমনই একটি বিষয় যা নিয়ে এএফবিআই তদন্ত করতে পারে। বিল ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট মেয়াদে আরকানসাস রাজ্যের গভর্নর হিসেবে থাকাকালীন ক্লিনটন এবং ইউনূসের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। যখন ইউনূস এবং হিলারি দুজনই ক্ষুদ্র ঋণের ধারণার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। তখন বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ইউনূস ১৯৭৮ সাল থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত হন।

পাঁচ বছর আগে ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যংকের জন্য ভয়াবহ দুঃসময় এসে উপস্থিত হয়। যখন কিছু স্বাধীন কর্তৃপক্ষ গ্রামীণ ব্যাংক ও এর সঙ্গে যুক্ত ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত ৫০টি প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে নিবিড় অনুসন্ধান শুরু করে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই পরিচালিত হচ্ছিল, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যেখানে কর্তৃপক্ষের নজরদারি তেমন জোরালো নয়।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং তার স্বামী বিল ক্লিনটন ইউনূসের ক্রমবর্ধমান এ সমস্যাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। ২০১২ সালের ১১ জুন ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ফরেন পলিসি সেক্রেটারি অভিতাভ দেশাই হিলারিকে বাংলাদেশে ইউনূসের ব্যাপারে হওয়া তদন্তের বিষয়ে ইউনূসের একটি প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানান। হোস্কো বলেন, এ ই-মেইল ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের সংমিশ্রনের একটি সম্ভাব্য নিদর্শন বহন করে, যা খুবই উদ্বেগজনক। ক্লিনটন ইউনূসকে দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৮টি তহবিল দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন। এগুলো হলো ইউনূসের আমেরিকাভিত্তিক ফাউন্ডেশন ‘গ্রামীণ ফাউনন্ডেশন ইউএসএ’ এবং ‘গ্রামীণ আমেরিকা’।

ইউনূসকে সর্বমোট ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া হয়। এ অর্থ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও পররাষ্ট্র দফতরের উন্নয়ন বিষয়ক বিভাগের মাধ্যমে দেওয়া হয়। হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর এ অর্থ দেওয়া শুরু করা হয়। ফেডারেল তহবিলের অন্যান্য ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ইউনূসের সহযোগী সংস্থাও চলে গিয়েছিল। ইউনূসকে দেওয়া অনুদান এবং লোনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে ইউএসআইডির মুখপাত্র রাফায়েল কুক বলেন, লেনদেনবিষয়ক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য তার সংস্থার ‘জনশক্তি’ নেই।

এছাড়া প্রশাসনে ক্লিনটন প্রবেশের পর অন্যান্য ফেডারেল সংস্থাও ইউনূসের জন্য তাদের ধনভাণ্ডা উম্মুক্ত করে দেয়। মার্কিন কোষাগার বিভাগ কমিউনিটির উন্নয়নে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ শক্তিশালী করতে বরাদ্দ করা তহবিলের আওতায় গ্রামীণ আমেরিকাকে সরাসরি ৬ লাখ ডলার অর্থ তহবিল প্রদান করে। নিউইয়র্কে এ তহবিলকে ঘিরে গৃহীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কোষাগার বিভাগের এক মুখপাত্র।

‘ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসন’ ২০১১ সালের জুলাইয়ে গ্রামীণ আমেরিকাকে ধারাবাহিকভাবে অর্থ দেওয়া শুরু করে। সর্বমোট ৯ লাখ ৩৪ হাজার ডলার অর্থ দেওয়া হয়। এসব অর্থ ফাউন্ডেশনের নিউইয়র্ক অফিসসমূহ পরিচালনা করতে বেতন ও খরচ হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়, যেখান (নিউইয়র্ক) থেকে ক্লিন্টন একবার মার্কিন সিনেটর হয়েছিলেন।

এছাড়াও দরিদ্র বিমোচনমূলক কর্মকাণ্ডে গভীর শ্রদ্ধা দেখানোয় ইউনূস বাংলাদেশের সামরিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে আর্মি জেনারেলদের একটি গ্রুপ বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এ সময় ইউনূস সামরিক নেতৃত্বাধীন একটি নতুন সরকার পরিচালনা করতে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার চিন্তা করেন। যার ফলে এ অভ্যুত্থানকে বৈধতা দেওয়া হয়।

বিবিসির ২০০৭ সালের ৭ এপ্রিলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনী নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মাদ ইউনূসকে একজন নতুন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পৃষ্ঠপোষক করবে।’ বিবিসি বাংলার সম্পাদক সাবির মুস্তফা আরও উল্লেখ করেন, ‘সেনাবাহিনীর একটি অংশের কাছে ড. ইউনূসকে এ পর্যন্ত একজন গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হয়। যদিও ইউনূস নতুন দল গঠন করেননি। ডেইলি কলার নিউজ ফাউন্ডেশন-এর প্রতিবেদনের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ক্লিনটনের প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইন এবং ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের কোনো মুখপাত্রই মন্তব্য করেননি।