ঢাকা , শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শ্রীলংকায় প্রথম ভোট হচ্ছে আজ

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ সকাল ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। শেষ হবে বিকাল ৪টায়। এর পরপরই শুরু হবে ভোট গণনা। আনুষ্ঠানিক ফলাফল পাওয়া যেতে পারে রোববার সকালে।

২০১৯ সালে কর কমানোর নীতি প্রবর্তন করেন শ্রীলংকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। সেইসঙ্গে করোনা মহামারির প্রভাবে কমে যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ও পর্যটন খাতের আয়। এতে ২০২২ সালে দেশটির অর্থনীতিতে দেখা দেয় ৭০ বছরের ভয়াবহ মন্দা। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪ শতাংশে।

২০২২ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিলুপ্ত হয় গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকার। এ অবস্থায় কলম্বোর শাসনভার গ্রহণ করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। নাজুক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কঠোর শর্ত মানতে রাজি হন তিনি। ২৯০ কোটি ডলারের ঋণের জন্য দ্বিগুণ করবৃদ্ধি, বিদ্যুতে ভর্তুকি বাতিলসহ নানা রকম কৃচ্ছতা কর্মসূচি গ্রহণ করেন বিক্রমাসিংহে।

এমন পরিস্থিতিতে, এবারের নির্বাচনকে পরবর্তী নেতা বাছাইয়ের পরিবর্তে আইএমএফের কর্মসূচির ওপর গণভোট হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। সেইসঙ্গে এবারের নির্বাচন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের জন্যও অগ্নিপরীক্ষা, বলে মত তাদের

ভারতভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহযোগী ফেলো সৌম্য ভৌমিক বিবিসিকে বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার আকাশচুম্বী ব্যয় দারিদ্র্য ভোটারদেরকে মূল্য স্থিতিশীল করতে এবং জীবিকা উন্নত করার সমাধানের জন্য মরিয়া করে তুলেছে।

এদিকে, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ভারতের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরে শ্রীলংকায় চীনের প্রভাব বৃদ্ধি দিল্লির দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। মালদ্বীপেও চীনপন্থি সরকার থাকায় আঞ্চলিক কূটনীতিতে বেকায়দায় ভারত।

ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে গত বুধবার মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়। এ নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৩৯ জন। অবশ্য নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার পর একজন প্রার্থী মারা যান। ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি ভোটার পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছাড়ার পর পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ভোটের আগে শতাধিক সমাবেশ করেন বিক্রমাসিংহে।

শক্ত অবস্থানে আছেন বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়েগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসাও। তিনি সাবেক এক প্রেসিডেন্টের ছেলে, যিনি ১৯৯৩ সালে গৃহযুদ্ধের সময় আততায়ীর হাতে নিহত হন। সাজিথ প্রেমাদাসা এই নির্বাচনে বেশ ভালো করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা আরেক প্রার্থী হলেন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা অনুড়া কুমার দিসানায়েক। একসময় প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যাওয়া মার্ক্সবাদী দলের নেতা তিনি। তবে শ্রীলংকার সংকট অনুড়া কুমার দিসানায়েকের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

রাজাপক্ষে পরিবার থেকে প্রার্থী হয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী নমল রাজাপক্ষে। এই পরিবার থেকে অতীতে দুজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একজন হলেন নমলের বাবা মাহিন্দা রাজাপক্ষে আর অপরজন চাচা গোতাবায়া রাজাপক্ষে। নমল লড়ছেন শ্রীলংকান পদুজন পেরামুনা (এসএলপিপি) দল থেকে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা তার আরেক চাচা বাসিল রাজাপক্ষে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নতুন আইন অনুযায়ী, একজন ভোটার তিন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। কোনো একজন প্রার্থী কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বা এর চেয়ে বেশি ভোট পেলে, তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। আর কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা (রান-অফ) ভোট হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শ্রীলংকায় প্রথম ভোট হচ্ছে আজ

আপডেট টাইম : এক ঘন্টা আগে

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ সকাল ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। শেষ হবে বিকাল ৪টায়। এর পরপরই শুরু হবে ভোট গণনা। আনুষ্ঠানিক ফলাফল পাওয়া যেতে পারে রোববার সকালে।

২০১৯ সালে কর কমানোর নীতি প্রবর্তন করেন শ্রীলংকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। সেইসঙ্গে করোনা মহামারির প্রভাবে কমে যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ও পর্যটন খাতের আয়। এতে ২০২২ সালে দেশটির অর্থনীতিতে দেখা দেয় ৭০ বছরের ভয়াবহ মন্দা। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪ শতাংশে।

২০২২ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিলুপ্ত হয় গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকার। এ অবস্থায় কলম্বোর শাসনভার গ্রহণ করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। নাজুক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কঠোর শর্ত মানতে রাজি হন তিনি। ২৯০ কোটি ডলারের ঋণের জন্য দ্বিগুণ করবৃদ্ধি, বিদ্যুতে ভর্তুকি বাতিলসহ নানা রকম কৃচ্ছতা কর্মসূচি গ্রহণ করেন বিক্রমাসিংহে।

এমন পরিস্থিতিতে, এবারের নির্বাচনকে পরবর্তী নেতা বাছাইয়ের পরিবর্তে আইএমএফের কর্মসূচির ওপর গণভোট হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। সেইসঙ্গে এবারের নির্বাচন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের জন্যও অগ্নিপরীক্ষা, বলে মত তাদের

ভারতভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহযোগী ফেলো সৌম্য ভৌমিক বিবিসিকে বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার আকাশচুম্বী ব্যয় দারিদ্র্য ভোটারদেরকে মূল্য স্থিতিশীল করতে এবং জীবিকা উন্নত করার সমাধানের জন্য মরিয়া করে তুলেছে।

এদিকে, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ভারতের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরে শ্রীলংকায় চীনের প্রভাব বৃদ্ধি দিল্লির দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। মালদ্বীপেও চীনপন্থি সরকার থাকায় আঞ্চলিক কূটনীতিতে বেকায়দায় ভারত।

ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে গত বুধবার মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়। এ নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৩৯ জন। অবশ্য নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার পর একজন প্রার্থী মারা যান। ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি ভোটার পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছাড়ার পর পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ভোটের আগে শতাধিক সমাবেশ করেন বিক্রমাসিংহে।

শক্ত অবস্থানে আছেন বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়েগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসাও। তিনি সাবেক এক প্রেসিডেন্টের ছেলে, যিনি ১৯৯৩ সালে গৃহযুদ্ধের সময় আততায়ীর হাতে নিহত হন। সাজিথ প্রেমাদাসা এই নির্বাচনে বেশ ভালো করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা আরেক প্রার্থী হলেন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা অনুড়া কুমার দিসানায়েক। একসময় প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যাওয়া মার্ক্সবাদী দলের নেতা তিনি। তবে শ্রীলংকার সংকট অনুড়া কুমার দিসানায়েকের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

রাজাপক্ষে পরিবার থেকে প্রার্থী হয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী নমল রাজাপক্ষে। এই পরিবার থেকে অতীতে দুজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একজন হলেন নমলের বাবা মাহিন্দা রাজাপক্ষে আর অপরজন চাচা গোতাবায়া রাজাপক্ষে। নমল লড়ছেন শ্রীলংকান পদুজন পেরামুনা (এসএলপিপি) দল থেকে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা তার আরেক চাচা বাসিল রাজাপক্ষে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নতুন আইন অনুযায়ী, একজন ভোটার তিন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। কোনো একজন প্রার্থী কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বা এর চেয়ে বেশি ভোট পেলে, তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। আর কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা (রান-অফ) ভোট হবে।