মাদক পাচার সংক্রান্ত একটি মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশ ভিয়েতনামের একটি আদালত। বাকি ৮ জনের প্রত্যেককে ২০ বছর কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়েছে।
মাত্র চারদিন বিচারকার্যের পর শুক্রবার ভিয়েতনামের বৃহত্তম শহর হো চি মিন সিটির (সাইগন নামেও পরিচিত) একটি আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সবাই একটি গ্যাংয়ের সদস্য। সেই গ্যাংয়ের শীর্ষ নেতা ভু হোয়াং অ্যান ওরফে ওয়ান হা (৬৭) নামের এক নারী। তিনিও রয়েছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের তালিকায়।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ— ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিবেশী কম্বোডিয়া থেকে চোরাপথে মোট ৬২৬ কেজি মাদক ভিয়েতনামে এনে বিক্রি করেছেন তারা। হেরোইন, কেটামিন এবং মেথাম্ফেটামিন— এ তিন ধরনের মাদক এনেছিলেন তারা এবং ভিয়েতনামে সেসব বিক্রি করে উপার্জন করেছেন মোট ৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।
আফিমের চাষ এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ মাদক উৎপাদনকারী অঞ্চল ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ বা ‘সোনালী ত্রিভূজ’। কম্বোডিয়া, লাউস মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের কিছু অংশ মিলে গঠিত এই বিশেষ অঞ্চল। বিশ্বে হেরোইন এবং অন্যান্য মাদকের সবচেয়ে বড় যোগান আসে এই অঞ্চলটি থেকে।
ভৌগলিকভাবে ‘সোনালী ত্রিভুজ’ এলাকায় অবস্থান হওয়ার কারণে ভিয়েতনামে মাদক একটি বড় সমস্যা। মাদকের অবাধ প্রবেশ বাধাগ্রস্ত করতে কঠোর আইন করেছে দেশটিতে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকার। সেই আইন অনুসারে, মাদকের পরিবহন ও ব্যবসা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং কারো কাছে যদি ৬০০ গ্রাম হেরোইন কিংবা আড়াই কেজির বেশি মেথাম্ফেটিন পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
মামলার তদন্তে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই মাদকের গোপন ব্যবসা চালিয়ে আসছিল ওয়ান হা’র গ্যাং। এ চক্রের সদস্যদের প্রধান কাজ ছিল কম্বোডিয়া কিংবা লাউসের সীমান্ত দিয়ে মাদকের বড় চালান ভিয়েতনামে নিয়ে আসা। গ্যাংয়ের শীর্ষ নির্বাহী ৬৭ বছর বয়সী নারী ওয়ান হা পুলিশের একজন তালিকাভুক্ত অপরাধী। এর আগেও একাধিকবার মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ উঠেছে ওয়ান হা’র বিরুদ্ধে; কয়েকবার সাজাও খেটেছেন। ১৯৯৮ সালে মাদক পাচার সংক্রান্ত একটি মামলায় তাকে ২০ বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছিলেন আদালত।
সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় ২০০৯ সালে শাস্তি মওকুফ হয় ওয়ান হা’র। কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ফের মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।