ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুও হয়, তারপরও যে কারণে প্লাস্টিক খায় কচ্ছপ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সারাবিশ্ব প্লাস্টিক বর্জ্যে ছেয়ে গেছে। বাজারের ব্যাগ থেকে চকোলেটের প্যাকেট সব জায়গায় যেন এর আধিপত্য। এরপর এর স্থান ড্রেন থেকে শুরু করে নদী খাল। এমনকি সমুদ্রও রেহায় পায়নি এই দূষণ থেকে।

প্রতিবছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক সমুদ্রে জমা হচ্ছে। এতে পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র্য পড়ছে হুমকির মুখে। সামুদ্রিক পরিবেশ আর প্রাণীরা প্লাস্টিকের জন্য নানাভাবে সমস্যায় পড়ছে। একটি প্লাস্টিক ব্যাগ নষ্ট হতে সময় লাগে ৫০০ বছর।

মানুষের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ

নিয়মিত প্লাস্টিক পদার্থের ব্যবহার প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের বেশিরভাগই পুনঃচক্রায়ন হয় না। এগুলো পরিবেশে থেকে বর্জ্যের আকার নেয়।

মানুষের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ। আর প্লাস্টিক অপচ্য পদার্থ। ১৯৪০ এর দশক থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহার চলে আসছে। তবে সবচেয়ে বেশি এটি সমুদ্রের কচ্ছপের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও তিমিসহ সামুদ্রিক অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এটি বড় হুমকি।

অনেক সময় দেখা যায় সামুদ্রিক কচ্ছপ বা অন্যান্য প্রাণী প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে। জানেন কি? কেন কচ্ছপ প্লাস্টিক খায়? এতে তাদের মৃত্যুও হয়। তারপরও কেন খাচ্ছে প্লাস্টিক?

বিজ্ঞানীরা সামুদ্রিক কচ্ছপের পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য পেয়েছেন ৷ এ নিয়ে অনেক দিন থেকেই চলছে তাদের গবেষণা। সেই গবেষণা থেকে উঠে এসেছে কচ্ছপের প্লাস্টিক খাওয়ার অভিনব এক কারণ। যা আপনাকেও বেশ অবাক করে দেবে। তবে জেনে নিন এর কারণ-

পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের কচ্ছপের প্রজাতি প্লাস্টিকের ঝুঁকিতে রয়েছে

পৃথিবীতে প্রায় ২২০ মিলিয়নের বেশি সময় ধরে কচ্ছপের বাস। কচ্ছপ সাধারণত মাংসাশী প্রাণী। এছাড়াও এরা জলজ উদ্ভিদ, কাঁকড়া, জেলিফিস, ছোট মাছ, জলজ প্রাণী খেয়ে থাকে। প্লাস্টিক ওজনে হালকা হওয়ায় পানিতে ভেসে থাকে। আর তখন একে দেখতে অনেকটা জেলিফিসের মতোই মনে হয়। কচ্ছপ একে জেলিফিস ভেবেই খেয়ে ফেলে। জেলিফিসের আকার ও আকৃতি প্লাস্টিক ব্যাগের মত হওয়ায় কচ্ছপ ভুল করে প্লাস্টিক ব্যাগ খায়। এতে তাদের খাদ্য নালিকা বন্ধ হয়ে যায় এবং খাদ্য গ্রহণ করতে অক্ষম হওয়ায় ধীরে ধীরে মারা যায়।

একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রায় ৫২ শতাংশ কচ্ছপ প্লাস্টিকের বর্জ্য খেয়ে থাকে। এর কারণ হিসেবে গবেষণায় উঠে এসেছে এর গন্ধ আর আকারের ব্যাপারটিও। কচ্ছপ ভাসমান প্লাস্টিককে জেলিফিশ, শেত্তলা বা অন্যান্য প্রজাতির মতো দেখতে পারে। এর ফলে খাবার ভেবেই খেয়ে ফেলে।

কচ্ছপ ভাসমান প্লাস্টিককে জেলিফিশ, শেত্তলা বা অন্যান্য প্রজাতির মতো দেখতে পায়

এছাড়াও নতুন এক গবেষণা বলছে, প্লাস্টিকের গন্ধকে খাবারের গন্ধ ভেবেও তারা বিভ্রান্ত হচ্ছে। গবেষকদের মতে, প্লাস্টিকের দ্বারা নির্গত রাসায়নিক যা সমুদ্রের মধ্যে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনও তৈরি করে। যা সামুদ্রিক প্রাণীদের গন্ধের মতো হয়ে থাকে।

টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে মাংসপেশী লগারহেড এবং মূলত উদ্ভিদ খাওয়া সবুজ কচ্ছপগুলোই প্লাস্টিক বেশি খেয়ে থাকে। এরমধ্যে লগারহেড ১৭ শতাংশ এবং সবুজ কচ্ছপ ৬২ শতাংশ প্লাস্টিক খায়।

সম্প্রতি প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, একটি ট্যাঙ্কে ১৫টি লগারহেড কচ্ছপকে রাখা হয়েছিল। তাদেরকে খাবেরর জন্য দেয়া হয় চিংড়ি জাতীয় খাবার এবং সমুদ্রের পানিতে ভেজানো প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন শেওলা। লগারহেডগুলো এসময় খাওয়ার জন্য প্লাস্টিকের দিকে অগ্রসর হয়।

প্লাস্টিক খাওয়ার ফলে কচ্ছপের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়

পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের কচ্ছপের প্রজাতি প্লাস্টিকের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্লাস্টিক খাওয়ার পর তা সহজে হজম হয় না। ফলে অন্ত্রের কাজকে বাধা দেয়। যখনই এমনটা ঘটে, তখন ওইসব প্রাণী ক্ষুধায় ভোগে কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য তাদের পরিপাকতন্ত্রকে বন্ধ করে দেয় ৷ অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোতে মারাত্মক ক্ষতি করে। এছাড়াও প্লাস্টিকের ফলে কচ্ছপের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়াও এতে কচ্ছপের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ডেকে আনছে মহাবিপদ। এতে করে বিলুপ্ত হচ্ছে কচ্ছপের নানা প্রজাতি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

মৃত্যুও হয়, তারপরও যে কারণে প্লাস্টিক খায় কচ্ছপ

আপডেট টাইম : ০১:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ মার্চ ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সারাবিশ্ব প্লাস্টিক বর্জ্যে ছেয়ে গেছে। বাজারের ব্যাগ থেকে চকোলেটের প্যাকেট সব জায়গায় যেন এর আধিপত্য। এরপর এর স্থান ড্রেন থেকে শুরু করে নদী খাল। এমনকি সমুদ্রও রেহায় পায়নি এই দূষণ থেকে।

প্রতিবছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক সমুদ্রে জমা হচ্ছে। এতে পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র্য পড়ছে হুমকির মুখে। সামুদ্রিক পরিবেশ আর প্রাণীরা প্লাস্টিকের জন্য নানাভাবে সমস্যায় পড়ছে। একটি প্লাস্টিক ব্যাগ নষ্ট হতে সময় লাগে ৫০০ বছর।

মানুষের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ

নিয়মিত প্লাস্টিক পদার্থের ব্যবহার প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের বেশিরভাগই পুনঃচক্রায়ন হয় না। এগুলো পরিবেশে থেকে বর্জ্যের আকার নেয়।

মানুষের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ। আর প্লাস্টিক অপচ্য পদার্থ। ১৯৪০ এর দশক থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহার চলে আসছে। তবে সবচেয়ে বেশি এটি সমুদ্রের কচ্ছপের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও তিমিসহ সামুদ্রিক অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এটি বড় হুমকি।

অনেক সময় দেখা যায় সামুদ্রিক কচ্ছপ বা অন্যান্য প্রাণী প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে। জানেন কি? কেন কচ্ছপ প্লাস্টিক খায়? এতে তাদের মৃত্যুও হয়। তারপরও কেন খাচ্ছে প্লাস্টিক?

বিজ্ঞানীরা সামুদ্রিক কচ্ছপের পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য পেয়েছেন ৷ এ নিয়ে অনেক দিন থেকেই চলছে তাদের গবেষণা। সেই গবেষণা থেকে উঠে এসেছে কচ্ছপের প্লাস্টিক খাওয়ার অভিনব এক কারণ। যা আপনাকেও বেশ অবাক করে দেবে। তবে জেনে নিন এর কারণ-

পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের কচ্ছপের প্রজাতি প্লাস্টিকের ঝুঁকিতে রয়েছে

পৃথিবীতে প্রায় ২২০ মিলিয়নের বেশি সময় ধরে কচ্ছপের বাস। কচ্ছপ সাধারণত মাংসাশী প্রাণী। এছাড়াও এরা জলজ উদ্ভিদ, কাঁকড়া, জেলিফিস, ছোট মাছ, জলজ প্রাণী খেয়ে থাকে। প্লাস্টিক ওজনে হালকা হওয়ায় পানিতে ভেসে থাকে। আর তখন একে দেখতে অনেকটা জেলিফিসের মতোই মনে হয়। কচ্ছপ একে জেলিফিস ভেবেই খেয়ে ফেলে। জেলিফিসের আকার ও আকৃতি প্লাস্টিক ব্যাগের মত হওয়ায় কচ্ছপ ভুল করে প্লাস্টিক ব্যাগ খায়। এতে তাদের খাদ্য নালিকা বন্ধ হয়ে যায় এবং খাদ্য গ্রহণ করতে অক্ষম হওয়ায় ধীরে ধীরে মারা যায়।

একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রায় ৫২ শতাংশ কচ্ছপ প্লাস্টিকের বর্জ্য খেয়ে থাকে। এর কারণ হিসেবে গবেষণায় উঠে এসেছে এর গন্ধ আর আকারের ব্যাপারটিও। কচ্ছপ ভাসমান প্লাস্টিককে জেলিফিশ, শেত্তলা বা অন্যান্য প্রজাতির মতো দেখতে পারে। এর ফলে খাবার ভেবেই খেয়ে ফেলে।

কচ্ছপ ভাসমান প্লাস্টিককে জেলিফিশ, শেত্তলা বা অন্যান্য প্রজাতির মতো দেখতে পায়

এছাড়াও নতুন এক গবেষণা বলছে, প্লাস্টিকের গন্ধকে খাবারের গন্ধ ভেবেও তারা বিভ্রান্ত হচ্ছে। গবেষকদের মতে, প্লাস্টিকের দ্বারা নির্গত রাসায়নিক যা সমুদ্রের মধ্যে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনও তৈরি করে। যা সামুদ্রিক প্রাণীদের গন্ধের মতো হয়ে থাকে।

টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে মাংসপেশী লগারহেড এবং মূলত উদ্ভিদ খাওয়া সবুজ কচ্ছপগুলোই প্লাস্টিক বেশি খেয়ে থাকে। এরমধ্যে লগারহেড ১৭ শতাংশ এবং সবুজ কচ্ছপ ৬২ শতাংশ প্লাস্টিক খায়।

সম্প্রতি প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, একটি ট্যাঙ্কে ১৫টি লগারহেড কচ্ছপকে রাখা হয়েছিল। তাদেরকে খাবেরর জন্য দেয়া হয় চিংড়ি জাতীয় খাবার এবং সমুদ্রের পানিতে ভেজানো প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন শেওলা। লগারহেডগুলো এসময় খাওয়ার জন্য প্লাস্টিকের দিকে অগ্রসর হয়।

প্লাস্টিক খাওয়ার ফলে কচ্ছপের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়

পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের কচ্ছপের প্রজাতি প্লাস্টিকের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্লাস্টিক খাওয়ার পর তা সহজে হজম হয় না। ফলে অন্ত্রের কাজকে বাধা দেয়। যখনই এমনটা ঘটে, তখন ওইসব প্রাণী ক্ষুধায় ভোগে কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য তাদের পরিপাকতন্ত্রকে বন্ধ করে দেয় ৷ অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোতে মারাত্মক ক্ষতি করে। এছাড়াও প্লাস্টিকের ফলে কচ্ছপের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়াও এতে কচ্ছপের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ডেকে আনছে মহাবিপদ। এতে করে বিলুপ্ত হচ্ছে কচ্ছপের নানা প্রজাতি।