ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লেবু ও মাল্টা চাষে স্বাবলম্বী মোসলেম

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  মোসলেম উদ্দিন স্বপ্ন পূরণ করেন লেবুর চাষ করে। ৭-৮ বছর বয়সে অন্যের বাড়ির রাখাল ছিলেন তিনি। বাবা হতদরিদ্র হওয়ায় পড়াশোনা তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবারই জুটতো না।

৫-৬ বছর অন্যের বাড়িতে কাজ শেষে ফেরি করে বাদাম, বড়ই আচার ও ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। এ পেশায় জীবন চলে ১০-১২ বছর। জীবনের ঘানিটানা মোসলেম উদ্দিন নতুন জীবন শুরু করেন লেবু চাষ দিয়ে। চাষি মোসলেম উদ্দিন প্রায় ৫ বছর ধরে লেবু চাষ করে ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছেন।

তিনি টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলার গজারিয়া উত্তরপাড়া এলাকায় জমি লিজ নিয়ে সাড়ে ৬ একর জমিতে লেবুর চাষ করছেন। তিনি প্রতিবছর ১৪-১৫ লাখ টাকা আয় করছেন শুধু লেবু বিক্রি করেই। এছাড়াও তিনি সিডলেস জাতীয় গুটি কলম লেবুর চারা বিক্রি করে বছরে ৫-৬ লাখ টাকা আয় করছেন।

মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষিত-অশিক্ষিত বলে কথা নয়। বেকার ঘরে বসে না থেকে ফল-ফুল ও সবজির বাগান করে বিপুল পরিমাণ আয় করা যায়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। এ মাটিতে যেকোন ধরনের ফসলাদি ফলানো সম্ভব, কিন্তু এতে থাকতে হবে কঠোর প্রচেষ্টা। যেকোন বয়সের নারী-পুরুষও এগিয়ে আসতে পারেন এ পেশায়।’

লেবুর পর মাল্টা চাষেও নীরব বিপ্লব ঘটেছে তরুণ উদ্যোক্তা মোসলেমের। মোসলেম উদ্দিন সাড়ে ৪ একর জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে বিদেশি ফল মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গত দেড় বছর আগে লিজ নেয়া সাড়ে ৪ একর জমিতে মাল্টা গাছ লাগান। এক বছরের মধ্যেই গাছে ফুল ও ফল দেখা যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফায়জুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘মোসলেম উদ্দিন একজন মডেল চাষি। লেবু চাষ করে সে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মাল্টা চাষেও তার সফলতা দেখা যাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম বছর প্রতি গাছ থেকে ১০০-২০০টি, দ্বিতীয় বছর ২৫০-৩০০ ও তৃতীয় বছর থেকে ৩৫০-৪০০টি ফল সংগ্রহ করা যাবে। কৃষকরা এ ফল চাষে আগ্রহী হবেন বলে আশা করছি। এসব চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করব।’

সাধারণত মে থেকে জুন মাস মাল্টা গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে সারা বছর রোপণ করা যায়।

মোসলেম উদ্দিনের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছোট মেয়ে নদী ক্লাস টু-তে পড়ছে। মেয়ের নামেই বাগানের নাম ‘নদী লেমন গার্ডেন’। সব মিলিয়ে বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সুখেই আছি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

লেবু ও মাল্টা চাষে স্বাবলম্বী মোসলেম

আপডেট টাইম : ০১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  মোসলেম উদ্দিন স্বপ্ন পূরণ করেন লেবুর চাষ করে। ৭-৮ বছর বয়সে অন্যের বাড়ির রাখাল ছিলেন তিনি। বাবা হতদরিদ্র হওয়ায় পড়াশোনা তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবারই জুটতো না।

৫-৬ বছর অন্যের বাড়িতে কাজ শেষে ফেরি করে বাদাম, বড়ই আচার ও ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। এ পেশায় জীবন চলে ১০-১২ বছর। জীবনের ঘানিটানা মোসলেম উদ্দিন নতুন জীবন শুরু করেন লেবু চাষ দিয়ে। চাষি মোসলেম উদ্দিন প্রায় ৫ বছর ধরে লেবু চাষ করে ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছেন।

তিনি টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলার গজারিয়া উত্তরপাড়া এলাকায় জমি লিজ নিয়ে সাড়ে ৬ একর জমিতে লেবুর চাষ করছেন। তিনি প্রতিবছর ১৪-১৫ লাখ টাকা আয় করছেন শুধু লেবু বিক্রি করেই। এছাড়াও তিনি সিডলেস জাতীয় গুটি কলম লেবুর চারা বিক্রি করে বছরে ৫-৬ লাখ টাকা আয় করছেন।

মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষিত-অশিক্ষিত বলে কথা নয়। বেকার ঘরে বসে না থেকে ফল-ফুল ও সবজির বাগান করে বিপুল পরিমাণ আয় করা যায়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। এ মাটিতে যেকোন ধরনের ফসলাদি ফলানো সম্ভব, কিন্তু এতে থাকতে হবে কঠোর প্রচেষ্টা। যেকোন বয়সের নারী-পুরুষও এগিয়ে আসতে পারেন এ পেশায়।’

লেবুর পর মাল্টা চাষেও নীরব বিপ্লব ঘটেছে তরুণ উদ্যোক্তা মোসলেমের। মোসলেম উদ্দিন সাড়ে ৪ একর জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে বিদেশি ফল মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গত দেড় বছর আগে লিজ নেয়া সাড়ে ৪ একর জমিতে মাল্টা গাছ লাগান। এক বছরের মধ্যেই গাছে ফুল ও ফল দেখা যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফায়জুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘মোসলেম উদ্দিন একজন মডেল চাষি। লেবু চাষ করে সে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মাল্টা চাষেও তার সফলতা দেখা যাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম বছর প্রতি গাছ থেকে ১০০-২০০টি, দ্বিতীয় বছর ২৫০-৩০০ ও তৃতীয় বছর থেকে ৩৫০-৪০০টি ফল সংগ্রহ করা যাবে। কৃষকরা এ ফল চাষে আগ্রহী হবেন বলে আশা করছি। এসব চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করব।’

সাধারণত মে থেকে জুন মাস মাল্টা গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে সারা বছর রোপণ করা যায়।

মোসলেম উদ্দিনের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছোট মেয়ে নদী ক্লাস টু-তে পড়ছে। মেয়ের নামেই বাগানের নাম ‘নদী লেমন গার্ডেন’। সব মিলিয়ে বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সুখেই আছি।