বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক স্বীকৃতি পেলেও একই সময়ে সুখী দেশের তালিকায় পাঁচ ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। কারণ হিসেবে মানুষের চাহিদা বাড়ায় আয়-ব্যয়ে সামঞ্জস্য না থাকাকে দায়ী করছেন গবেষকরা। ন্যায়বিচারের অভাব, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত না হওয়া এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাকেও দুষছেন অনেকে।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থানার মোহাম্মদ আলী। জীবিকার তাগিদে এক যুগ ধরে ঢাকায় রিকসা চালান তিনি। পুরো সংসারের ভার তার ওপর। সময়ের ব্যবধানে অনেক কিছু পাল্টে গেলেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগেনি তার জীবনে। একই অবস্থা তেজগাঁওয়ে ফুটপাতে থাকা সুরভী বেগমের। এ এলাকাতেই তার বসবাস প্রায় ৪৫ বছর। এতো দিনেও কারো কাছ থেকে পাননি আর্থিক সহায়তা। সমাজের আর ক’জন মানুষের মতো তারও ছিল একটু ভালো থাকার স্বপ্ন। সুখের নানা রং অনেকের মাঝে দেখলেও রাঙিয়ে তুলতে পারেননি নিজেকে।
সমাজের বিত্তবানরা চাকচিক্যময় জীবন-যাপন করলেও দরিদ্ররা যা আয় করে তা দিয়ে দৈনন্দিন জীবন নির্বাহ করতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে পুষ্টিকর খাবার, বাসস্থান, চিকিৎসা ব্যয় মেটানো তো প্রশ্নই আসেনা। অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে না আনলে.হতাশা আরো বাড়বে বলে মনে করেন গবেষকরা। গবেষক নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘অতি ধনী যারা তারা এমন এমন বিষয় উপভোগ করছে, সেটা জেনে সাধারণের সুখের পরিমাণ কমছে। তারা হতাশায় ভুগছে।’
এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বের ১৫৬টি দেশের ওপর জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সমাধান সূচক-এর প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালের বিশ্ব সুখী দেশের তালিকায় ১১০ থেকে ১১৫ তম অবস্থানে নেমে গেছে বাংলাদেশ। কারণ হিসেবে দেশে বিচারহীনতা ও দুর্নীতি বেড়ে যাওয়া এবং চাহিদা বাড়ার বিপরীতে প্রাপ্তিতে ঘাটতি থাকায় সুখের সূচকগুলো নিম্নমুখী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব বলেন, ‘একটার পর একটা খুন হচ্ছে। দিনে দুপুরে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ধর্ষণের তো বিচার হচ্ছেই না। যে কোন একটা ঘটনা ঘটছে আমরা চিৎকার করছি মাঠে নামছি। সেই সঙ্গে আরেকটা ঘটনা ঘটছে ওই ঘটনাটা ভুলে যাচ্ছি।’ গবেষক নাজনীন আহমেদ বলেন, ধনী গরীবের আয় বৈষম্য কমছে কিনা কিংবা মানব উন্নয়ন হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে।
বছরের পর বছর শত কষ্ট নিয়ে ফুটপাতে বসবাস করলেও ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি এই সব মানুষের। যেখানে সুখের পরশ পাওয়া অনেকটাই সোনার হরিণের মত। বিশ্লেষকরা বলছেন মানসিক সুখ স্থায়ী করতে প্রয়োজন আর্থিক সচ্ছলতা। এইজন্যে ধনী দরিদ্রের মাঝে বৈষম্য যেমন কমিয়ে আনতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে মৌলিক অধিকার। অন্যথায় সুখী সমৃদ্ধ দেশে পৌঁছানো এবং উন্নয়নশীল দেশের মাপকাঠি ধরে রাখা কষ্টসাধ্য হবে বাংলাদেশের জন্যে।