ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টবের বাগানে টুনটুনির বাসা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বৃষ্টির সকাল। পাকা দালানবাড়ির গাড়ি বারান্দার টবে লাগানো আমের চারাটি অল্প হাওয়ায় দুলছে। সঙ্গে দুলছে ওই গাছের তিনটি পাতা সুতারমতো সরু লতা দিয়ে সেলাই করে বানানো টুনটুনির বাসা। বাসাটি এমন নিপুণভাবে বানানো যে বাতাসে ভেসে আসা বৃষ্টির ছাট বাসার ভেতরে পৌঁছে না। সেখানে দোল খাচ্ছে টুনটুনির তিনটি সদ্যফোটা ছানা।

রূপকথায় টুনটুনি পাখির মজার কাহিনির মেলে। তার কারণে রাজার সাত রানির নাক কাটা গিয়েছিল। এমনকি পড়শি বিড়ালের হাত থেকে নিজের ছানাদের বাঁচাতে যে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল পাখিটি, তা কমবেশি সবার জানা। এসব গল্পই পাওয়া যাবে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর টুনটুনির গল্পের বইতে। বাংলার নানা লোকছড়াতেও এসেছে এই চঞ্চল পাখির নাম।

সেই টুনটুনিই পরিবারসমেত হাজির ইট–পাথরে ঠাসবুনটের এই নগরে। সবুজের স্নিগ্ধতা ফিকে হয়ে আসা ধূসর শহরে সে বাসা বেঁধেছে এক চিলতে টবের সবুজে। মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার যে বহুতল ভবনের গ্যারেজে টুনটুনির বাসা, সেই গ্যারেজে প্রতি বিকেলে খেলতে নামে ভবনের ছোট বাসিন্দারা। মাঠহীন-সবুজহীন নগরে ওই শিশুদের কাছে টুনটুনির আগমন পরম বিস্ময় নিয়ে।

‘শোভালয়’ নামের ওই বাড়িতে ঢোকার মুখে দুই পাশে সুগন্ধি জুঁইয়ের ঝাড়। ডান হাতের কোনায় একটা কৃত্রিম ঝরনা। সুপরিসর গ্যারেজের এক পাশে আলগা মাটিতে সারিবদ্ধভাবে লাগানো ছোট ঝাউগাছ, ক্রিসমাস ট্রি। টবে কয়েক প্রজাতির ফুল, পাতাবাহার আর ওই একটি আমের চারা। বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক নয়ন ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁদের ছাদের বাগানে আরও অনেক প্রজাতির ফুল-ফলের গাছ রয়েছে। চৌবাচ্চায় ফোটানো হয়েছে বিলের লাল শাপলা। বাগানে আম, জাম, জামরুলসহ বেশ কয়েক প্রজাতির ফলের গাছ থাকায় এই বাড়িতে পাখির আনাগোনা বেশি। কয়েক দিন আগেই ছাদে বটের বনসাইয়ে এক জোড়া বুলবুলি ডিম ফুটিয়ে ছানা নিয়ে উড়ে গেছে।

পাখিবিশারদ শরিফ খান বলেন, টুনটুনির ইংরেজি নাম কমন টেইলর বার্ড। এটি বাংলাদেশের আবাসিক পাখি। শহর-বন্দর-গ্রাম সবখানেই দেখা যায়। আম, ডুমুর, বেগুনের মতো গাছে দুই–তিনটি পাতা সেলাই করে বাসা তৈরি করে নিপুণভাবে। তাই এটি ‘দরজি পাখি’ নামেও পরিচিত। একসঙ্গে দুই থেকে চারটি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১০ থেকে ১৩ দিনের মধ্যে। বাচ্চা ১০ দিনের মধ্যেই উড়তে পারে। মূল খাবার ছোট ছোট পোকামাকড়।

শিল্পী কবীর সুমন পাড়ার পার্কের অবস্থা বর্ণনায় গানে বলেছিলেন, ‘এদিকে–ওদিকে দেখি, কিছু গাছ আছে বাকি/ এই আকালেও আনাগোনা করে নাছোড়বান্দা পাখি।’ নগরের ন্যাড়া পার্কগুলোতে ইদানীং গাছের দেখা পাওয়াটাও বিরল হয়ে উঠছে। তাই বুঝি ‘নাছোড়বান্দা’ পাখিগুলো এখন আশ্রয় খুঁজছে বাড়ির টবের গাছগাছালিতে।

মামুনুর রশীদ, ঢাকা

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

টবের বাগানে টুনটুনির বাসা

আপডেট টাইম : ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মে ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বৃষ্টির সকাল। পাকা দালানবাড়ির গাড়ি বারান্দার টবে লাগানো আমের চারাটি অল্প হাওয়ায় দুলছে। সঙ্গে দুলছে ওই গাছের তিনটি পাতা সুতারমতো সরু লতা দিয়ে সেলাই করে বানানো টুনটুনির বাসা। বাসাটি এমন নিপুণভাবে বানানো যে বাতাসে ভেসে আসা বৃষ্টির ছাট বাসার ভেতরে পৌঁছে না। সেখানে দোল খাচ্ছে টুনটুনির তিনটি সদ্যফোটা ছানা।

রূপকথায় টুনটুনি পাখির মজার কাহিনির মেলে। তার কারণে রাজার সাত রানির নাক কাটা গিয়েছিল। এমনকি পড়শি বিড়ালের হাত থেকে নিজের ছানাদের বাঁচাতে যে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল পাখিটি, তা কমবেশি সবার জানা। এসব গল্পই পাওয়া যাবে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর টুনটুনির গল্পের বইতে। বাংলার নানা লোকছড়াতেও এসেছে এই চঞ্চল পাখির নাম।

সেই টুনটুনিই পরিবারসমেত হাজির ইট–পাথরে ঠাসবুনটের এই নগরে। সবুজের স্নিগ্ধতা ফিকে হয়ে আসা ধূসর শহরে সে বাসা বেঁধেছে এক চিলতে টবের সবুজে। মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার যে বহুতল ভবনের গ্যারেজে টুনটুনির বাসা, সেই গ্যারেজে প্রতি বিকেলে খেলতে নামে ভবনের ছোট বাসিন্দারা। মাঠহীন-সবুজহীন নগরে ওই শিশুদের কাছে টুনটুনির আগমন পরম বিস্ময় নিয়ে।

‘শোভালয়’ নামের ওই বাড়িতে ঢোকার মুখে দুই পাশে সুগন্ধি জুঁইয়ের ঝাড়। ডান হাতের কোনায় একটা কৃত্রিম ঝরনা। সুপরিসর গ্যারেজের এক পাশে আলগা মাটিতে সারিবদ্ধভাবে লাগানো ছোট ঝাউগাছ, ক্রিসমাস ট্রি। টবে কয়েক প্রজাতির ফুল, পাতাবাহার আর ওই একটি আমের চারা। বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক নয়ন ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁদের ছাদের বাগানে আরও অনেক প্রজাতির ফুল-ফলের গাছ রয়েছে। চৌবাচ্চায় ফোটানো হয়েছে বিলের লাল শাপলা। বাগানে আম, জাম, জামরুলসহ বেশ কয়েক প্রজাতির ফলের গাছ থাকায় এই বাড়িতে পাখির আনাগোনা বেশি। কয়েক দিন আগেই ছাদে বটের বনসাইয়ে এক জোড়া বুলবুলি ডিম ফুটিয়ে ছানা নিয়ে উড়ে গেছে।

পাখিবিশারদ শরিফ খান বলেন, টুনটুনির ইংরেজি নাম কমন টেইলর বার্ড। এটি বাংলাদেশের আবাসিক পাখি। শহর-বন্দর-গ্রাম সবখানেই দেখা যায়। আম, ডুমুর, বেগুনের মতো গাছে দুই–তিনটি পাতা সেলাই করে বাসা তৈরি করে নিপুণভাবে। তাই এটি ‘দরজি পাখি’ নামেও পরিচিত। একসঙ্গে দুই থেকে চারটি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১০ থেকে ১৩ দিনের মধ্যে। বাচ্চা ১০ দিনের মধ্যেই উড়তে পারে। মূল খাবার ছোট ছোট পোকামাকড়।

শিল্পী কবীর সুমন পাড়ার পার্কের অবস্থা বর্ণনায় গানে বলেছিলেন, ‘এদিকে–ওদিকে দেখি, কিছু গাছ আছে বাকি/ এই আকালেও আনাগোনা করে নাছোড়বান্দা পাখি।’ নগরের ন্যাড়া পার্কগুলোতে ইদানীং গাছের দেখা পাওয়াটাও বিরল হয়ে উঠছে। তাই বুঝি ‘নাছোড়বান্দা’ পাখিগুলো এখন আশ্রয় খুঁজছে বাড়ির টবের গাছগাছালিতে।

মামুনুর রশীদ, ঢাকা