বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দিগন্তজোড়া সৌন্দর্যে ভরপুর এই পৃথিবীতে ভ্রমণের অনেক জায়গা রয়েছে। এখানে যেমন আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা আরামদায়ক স্থান, তেমনি আছে দুর্গম, রোমাঞ্চকর, ভয়ানক সৌন্দর্যে ভরপুর জায়গা। পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল, সবচেয়ে উষ্ণ এবং সবচেয়ে শুষ্ক রোমাঞ্চকর ভ্রমণের স্থান নিয়ে এ প্রতিবেদন।
সবচেয়ে খাড়া ঢাল: কানাডায় অবস্থিত থর পর্বত ৫,৪৯৫ ফুট উঁচু এবং এটি পৃথিবীর সবচেয়ে খাড়া ঢালবিশিষ্ট পর্বত। এটি কানাডার জনপ্রিয় সামিট, যা বিশুদ্ধ গ্রানাইটে তৈরি। থর পর্বতে ৪,১০১ ফুট উলম্ব গিরিখাত রয়েছে যা গড়ে ১০৫ ডিগ্রি কোণে অবস্থিত। যদিও এটি অনেক দুর্গম এবং প্রত্যন্ত এলাকায়, তারপরও এটি পর্বতারোহীদের জন্য খুবই পছন্দের একটি স্থান। পর্বতারোহী বাদে সাধারণ পর্যটকদের জন্য রয়েছে সুদৃশ্য ক্যাম্প এবং ভ্রমণের সুন্দর স্থান।
পৃথিবীর শীতলতম বসতি : রাশিয়ার একটি ছোট্ট শহর ওইমিয়াকন পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম বসতিপূর্ণ স্থান। ১৯২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী এখানকার নিবন্ধিত তাপমাত্রা -৯৬.১৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। শহরটির বর্তমান জনসংখ্যা মাত্র ৫০০ জন। শীতকালে শহরটির গড় তাপমাত্রা থাকে -৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট, যা খুব মারাত্মক। শহরটি বছরজুড়ে বরফে জমে থাকে এবং শহরটিতে মাত্র একটি হোটেল রয়েছে।
পৃথিবীর শুষ্কতম স্থান : আপনি যদি চিলির আতাকামা মরুভূমিতে বেড়াতে যেতে চান তাহলে যথেষ্ট পরিমাণ সুরক্ষা; বিশেষ করে সানস্ক্রিন, পানি, খাবার ইত্যাদি নিয়ে বের হতে হবে। নাসা এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফির গবেষণা অনুযায়ী আতাকামা মরুভূমির ভূতল মঙ্গল গ্রহের ভূতলের মতো, যা সবসময় উত্তপ্ত থাকে। ১৯০৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ১৯১৮ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আতাকামা মরুভূমিতে এক ফোঁটা বৃষ্টিপাত হয়নি, যা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ বৃষ্টিহীন সময় বলে উল্লেখ করা হয়। এটি মোটামুটি জনবিরল এলাকা। তবে আতাকামা মরুভূমিতে বেশ কয়েকটি হোটেল আছে যা পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে সংরক্ষিত।
মহাকাশের সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থান: অধিকাংশ মানুষের পক্ষে মহাকাশ ভ্রমণ সম্ভব নয়। তবে এক্ষেত্রে দুইটি উপায় আছে- প্রথমটি হলো আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে গিয়ে ভিডিওচিত্রে মহাকাশ দেখা আর দ্বিতীয়টি হল ইকুয়েডরের চিম্বোরাজো পর্বত ভ্রমণ। চিম্বোরাজো পর্বতে একটি নিষ্ক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে যা ৫৫০ খ্রিস্টাব্দে শেষবারের মতো অগ্নুৎপাত ঘটিয়েছিল। চিম্বোরাজো পর্বতের উচ্চতা প্রায় ২০,০০০ ফুট। যেখানে এভারেস্টের উচ্চতা ২৯,০০০ ফুট। পৃথিবীতে চিম্বোরাজো পর্বতের অবস্থান এমন একটি জায়গায় যা পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী জায়গা। তাই এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়ালে মহাকাশের কাছে পৌঁছানো যায় এবং পায়ে হেঁটে মহাকাশের সবচেয়ে কাছে যাওয়ার মতো পৃথিবীর এটাই একমাত্র জায়গা। চিম্বোরাজো পর্বতের চূড়া পুরোটা বরফের আস্তরণে ঢাকা কিন্তু পর্বতটিতে ওঠার জন্য বেশ কিছু রাস্তা রয়েছে।
পৃথিবীর উষ্ণতম স্থান : ইরানের লুট মরুভূমিতে তাপমাত্রা ১৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যায় যা হিট স্ট্রোক হওয়ার অন্যতম কারণ। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, ‘লুট’ শব্দের ইরানী অর্থ হচ্ছে ‘ভাজা গম’ যার পেছনের গল্পটি হলো, মরুভূমিতে কিছু গম ফেলে রাখলে তা আগুনের ফুলকিতে পরিণত হয়। এখানে সেসব পর্যটকেরা বেড়াতে আসেন যারা অত্যধিক তাপমাত্রা এবং চরম শুষ্কতাকে টেক্কা দিয়ে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন।
পৃথিবীর বিচ্ছিন্নতম স্থান : যুক্তরাজ্যের সমুদ্রসীমার মধ্যে অবস্থিত ট্রিস্টান ডা কুনহা পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্নতম স্থান। এটি যুক্তরাজ্যের তুলনায় আফ্রিকা থেকে কাছে এবং আফ্রিকা থেকে দ্বীপটির দূরত্ব ১,৭৫০ মাইল। ১৫০৬ সালে পর্তুগীজ নাবিক ট্রিস্টাও ডা কুনহা দ্বীপটি আবিষ্কার করেন। দ্বীপটির জনসংখ্যা মোটামুটি ৩০০ এবং এখানে কোনো বিমানবন্দর নেই। একমাত্র সমুদ্রপথেই এখানে পৌঁছানো যায়।
পৃথিবীর শীতলতম মহাদেশ : অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ। এটি সবচেয়ে শীতল এবং সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে পরিচিত। যারা এখানে আসেন, তাদের অনেক কষ্ট করে প্রথমে আকাশপথ এবং পরে দুর্গম বরফ পাড়ি দিয়ে আসতে হয়। এখানে অপূর্ব প্রাকৃতিক বরফের দৃশ্য থাকলেও ঝুঁকির শেষ নেই।
পৃথিবীর আর্দ্রতম স্থান : ভারতের মাওসিনরামে বছরে গড়ে ৪৬৭ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়। ১৯৮৫ সালে এখানে ১,০০০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয় যা গিনেজ বুকে জায়গা করে নেয় এবং তারপর থেকে মাওসিনরাম পৃথিবীর আর্দ্রতম স্থান হিসেবে খ্যাত। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়া এবং প্রচুর মৌসুমী বায়ুর প্রভাব থাকায় মাওসিনরাম বসবাসের জন্য সুবিধার নয় বরং ভ্রমণের জন্য অসাধারণ স্থান।
পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত : ভেনেজুয়েলার এঞ্জেল জলপ্রপাত বিচ্ছিন্ন এক অরণ্যের মধ্যে অবস্থিত এবং সহজে এখানে পৌঁছানো অসম্ভব। তবুও এটি ভেনেজুয়েলার সেরা ভ্রমণের স্থানগুলোর মধ্যে সর্বসেরা।
পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম সমুদ্র : ১৯৯৫ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার গান্সবাইতে খাঁচায় বন্দি থেকে গ্রেট হোয়াইট হাঙ্গরের সঙ্গে সমুদ্রে পাড়ি জমানো চরম চিত্তাকর্ষক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার গান্সবাইতে এই প্রজাতির হাঙ্গরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং জনপ্রিয় এই মরণখেলা দেখার একমাত্র জায়গা হচ্ছে গান্সবাই। তাছাড়া গান্সবাইয়ের পার্লই সমুদ্র সৈকতে তিমি দেখা আরেক জনপ্রিয় ব্যাপার।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট