ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুদর্শন চুনিমুখি মৌটুসি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আকাশ প্রদীপ নিবুনিবু করছে। প্রাণীকুল যে যার ডেরায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দিন-রাতের সন্ধিক্ষণে আকাশ কেঁপে উঠল হঠাৎ করে। নিশ্চয়ই দূরে কোথাও বজ্রপাত হয়েছে। খানিকটা ভড়কে গিয়েছি। কালবৈশাখীর তাণ্ডব শুরু হয়ে যাবে একটু বাদেই। যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদে ফেরা চাই। কিন্তু সেটি আর হয়ে উঠেনি, তার আগেই ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।

উপায়ান্তর না দেখে নিজ গাঁয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছি। আমার সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে ‘চুনিমুখি মৌটুসি’ও। জানালার কার্নিশে বসেছে পাখিটা। কাঁপছে থরথর করে। হাত বাড়িয়ে পাখিটাকে ধরলাম। উড়তে পারছে না বেচারি। ডানায় সুতা জাতীয় তন্তু পেঁচানো। ধীরে ধীরে প্যাঁচ খুলে দিতেই পাখিটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।

প্রিয় পাঠক, এরা অতি পরিচিত পাখি। দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। দেখা মেলে গাঁওগেরামের ঝোপ-জঙ্গলে। ঝোপের ভেতর থেকে উচ্চস্বরে ‘সুইটি-টি-চি-চিউ..টিউসি-টিটসুইটি-সুইটি..সুইটি-টি-চি-চিউ..’ সুরে শিস দেয়। বেশ মধুর সুর। এরা অত্যন্ত ফূর্তিবাজ পাখি। দিনের বেশিরভাগ সময় গাছের শাখা-প্রশাখায় নেচে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পর্যন্ত। এতদাঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা এরা। বিশ্বে প্রজাতির সংখ্যা স্থিতিশীল। তাই আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

পাখির বাংলা নাম: ‘চুনিমুখি মৌটুসি’, ইংরেজি নাম: ‘রুবি চিকড সানবার্ড’ (Ruby-cheeked Sunbird), বৈজ্ঞানিক নাম: Anthreptes singalensis।

প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১১-১২ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির মাথার তালু, ঘাড়, পিঠ, কোমর ও লেজের উপরিভাগ ধাতব সবুজ। ডানা ও লেজ কালচে। গাল টকটকে লাল, সূর্যালোকে বেগুনি বিচ্ছুরণ বের হয়। গলা ও বুক লালচে-কমলা। পেট উজ্জ্বল হলুদ। অপরদিকে স্ত্রী পাখির পিঠের বর্ণ নিষ্প্রভ জলপাই সবুজ। গলা ও বুক লালচে-কমলা। গালে লাল রঙের উপস্থিতি নেই, নেই পেটের হলুদ বর্ণও। উভয়েরই ঠোঁট কালচে, খাটো ও সোজা। পা সবুজ-ধূসর।

প্রধান খাবার: ফুলের মধু ও ছোট পোকামাকড়।

প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। ভূমি থেকে ২ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে অথবা লতা আচ্ছাদিত গাছের ডালে থলে আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২টি। ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

সুদর্শন চুনিমুখি মৌটুসি

আপডেট টাইম : ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ জুলাই ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আকাশ প্রদীপ নিবুনিবু করছে। প্রাণীকুল যে যার ডেরায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দিন-রাতের সন্ধিক্ষণে আকাশ কেঁপে উঠল হঠাৎ করে। নিশ্চয়ই দূরে কোথাও বজ্রপাত হয়েছে। খানিকটা ভড়কে গিয়েছি। কালবৈশাখীর তাণ্ডব শুরু হয়ে যাবে একটু বাদেই। যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদে ফেরা চাই। কিন্তু সেটি আর হয়ে উঠেনি, তার আগেই ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।

উপায়ান্তর না দেখে নিজ গাঁয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছি। আমার সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে ‘চুনিমুখি মৌটুসি’ও। জানালার কার্নিশে বসেছে পাখিটা। কাঁপছে থরথর করে। হাত বাড়িয়ে পাখিটাকে ধরলাম। উড়তে পারছে না বেচারি। ডানায় সুতা জাতীয় তন্তু পেঁচানো। ধীরে ধীরে প্যাঁচ খুলে দিতেই পাখিটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।

প্রিয় পাঠক, এরা অতি পরিচিত পাখি। দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। দেখা মেলে গাঁওগেরামের ঝোপ-জঙ্গলে। ঝোপের ভেতর থেকে উচ্চস্বরে ‘সুইটি-টি-চি-চিউ..টিউসি-টিটসুইটি-সুইটি..সুইটি-টি-চি-চিউ..’ সুরে শিস দেয়। বেশ মধুর সুর। এরা অত্যন্ত ফূর্তিবাজ পাখি। দিনের বেশিরভাগ সময় গাছের শাখা-প্রশাখায় নেচে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পর্যন্ত। এতদাঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা এরা। বিশ্বে প্রজাতির সংখ্যা স্থিতিশীল। তাই আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

পাখির বাংলা নাম: ‘চুনিমুখি মৌটুসি’, ইংরেজি নাম: ‘রুবি চিকড সানবার্ড’ (Ruby-cheeked Sunbird), বৈজ্ঞানিক নাম: Anthreptes singalensis।

প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১১-১২ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির মাথার তালু, ঘাড়, পিঠ, কোমর ও লেজের উপরিভাগ ধাতব সবুজ। ডানা ও লেজ কালচে। গাল টকটকে লাল, সূর্যালোকে বেগুনি বিচ্ছুরণ বের হয়। গলা ও বুক লালচে-কমলা। পেট উজ্জ্বল হলুদ। অপরদিকে স্ত্রী পাখির পিঠের বর্ণ নিষ্প্রভ জলপাই সবুজ। গলা ও বুক লালচে-কমলা। গালে লাল রঙের উপস্থিতি নেই, নেই পেটের হলুদ বর্ণও। উভয়েরই ঠোঁট কালচে, খাটো ও সোজা। পা সবুজ-ধূসর।

প্রধান খাবার: ফুলের মধু ও ছোট পোকামাকড়।

প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। ভূমি থেকে ২ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে অথবা লতা আচ্ছাদিত গাছের ডালে থলে আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২টি। ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।