বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, তিন পার্বত্য জেলার উপজাতীয় জনগোষ্ঠী ও বৃহত্তর চট্টগ্রামে বাঁশ কোড়ল এখন সুস্বাদুু সবজি। তিন পার্বত্য জেলার এমন কোনো বাজার নেই, যেখানে বাঁশ কোড়ল বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে অবাধে বাঁশ কোড়ল বিক্রির ফলে প্রতি বছর এই মৌসুমে তিন পার্বত্য জেলায় কয়েক কোটি বাঁশের চারা ধ্বংস হচ্ছে। তথ্যমতে, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর-এ তিন মাস বাঁশের বংশ বৃদ্ধির মৌসুম। এই মৌসুমে এক একটি বাঁশ গুচ্ছে ১০ থেকে ৮০টি বাঁশ গাছ একত্রে দেখা যায়। এসব গুচ্ছকে বাঁশঝাড় বলা হয়।
বাঁশ দেশের মূল্যবান বনজ সম্পদ। ঘর-বাড়ি নির্মাণ ও কাগজ উৎপাদন থেকে শুরু করে আমাদের কুটির শিল্পের বিবিধ উপকরণে বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম। বিল্ডিং, পুল ও ব্রিজ তৈরির ক্ষেত্রেও বাঁশের ব্যবহার বাধ্যতামূলক। ঘর-বাড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ এ বাঁশকে গরিবের গজারি বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। কিন্তু বাঁশ আজ ক্রমে নিঃশেষ হতে চলেছে। নির্মূল হয়ে যাচ্ছে বাঁশের বাগান। ফলে বাঁশের মূল্যও বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে।
খাদ্য তালিকায় বাঁশ কোড়ল যোগ হওয়ায় ক্রমেই এর চাহিদা বাড়ছে। একশ্রেণীর উপজাতি ও বাঙালি বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ ও বিক্রি করাকে তাদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এভাবে বাঁশের চারা ধ্বংসের কারণে প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও বাঁশের ওপর নির্ভরশীল শিল্পগুলো হারাচ্ছে কাঁচামাল।
জানা যায়, তিন পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে কয়েক প্রজাতির মূল্যবান বাঁশ জন্মে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মুলি, দুলু, মিটিঙ্গা, কালী ও ছোটিয়া। এই বাঁশকে কেন্দ্র করে চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী পেপার মিল স্থাপিত হয়। বাঁশ উৎপাদন কম হওয়া ও বাঁশ কোড়ল বিক্রি রোধ করা না গেলে কাঁচামাল সংকটে পড়তে পারে কেপিএমসহ বাঁশের ওপর নির্ভরশীল সব ধরনের শিল্প। তাছাড়া বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাগজের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু চাহিদানুযায়ী কাগজ তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে ধস নেমে আসছে।
এছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ দেশের সমতল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করা হয়, যা থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জনসহ এ কাজে অনেক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন বাঁশের অভাব তীব্র আকার ধারণ করছে। বাঁশের ঠিকমতো পরিচর্যা করলে বছরে ৩০/৪০টি বাঁশের চারা (কোড়ল) বের হতে পারে। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে একটি বাঁশের গোড়ায় ৩/৪টি চারা বের হয়। বর্তমানে যে হারে বাঁশের চাহিদা বাড়ছে, সে হারে বাঁশের উৎপাদন বাড়ছে না।
পাহাড়ি লোকজন আয়ের উৎস হিসেবে কোড়ল বাঁশে পরিণত হওয়ার আগেই সংগ্রহ করে হাটবাজারে অবাধে বিক্রি করছে। প্রতি কেজি বাঁশ কোড়ল বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকায়। এ কারণে প্রতি বছর কোটি কোটি বাঁশ অঙ্কুরেই ঝরে পড়ছে। এভাবে বাঁশ কোড়ল নিধন অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সারাদেশ থেকে বাঁশ সম্পদ একেবারেই হারিয়ে যাবে বলে ধারণা করছে সচেতন মহল।