ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদের ছুটিতে তিনাপ সাইতার, বান্দরবান

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এবার ঈদে নিশ্চই ঘুরতে যাবেন? এবার ছুটিতে যেতে পারেন তিনাপ সাইতার। আমি ঘুরে আসলাম বান্দরবানের তিনাপ সাইতার থেকে। অদ্ভুত সুন্দর জায়গা। আমরা গিয়েছিলাম আত্তাপাড়া রুট দিয়ে। বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়ীতে রুমা বাজার। রুমাবাজার আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে চাঁদের গাড়ীতে করে বেথেলপাড়া-মংপ্রুপাড়া হয়ে আত্তাপাড়া।

রুমা বাজার থেকে আত্তাপাড়া যাওয়ার রাস্তাটুকু এক কথায় ভয়ংকর সুন্দর। এই রাস্তা দিয়ে নিজে না গেলে বোঝা যাবে না কতটা বিপদজনক রাস্তা। কিন্তু যাওয়ার সময় পাহাড়ে মেঘের আলো-আঁধারের খেলা দেখলে এক নিমিষেই ভয় উড়ে যাবে। আমরা আত্তাপাড়া গিয়ে উঠলাম জনসন দার বাড়িতে। জনসার দার বাড়িটা অদ্ভুত সুন্দর। জনসন দার বাড়িতে নিয়মিত দলছুট মেঘেরা যাওয়া-আসা করে। এক কথায় রুপকথার গল্পে যে রকম সুন্দর বাড়ির বর্ননা থাকে সে রকম। ফ্রেশ হওয়ার সময় একটু অবাক হচ্ছিলাম। অনেক পানি দেয়ার পরও শরীর থেকে সাবানের ফ্যানা যাচ্ছিল না। পরে জানতে পারলাম পাহাড়ে যেহেতু জলের অনেক সমস্যা তাই পাহাড়ের লোকজন বৃষ্টির পানি ধরে রাখে। আর বৃষ্টির পানিতে সাবানের ফ্যানা যায় না।

তারপর ফ্রেশ হয়ে খেলাম পাহাড়ী আনারস। সেই আনারসের গন্ধ এখনো আমি আমার আসে পাশে অনুভব করি। রাতে আমাদের গাইড নিউটন দা আমাদের রান্না করে খাওয়ালো। তারপর সবাই মিলে জনসন দার রাজপ্রসাদে ঘুম।

পরের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাঁটা শুরু করলাম তিনাপ সাইতার এর দিকে। এইবার আমাদের গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য নতুন। খুব ভয়ে ছিলাম। কিন্তু কোনো রকম বড় বিপদ ছাড়াই ১.৩০ মিনিট হেঁটে তিনাপ সাইতার পৌঁছে গেলাম।

তিনাপ সাইতার প্রথম দেখে কিছু সময় হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম। অদ্ভুত তার রুপ। তিনাপ সাইতার ছেড়ে আসতে ইচ্ছা করছিল না। তারপরও আসতেই হবে। আবার ২ ঘণ্টা হেঁটে মুন্নামপাড়া আর্মি ক্যাম্পে ঠিক মতো পৌঁছেছি রিপোর্ট করে আত্তাপাড়া এসে দুপুরে খেয়ে চাঁদের গাড়ীতে রুমা বাজার চলে আসলাম। রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করে বান্দরবান শহর। তারপর রাতের গাড়ীতে ঢাকা।

প্রতিবার বান্দরবান থেকে ফেরার পর মনে হয় আর এত কষ্ট করতে পারব না আর বান্দরবান যাব না। কিন্তু আসার পর থেকেই আবার বান্দরবানকে মিস করা শুরু করি। আমার দেহ থাকে ঢাকা আর মন বান্দরবান। অদ্ভুত অজানা এক ভাললাগা বার বার চেনে হিঁচড়ে আমাকে বান্দরবান নিয়ে যায়।

যেভাবে যাবেন : ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল বা সায়েদাবাদ থেকে বান্দরবানে যাবার সরাসরি বাস আছে। বান্দরবান পৌঁছে বাসে করে বা চাদের গাড়ি রিজার্ভ করে রোয়াংছড়ি বা রুমা যেতে হবে। রোয়াংছড়ি থেকে ট্রেকিং করে পাইংক্ষং পাড়া, রনিন পাড়া আর দেবছড়া পাড়া হয়ে তিনাপ সাইতারে যেতে হবে। রুমা থেকে মুনন্যায়াম পাড়া পর্যন্ত চাদের গাড়িতে যেয়ে সেখান থেকে তিনাপ সাইতার পর্যন্ত ট্রেকিং করে যেতে হবে।

উল্লেখ্য, তিনাপ সাইতারে যেতে হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুমতি লাগে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ঈদের ছুটিতে তিনাপ সাইতার, বান্দরবান

আপডেট টাইম : ০২:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অগাস্ট ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এবার ঈদে নিশ্চই ঘুরতে যাবেন? এবার ছুটিতে যেতে পারেন তিনাপ সাইতার। আমি ঘুরে আসলাম বান্দরবানের তিনাপ সাইতার থেকে। অদ্ভুত সুন্দর জায়গা। আমরা গিয়েছিলাম আত্তাপাড়া রুট দিয়ে। বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়ীতে রুমা বাজার। রুমাবাজার আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে চাঁদের গাড়ীতে করে বেথেলপাড়া-মংপ্রুপাড়া হয়ে আত্তাপাড়া।

রুমা বাজার থেকে আত্তাপাড়া যাওয়ার রাস্তাটুকু এক কথায় ভয়ংকর সুন্দর। এই রাস্তা দিয়ে নিজে না গেলে বোঝা যাবে না কতটা বিপদজনক রাস্তা। কিন্তু যাওয়ার সময় পাহাড়ে মেঘের আলো-আঁধারের খেলা দেখলে এক নিমিষেই ভয় উড়ে যাবে। আমরা আত্তাপাড়া গিয়ে উঠলাম জনসন দার বাড়িতে। জনসার দার বাড়িটা অদ্ভুত সুন্দর। জনসন দার বাড়িতে নিয়মিত দলছুট মেঘেরা যাওয়া-আসা করে। এক কথায় রুপকথার গল্পে যে রকম সুন্দর বাড়ির বর্ননা থাকে সে রকম। ফ্রেশ হওয়ার সময় একটু অবাক হচ্ছিলাম। অনেক পানি দেয়ার পরও শরীর থেকে সাবানের ফ্যানা যাচ্ছিল না। পরে জানতে পারলাম পাহাড়ে যেহেতু জলের অনেক সমস্যা তাই পাহাড়ের লোকজন বৃষ্টির পানি ধরে রাখে। আর বৃষ্টির পানিতে সাবানের ফ্যানা যায় না।

তারপর ফ্রেশ হয়ে খেলাম পাহাড়ী আনারস। সেই আনারসের গন্ধ এখনো আমি আমার আসে পাশে অনুভব করি। রাতে আমাদের গাইড নিউটন দা আমাদের রান্না করে খাওয়ালো। তারপর সবাই মিলে জনসন দার রাজপ্রসাদে ঘুম।

পরের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাঁটা শুরু করলাম তিনাপ সাইতার এর দিকে। এইবার আমাদের গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য নতুন। খুব ভয়ে ছিলাম। কিন্তু কোনো রকম বড় বিপদ ছাড়াই ১.৩০ মিনিট হেঁটে তিনাপ সাইতার পৌঁছে গেলাম।

তিনাপ সাইতার প্রথম দেখে কিছু সময় হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম। অদ্ভুত তার রুপ। তিনাপ সাইতার ছেড়ে আসতে ইচ্ছা করছিল না। তারপরও আসতেই হবে। আবার ২ ঘণ্টা হেঁটে মুন্নামপাড়া আর্মি ক্যাম্পে ঠিক মতো পৌঁছেছি রিপোর্ট করে আত্তাপাড়া এসে দুপুরে খেয়ে চাঁদের গাড়ীতে রুমা বাজার চলে আসলাম। রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করে বান্দরবান শহর। তারপর রাতের গাড়ীতে ঢাকা।

প্রতিবার বান্দরবান থেকে ফেরার পর মনে হয় আর এত কষ্ট করতে পারব না আর বান্দরবান যাব না। কিন্তু আসার পর থেকেই আবার বান্দরবানকে মিস করা শুরু করি। আমার দেহ থাকে ঢাকা আর মন বান্দরবান। অদ্ভুত অজানা এক ভাললাগা বার বার চেনে হিঁচড়ে আমাকে বান্দরবান নিয়ে যায়।

যেভাবে যাবেন : ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল বা সায়েদাবাদ থেকে বান্দরবানে যাবার সরাসরি বাস আছে। বান্দরবান পৌঁছে বাসে করে বা চাদের গাড়ি রিজার্ভ করে রোয়াংছড়ি বা রুমা যেতে হবে। রোয়াংছড়ি থেকে ট্রেকিং করে পাইংক্ষং পাড়া, রনিন পাড়া আর দেবছড়া পাড়া হয়ে তিনাপ সাইতারে যেতে হবে। রুমা থেকে মুনন্যায়াম পাড়া পর্যন্ত চাদের গাড়িতে যেয়ে সেখান থেকে তিনাপ সাইতার পর্যন্ত ট্রেকিং করে যেতে হবে।

উল্লেখ্য, তিনাপ সাইতারে যেতে হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুমতি লাগে।