বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ শনিবার (১১ আগস্ট) দুপুর ১২টা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গী লাহেরী বাজারে হঠাৎ এক বিক্রেতা বলে উঠলেন পাখি নেবেন স্যার? একটা পাখির দাম মাত্র ৫০০ টাকা।
মনে প্রশ্ন উঠল ব্যাপারটা কী? একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখি অনেক বড় রকমের পাখির হাট। যেখানে বিক্রি হচ্ছে টিয়াসহ নানা প্রজাতির পাখি। হাতে ঝুলিয়ে সম্ভাব্য ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে বিক্রেতারা।
অথচ পাখি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে দেশে আইন থাকলেও ঠাকুরগাঁওয়ে তার কোনো প্রয়োগ নেই। এ কারণে এখানে অবাধে চলছে টিয়া, ঘুঘু, শালিক, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার ও বিক্রি।
২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক লাখ টাকা জরিমানা, এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড। একই অপরাধ পুনরায় করলে দুই লাখ টাকা জরিমানা, দুই বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব আইন মানছে না কেউ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক পাখি বিক্রি হয় এই হাটে। কিন্তু এ কাজে প্রশাসন থেকে কোনো বাধা আসছে না। সীমান্ত এলাকা থেকে ফাঁদ পেতে (জাল ও বিষটোপ দিয়ে) শিকার করা হচ্ছে এসব পাখি। আর বাজারে সেগুলোকে বিক্রি করছে শিকারিরা। শিকারিদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না পাখিগুলো। প্রশাসন এ কাজে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।
আশরাফুল নামে এক পাখি শিকারি বলেন, ‘এই হাটে পাখির প্রচুর ক্রেতা রয়েছে। পাখি বিক্রি করে যে আয় হয় তাই দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে।’
পাখি ধরা ও বিক্রি করা অন্যায়, তাহলে পাখি শিকার করছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আইন-কানুন জানি না। কারও কাছে শুনিনি।’
আশরাফুল এই হাটে প্রায় ৩০টার মতো টিয়া পাখি শিকার করে নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে অনেকগুলোই বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতিটার দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসলাম মোল্লা বলেন, ‘প্রকাশ্যে পাখি বিক্রি এবং সীমান্ত এলাকায় পাখি ধরার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। পাখি শিকার ও বিক্রি দণ্ডনীয় অপরাধ। দ্রুত এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, পাখি শিকার ও বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। দ্রুত পাখির হাট বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।